পশ্চিমবঙ্গে মাত্র তিন জন বিধায়কের দল। তার মহিলা সংগঠন! তার আবার বীরভূম জেলার সভানেত্রী পদ! তা নিয়েও এমন বিতর্ক, যে নালিশ চলে গেল দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) রামলালের কাছে! নালিশ করলেন বিজেপি-র মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। তার জেরে আবার দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কাছে ভর্ৎসনা শুনতে হল রূপাকেই।
কিছু দিন আগে জেলা বিজেপি-র আস্থাভাজন অনুরাধা ঘোষকে সরিয়ে নিজের পছন্দের স্বাগতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বীরভূমে মহিলা মোর্চার জেলা সভানেত্রী করেছিলেন রূপা। বিতর্কের জেরে রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু দলের কয়েক জন শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, অনুরাধাই সভানেত্রী থাকবেন। এর পরে অনুরাধার নেতৃত্বে মহিলা মোর্চার জেলা সম্মেলন হয়, ছিলেন রাজ্য বিজেপি-র নেতারাও। বিজেপি সূত্রের খবর, এতেই অপমানিত বোধ করে রূপা অমিত, রামলাল, রাজ্য বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও অরুণ জেটলির কাছে অভিযোগ জানান।
বিজেপি সূত্রের খবর, গত শুক্রবার কোর কমিটির বৈঠকে দিলীপবাবু বীরভূম-প্রসঙ্গ তুলে রূপাকে জানিয়ে দেন, দল করতে হলে দলীয় শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। রূপার নেতৃত্বে মহিলা মোর্চার প্রত্যাশিত
অগ্রগতি হয়নি বলেও অসন্তোষ প্রকাশ করেন দিলীপবাবু। রূপা নিজের কাজের ফিরিস্তি হিসাবে কিছু নথি পেশ করতে চাইলে দিলীপবাবু তাঁকে বলেন, দল কর্পোরেট অফিস নয়! এখানে কাগজ দেখিয়ে কাজ প্রমাণ করা যায় না। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে আমি বলেছি, কোনও বিষয়ে বিতর্ক থাকলে দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বসে মিটিয়ে নেবেন। এটা ছাড়া দল চালানো যায় না। প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মহিলা মোর্চার পর্যবেক্ষকও করে দেওয়া হয়েছে।’’ এ বিষয়ে রূপার প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন এবং মেসেজ করা হলেও তিনি অবশ্য সাড়া দেননি।
প্রসঙ্গত, রূপা সম্প্রতি মহিলা মোর্চার পরবর্তী সভানেত্রী হিসাবে পছন্দের নাম বন্ধ খামে তাঁর কাছে জমা দিতে বলেছেন। তিন সদস্য নাম জমাও দিয়েছেন। দলের একাংশের মতে, নেতৃত্বের সঙ্গে মতান্তরের জেরেই পদ থেকে সরার কথা ভাবছেন রূপা। তবে বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, রূপা যে পদ্ধতি নিচ্ছেন, সে ভাবে শাখা সংগঠনের সভানেত্রী ঠিক করা যায় না।
এর মধ্যেই সংগঠনকে চাঙ্গা করতে নিউ আলিপুরে শনি ও রবিবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে বিজেপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নভেম্বর-ডিসেম্বরে জেলায় জেলায় ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ আন্দোলন হবে। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল অনৈতিক ভাবে বিরোধীদের হাতে থাকা পুরসভা এবং পঞ্চায়েতগুলি ভাঙিয়ে নিচ্ছে। এর প্রতিবাদেই আমরা রাস্তায় নামব।’’ দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ পরামর্শ দিয়েছেন, গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব ভুলে দেশপ্রেমকে হাতিয়ার করে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।