BJP’s Durga Puja Outreach

মোদীর রাজ্যে শমীক, মোদীর কেন্দ্রে সুকান্ত! পুজোকেন্দ্রিক জনসংযোগে ভিন্‌রাজ্যে গিয়ে বাঙালিদের কী বলছে বিজেপি

মুম্বইয়ে দুর্গাপুজোর সংখ্যা অনেক। তাই সে শহরের দায়িত্ব তিন জনকে দেওয়া হয়েছে— রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ এবং নিশীথ প্রামাণিক। রূপা এবং রুদ্রনীল বৈঠক সেরে এসেছেন। নিশীথ যাবেন। পুণের দায়িত্ব বঙ্গ বিজেপির সহ-সভাপতি রথীন্দ্রনাথ বসুর।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:৫০
Share:

(বাঁ দিক থেকে) শমীক ভট্টাচার্য, নরেন্দ্র মোদী এবং সুকান্ত মজুমদার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

যে অস্ত্রে ঘায়েল করতে চাইছে তৃণমূল, তাকেই বুমেরাঙের মতো তা ফিরিয়ে দিতে চাইছে বিজেপি। বাংলা ভাষার অপমান আর বাংলার বাইরে বাঙালির হেনস্থা— দুই অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে বার বার তুলছে রাজ্যের শাসক দল। বিরোধীদল প্রকাশ্য মঞ্চে বলছে, ভিত্তিহীন অভিযোগের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু ভিতরে ভিতরে পাল্টা প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রবাসী বাঙালিদের মাঠে নামানোর।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে গিয়ে সেখানকার বাঙালিদের পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক করা শুরু করেছেন। সে সফরসূচিতে বিশেষ নজর কাড়ছেন রাজ্য বিজেপির বর্তমান ও প্রাক্তন সভাপতি। বর্তমান শমীক ভট্টাচার্য যাচ্ছেন মোদীর রাজ্য গুজরাতে। প্রাক্তন সুকান্ত মজুমদার যাচ্ছেন মোদীর নির্বাচনী কেন্দ্র বারাণসীতে।

দুর্গাপুজোকে সামনে রেখে ভিন্‌রাজ্যের বাঙালিদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের জনসংযোগের এই পরিকল্পনা হয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ইচ্ছায়। তাঁরাই এই কর্মসূচি তৈরি করেছেন। দেখভালও করছেন দুই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক দুষ্যন্তকুমার গৌতম এবং তরুণ চুঘ। তাঁরাই এই কর্মসূচির জন্য প্রতিটি রাজ্যে স্থানীয় নেতাদের একটি করে দল গড়ে দিয়েছেন। সেই সব দল স্থানীয় পুজো কমিটিগুলির কাছে বাংলার বিজেপি নেতাদের নিয়ে যাচ্ছেন। মুম্বই, পুণে, নাসিক, সুরাত, জয়পুর, দিল্লি, দেহরাদূন, হরিদ্বার, লখনউ, বারাণসী, রাঁচি, পটনা, ভুবনেশ্বর, হাদয়রাবাদ, চেন্নাই, তিরুঅনন্তপুরম, কোচি, বেঙ্গালুরু, পঞ্জিম, মারগাঁওয়ের মতো বিভিন্ন শহরে এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা যাবেন পুজোর আগেই। চণ্ডীগড় বা আন্দামান নিকোবরের মতো কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলও তালিকায় আছে।

Advertisement

বঙ্গ বিজেপির সহ-সভাপতি রথীন্দ্রনাথ বসুকে মহারাষ্ট্রের পুণেতে মাংসভাতে আপ্যায়ন পুজো কমিটির। ছবি: সংগৃহীত।

চণ্ডীগড়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিংহকে। আন্দামানে তাঁরই ‘ঘনিষ্ঠ অনুগামী’ হিসাবে পরিচিত অমিতাভ রায়কে। তাঁরা ইতিমধ্যেই কাজ সেরে ফিরেছেন। তবে এই কর্মসূচিকে বাংলার বাইরে বাঙালি হেনস্থা সংক্রান্ত অভিযোগের ‘পাল্টা’ হিসাবে মানতে রাহুল নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও কোনও বাঙালি হেনস্থা নেই। তৃণমূলের সাজানো গল্প লোকে বিশ্বাসও করছে না। আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে ও সবের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ তবে তিনি মানছেন যে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে এই কর্মসূচির সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যাঁদের কাছে আমরা যাচ্ছি বা যাব, তাঁদের অধিকাংশই হয়তো সেই রাজ্যেরই ভোটার। কিন্তু তাঁদের আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতেরা এ রাজ্যে থাকেন। তাঁদের এই প্রবাসীরা জানাবেন, অন্যান্য রাজ্য কতটা এগিয়ে গিয়েছে এবং কেন এই রাজ্য থেকে তৃণমূলকে সরানো দরকার।’’

উত্তরাখণ্ডের দেহরাদূন ও হরিদ্বারের পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে বৈঠক সেরে এসেছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। নয়াদিল্লির আটটি পুজো কমিটির সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ সেরে এসেছেন কেয়া ঘোষ। মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে একদফা জনসংযোগ সারা। আরও একদফা হবে বলে জানাচ্ছেন সে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলটির ‘ইনচার্জ’ তথা রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি রথীন্দ্রনাথ বসু। মুম্বইয়ে দুর্গাপুজোর সংখ্যা অনেক। তাই সে শহরের দায়িত্ব তিন জনকে দেওয়া হয়েছে— রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, রুদ্রনীল ঘোষ এবং নিশীথ প্রামাণিক। রূপা এবং রুদ্রনীল বৈঠক সেরে এসেছেন। নিশীথ যাবেন। রথীন নিজে দেখভাল করছেন পুণে। তিনিও একদফা বৈঠক সেরে এসেছেন। আবার যাবেন। মহারাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলে রয়েছেন বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর এবং আইনজীবী নেতা কৌস্তভ বাগচি। পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতোকে দেওয়া হয়েছে রাঁচির দায়িত্ব। তিনি বলছেন, ‘‘আমার গন্তব্য ঘরের কাছেই। বেশি সময় লাগবে না। যে কোনও দিন পৌঁছে যাব। সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে যাঁরা আমাদের রাজ্যের ভোটার, তাঁদের বলব, ভোটের সময়ে অবশ্যই আসুন এবং তৃণমূলকে হারাতে বিজেপিকে ভোট দিয়ে যান।’’

ভিন্‌রাজ্যে গিয়ে এই পুজোকেন্দ্রিক জনসংযোগের অভিজ্ঞতা নিয়ে কেয়া বলছেন, ‘‘দিল্লিতে যাঁদের সঙ্গে দেখা করলাম, তাঁরা প্রত্যেকে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, আমি বাংলার বাইরে এক টুকরো বাংলাতেই রয়েছি। তিন দিন ছিলাম। প্রতিটি কমিটি আমায় চিত্তরঞ্জন পার্কের বিশেষ দোকান থেকে বাঙালি শিঙাড়া, বাঙালি ভেজিটেব্‌ল চপ আনিয়ে খাওয়ালেন। একদম পুঁটিরামের শিঙাড়ার স্বাদ।’’ পুণেতে রথীন পেয়েছেন আরও বড় আপ্যায়ন, ‘‘সব জায়গায় ৫০-৫৫ জন করে কমিটি সদস্য জড়ো হচ্ছিলেন। খুব খোলামেলা আদানপ্রদান হচ্ছিল। সবটাই স্বতঃস্ফূর্ত। একটা কমিটি তো আমাকে মাংসভাতও খাইয়ে দিল। গোটা কমিটি একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া সারল।’’

মুম্বইয়ে দুর্গাপুজো কমিটিগুলির তরফ থেকে শুভেচ্ছার ফুল রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও রুদ্রনীল ঘোষকে। ছবি: সংগৃহীত।

পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য উৎসাহ বেশি শমীক-সুকান্তের গন্তব্য ঘিরে। শুধু প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য ও নির্বাচনী কেন্দ্র বলে নয়। যে দুই শহরে তাঁরা যাচ্ছেন, সেই সুরত ও বারাণসীতে বাঙালির সংখ্যাও কম নয়। সুরতের প্রবাসী বাঙালিদের অনেকেই পশ্চিমবঙ্গের ভোটার। তবে বারাণসীর বাঙালিদের অধিকাংশই সে শহরে অনেক প্রজন্মের বাসিন্দা। তাঁরা শুধু সেখানকার ভোটার নন, বারাণসীর রাজনীতিতে তাঁদের প্রভাবও আছে। বঙ্গ বিজেপির দুই সর্বোচ্চ স্তরের নেতার সঙ্গে ওই দুই শহরের বাঙালিদের আদানপ্রদানের কাহিনি জানতে উৎসুক রাজ্য বিজেপির অন্দরমহলও।

মোদীর ইচ্ছাতেই কি তাঁর রাজ্য ও তাঁর কেন্দ্রের জন্য বঙ্গ বিজেপির এই দুই নেতার নামই বেছে নেওয়া হয়েছে? সরাসরি মন্তব্য করতে কেউ রাজি নন। তবে বিজেপির একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, মোদীর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত কোনও বিষয় হলে তাঁর মতামত না নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় না। শমীক যেমন বলছেন, ‘‘সব কিছুর নেপথ্যেই ভাবনাচিন্তা থাকে। ভাবনাচিন্তা না করে এই দলে কোনও কাজ হয় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement