মোদীকে ‘মন কি বাত’ শোনাতে যাচ্ছেন সহিদুল

পেশায় ট্যাক্সি চালক সহিদুল। ২০০৪ সালে ক্লাস এইটে পড়া বোন মারুফার মৃত্যু হয়েছিল প্রায় বিনা চিকিত্সায়। সহিদুলের বয়স তখন বছর তিরিশেক। তার পরই হাসপাতাল গড়ার জেদটা চেপে বসে। নমোর কণ্ঠে তাঁর এই লড়াইয়ের কাহিনি শুনেছেন দেশবাসী।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৮ ১৩:৩০
Share:

সহিদুল এ বার মন কি বাতে

সহিদুল লস্করের মনের ইচ্ছেটা একটু একটু করে যখন বাস্তবের চেহারা নিচ্ছে, তখনই প্রধানমন্ত্রীর ‘মন কি বাত’-এ উঠে এসেছিলতাঁর কথা। সেই কথাই বিপুল ভরসা জুগিয়েছে সহিদুলকে। এ বার তাই তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন। ইচ্ছেপূরণের জন্য সাহায্য চাইবেন খোদ নরেন্দ্র মোদীর কাছেই।

Advertisement

মাস দেড়েক আগে ‘মন কি বাত’-এ এই সহিদুলের কথাই শুনিয়েছিলেনমোদী। গোটা দেশ জানতে পেরেছিল পুঁড়ি গ্রামের কথা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের প্রান্তিক এক গ্রাম এই পুঁড়ি। গ্রাম থেকেসবচেয়ে কাছের বারুইপুর মহকুমা হাসপাতাল প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে। একশো গ্রামের ভরসা ওই একটিই হাসপাতাল।গুরুতর অসু্স্থ হলে বিপদের শেষ নেই। বেশ কিছু ক্ষেত্রে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই মৃত্যু হয়েছে রোগীর।

ঠিক যেমন ভাবে ২০০৪ সালে মারা গিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মারুফা লস্কর। প্রায় বিনা চিকিৎসায় তাঁর মৃত্যু হয়। বোনের ওই অকাল মৃত্যু মন থেকে মেনে নিতে পারেননি সহিদুল। তাঁর তখন বয়স বছর তিরিশ হবে। সেই সময় থেকেই হাসপাতাল তৈরির জেদটা চেপে বসে। মোদীর মনের কথায় দেশবাসী এ-ও শুনেছেন। কিন্তু, সহিদুল নিজে সে দিন ‘মন কি বাত’ শোনেননি। পরে অন্যদের মুখে শুনে ঠিক করেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিজের মনের কথাটা শোনাতে হবে। সহিদুলের কথায়, ‘‘খবরটা জানতে পেরেই এক জনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আশ্বাস মিলেছে, দেখা হবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। বড় আশায় আছি।’’

Advertisement

দেখুন ভিডিও:

ওই হাসপাতাল গড়তে লাগবে ১২ কোটি টাকা। সহিদুল নিজে ৩টি ট্যাক্সির মালিক ছিলেন একটা সময়ে। সেগুলো বিক্রি করেছেন। স্ত্রী শামিমা বিয়ের গয়না তুলে দিয়েছেন স্বামীর হাতে।তিলতিল করে টাকা জোগাড় করে পুঁড়ি গ্রামেইতিমধ্যেই প্রায় ২ বিঘা জমি কিনেছেন সহিদুল।

হাসপাতাল বানানোর লক্ষ্যে এখন একটি ট্যাক্সি ভাড়ায় নিয়ে নিজেই চালান।ট্যাক্সি চালাতে চালাতে যাত্রীদের কাছে হাসপাতাল তৈরির জন্য অনুদানের আবেদনও করেন মাঝে মাঝে। অনেকে অবাক হন।ট্যাক্সি চালিয়ে হাসপাতাল গড়বেন! সম্ভব? অনেকে অবিশ্বাসও করেছেন।কিন্তু, কেউ কেউ সাহায্যও করেন। বড় অল্পেতেই খুশি সহিদুল। একটি ইটের টাকা জোগাড় হলেই তিনি খুশি।বলছিলেন, ‘‘এ ভাবে আস্তে আস্তেই তো স্বপ্নপূরণ হয়।’’ নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন সহিদুল। তাঁর কথায়, ‘‘সাউথ সিটি থেকে এক দিন মায়ের সঙ্গে আমার ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন সৃষ্টি ঘোষ। আমার কাছে এই কাহিনি শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। এর কয়েক মাস পর বেঙ্গালুরুতে চাকরি পান সৃষ্টি। জানেন, প্রথম মাসের বেতনটা সৃষ্টি আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন।’’

আরও পড়ুন: বোনকে হারিয়ে তার নামেই হাসপাতাল তৈরি করছেন ট্যাক্সিচালক সহিদুল

স্বপ্নপূরণের কাজে সহিদুল পাশে পেয়েছেন অনেককেই। অনুদান এসেছে সিঙ্গাপুর থেকেও।ইতিমধ্যেই ওই জমিতে চারতলা হাসপাতালেরভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন হয়ে গিয়েছে। একটু একটু করে গড়ে উঠছে ‘মারুফা মেমোরিয়াল হাসপাতাল অ্যান্ড জেরিয়াট্রিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট’। চিকিৎসকেরাও এগিয়ে এসেছেন। চেন্নাই থেকে গ্রামীণ হাসপাতালে পরিষেবা দিতে রাজি হয়েছেন দুই বিশিষ্ট চিকিৎসক। সহিদুলের লক্ষ্য, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আউটডোর পরিষেবা চালু করা।

তাঁর হাসপাতালে বয়স্কদের জন্য বিশেষ পরিষেবার ব্যবস্থারাখতে চান সহিদুল। তিনি বলেন, ‘‘বয়স হয়ে গেলে বৃদ্ধ বাবা-মাকে অনেক ছেলেমেয়েই আজকাল আর দেখাশোনা করতে চান না। অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখানোর লোকও থাকে না। অনেকের সন্তান আবার বিদেশে থাকেন। আমি চাই ওঁদের বাড়িতেই চিকিৎসা হোক। কষ্ট করে হাসপাতালে আসতে হবে না। ডাক্তাররাই বাড়িতে যাবেন।’’

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কী বলবেন? সহিদুল বললেন, ‘‘আধুনিক যন্ত্রপাতি-সহ হাসপাতাল চালু করতে গেলে প্রায় ১২ কোটি টাকাখরচ হবে। এত টাকা জোগাড় করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। তাই আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সরকারি অনুদানের কথা বলব। খুব শিগগিরই তাঁর সঙ্গে দেখা হবে। আশা করি, তিনি আমার সমস্যার কথা শুনবেন। সরকারি অনুদানও মিলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন