সুচেতা হত্যা

ফেরিঘাটে কুলি খোঁজেন সমরেশ, জানালেন সাক্ষী

সুচেতা-হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সমরেশ সরকারকে আগেই চিহ্নিত করেছিলেন ব্যারাকপুরের মনিরামপুর ঘাটের এক কর্মী। শনিবার একই ভাবে ফেরিঘাটের আর এক কর্মী আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে আঙুল উঁচিয়ে বললেন, দুর্গাপুরের বাসিন্দা সুচেতা চক্রবর্তী এবং তাঁর চার বছরের মেয়ে দীপাঞ্জনাকে খুন করেছেন ‘সাসপেন্ড’ ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সমরেশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৭:১৬
Share:

সুচেতা-হত্যা মামলায় অভিযুক্ত সমরেশ সরকারকে আগেই চিহ্নিত করেছিলেন ব্যারাকপুরের মনিরামপুর ঘাটের এক কর্মী। শনিবার একই ভাবে ফেরিঘাটের আর এক কর্মী আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে আঙুল উঁচিয়ে বললেন, দুর্গাপুরের বাসিন্দা সুচেতা চক্রবর্তী এবং তাঁর চার বছরের মেয়ে দীপাঞ্জনাকে খুন করেছেন ‘সাসপেন্ড’ ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সমরেশ।

Advertisement

শ্রীরামপুর আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক রাজা চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে এই মামলার শুনানি চলছে। এ দিন সাক্ষ্য দেন মনিরামপুরের নিমাইতীর্থ ফেরি সার্ভিসের কর্মী দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি আইনজীবী জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মী জানান, ঘটনার দিন সকালে তিনি ওই ফেরিঘাটের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করছিলেন। সকা‌ল ৮টা ৫০ মিনিট থেকে ৯টার মধ্যে এক ভদ্রলোক ঘাটে আসেন। তাঁর হাতে দু’টি ট্রলি ব্যাগ, একটি হাত-ব্যাগ এবং পিঠে একটি ব্যাগ ছিল। তিনি নিজের এবং ট্রলিব্যাগ দু’টির ভাড়া কাটেন। আদালতে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘টিকিট কাটার সময় ওই ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করেন, কুলি পাওয়া যাবে কি না। আমি বলি, কুলি পাওয়া যাবে না। তবে জেটিতে মাঝি আছে। এই বলে মাঝিকে ডেকে দেওয়া হয়। একটি ট্রলি মাথায় চাপিয়ে জেটিতে নিয়ে যান ওই মাঝি।’’

দিলীপবাবু জানান, কিছুক্ষণ পরে লোকজনের কাছে শোনেন, এক ব্যক্তি ভুটভুটি থেকে চারটি ব্যাগ গঙ্গায় ফেলে দিয়েছেন। তখন কৌতূহল বশত তিনি শেওড়াফুলি ঘাটে গিয়ে দেখেন, এক ব্যক্তিকে আটকে রাখা হয়েছে, যিনি তাঁর কাছ থেকে ট্রলি ব্যাগের ভাড়া কেটেছিলেন। একটি ট্রলিব্যাগ মাঝি জেটিতে তুলে দিয়ে এসেছিলেন। তখনই তিনি জানতে পারেন, আটক ব্যক্তি সমরেশ সরকার। তিনি একটি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। তিনি বলেন, ‘‘এর পরেই আমি মনিরামপুরে ফিরে যাই। সন্ধ্যায় পুলিশ আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।’’ পরে শ্রীরামপুর আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দিও দেন‌ তিনি।

Advertisement

দিলীপবাবুর সব কথা শোনার পরে সরকারি আইনজীবী জয়দীপবাবু প্রশ্ন করেন, সে দিন যাঁকে দেখেছিলেন, তাঁকে দেখলে চিনতে পারবেন? দিলীপবাবু বলেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ জয়দীপবাবুর প্রশ্ন, ‘‘আদালতের মধ্যে তিনি আছেন?’’ তখনই দিলীপবাবু সমরেশের দিকে আঙুল তুলে ধরেন। আসামীপক্ষের আইনজীবী ধূর্জটিনারায়ণ পাকড়াশি দিলীপবাবুকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘মনিরামপুরের ঘাটটিকেও কি ২ পয়সার ঘাট বলে?’’ দিলীপবাবু বলেন, ‘‘হ্যাঁ। এটা ওই ঘাটের পুরনো নাম।’’ ধূর্জটিবাবুর প্রশ্ন, ‘‘ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার কথা কে বলেছিল?’’ দিলীপবাবু বলেন‌, ‘‘পুলিশ।’’ ধূর্জটিবাবু বলেন, ‘‘কী বলতে হবে, পুলিশই কী শিখিয়ে দিয়েছিল?’’ দিলীপবাবু প্রথমে বলেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ পরক্ষণেই অবশ্য ব‌লেন, ‘‘না। নিজের চোখে যা দেখেছি। সেটাই বলেছি।’’ এর পরেই এ দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হয়। আগমী মঙ্গলবার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ হবে বলে জানা গিয়েছে।

অভিযোগ, ২০১৫ সালের অগস্ট মাসে দুর্গাপুরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার সমরেশ ‘প্রেমিকা’ সুচেতা এবং তাঁর মেয়েকে চৌবাচ্চায় ডুবিয়ে খুন করেন। পরে বঁটি দিয়ে সুচেতার দেহ টুকরো করে তিনটি ব্যাগে ভরেন। মেয়েটির দেহ অন্য একটি ব্যাগে ভরেন। গোটা ঘর ধুয়েমুছে পরিষ্কার করেন‌। তার পরে ব্যাগগুলি ব্যারাকপুর থেকে শেওড়াফুলির মাঝে যাত্রীবোঝাই ভুটভুটি থেকে গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়ে যান সমরেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন