Advertisement
০৩ মে ২০২৪

বোনকে হারিয়ে তার নামেই হাসপাতাল তৈরি করছেন ট্যাক্সিচালক সহিদুল

২০০৪ সালে অষ্টাদশী মারুফার হৃদ্‌যন্ত্রে জল জমেছিল। তার চিকিৎসা করাতে কলকাতার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত দৌড়োদৌড়ি করছিলেন সহিদুল। কিন্তু মারুফাকে কোথাও ভর্তি করাতে পারেননি।

সইদুল লস্কর।

সইদুল লস্কর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৪
Share: Save:

এক সময়ে তিনি যে চা বেচতেন, প্রধানমন্ত্রী হয়েও বারবার তা বলে থাকেন নরেন্দ্র মোদী। ট্যাক্সি চালাতে চালাতে সহিদুল লস্কর নিজের গ্রামে হাসপাতাল গড়ে তুলছেন শুনে সেই মোদী স্বাভাবিক কারণেই উচ্ছ্বসিত। রবিবার সকালে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে তাঁর মুখে সহিদুলের প্রশংসা শুনেছে সারা দেশ। শুনেছেন সহিদুলও। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভাল খবর।’’ তিনি চাইছেন, তাঁর প্রচেষ্টার পাশে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী।

বোন মারুফা খাতুনকে অকালে হারিয়েছেন সহিদুল। বোনের স্মৃতিতে তিনি হাসপাতাল গড়ে তুলছেন ৪০ কাঠা জমিতে। ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে সেই প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘সহিদুল কলকাতার কাছে পুঁড়ি গ্রামে একটি হাসপাতাল তৈরি করছেন। এটাই নতুন ভারতের শক্তি।’’

খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখে তাঁর প্রচেষ্টার কথা শুনে সহিদুলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভাল খবর। আমি আমার কাজ করছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে যখন বিষয়টি পৌঁছেছে, তখন চাইব, তিনিও আমাদের পাশে দাঁড়ান। এক জন ক্ষুদ্র নাগরিকের ক্ষমতা আর কতটুকু! কেন্দ্রীয় সরকার পাশে দাঁড়ালে আরও অনেক বেশি মানুষকে পরিষেবা দেওয়া যাবে।’’

পুঁড়িতে তৈরি হচ্ছে তাঁর হাসপাতাল।

২০০৪ সালে অষ্টাদশী মারুফার হৃদ্‌যন্ত্রে জল জমেছিল। তার চিকিৎসা করাতে কলকাতার এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত দৌড়োদৌড়ি করছিলেন সহিদুল। কিন্তু মারুফাকে কোথাও ভর্তি করাতে পারেননি। বোনের মৃত্যুর পরেই বারুইপুরের পুঁড়ির বাসিন্দা সহিদুল সঙ্কল্প করেন, নিজের গ্রামেই হাসপাতাল গড়ে তুলবেন। পাশে পেয়েছেন স্ত্রীকে। ফেব্রুয়ারিতে চারতলা ‘মারুফা মেমোরিয়াল হাসপাতাল’ তৈরির কাজ শুরু হয়। এপ্রিলের মধ্যে সেখানে বহির্বিভাগে পরিষেবা শুরু করে দেওয়া যাবে বলে আশা করছেন সহিদুল। তাঁর কথায়, ‘‘আমি আর আমার স্ত্রী শামিমা দু’জনেই জানি যে, আমরা কিছু আনিনি। কিছু নিয়েও যাব না।’’

তিনটে ট্যাক্সি, সোনারপুরে চার কাঠা জমি এবং স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে কাজে নেমেছেন অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ সহিদুল। ৫০ শয্যার হাসপাতালের পাশাপাশি মোবাইল পরিষেবার মাধ্যমে প্রবীণদের কাছে চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনাও শুরু করেছেন তিনি। তার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর মুখে তাঁর ‘ক্ষুদ্র’ প্রচেষ্টার কথা শুনে ভাল লেগেছে সহিদুলের। হাসপাতালের মাধ্যমে মানুষের কাছে চিকিৎসার সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন তিনি।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE