সরলেন সুজন, জেলার দায়িত্বে এ বার শমীক

চেয়েও সূর্যকান্ত মিশ্র যা পারেননি, সুজন চক্রবর্তী পারলেন! জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে শেষ পর্যন্ত অব্যাহতি পেলেন বাম পরিষদীয় দলনেতা।যাদবপুরের বিধায়ক সুজনবাবু এত দিন বাম পরিষদীয় দলনেতার পাশাপাশি সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকও ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি আবার দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীরও সদস্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫০
Share:

শমীক লাহিড়ী

চেয়েও সূর্যকান্ত মিশ্র যা পারেননি, সুজন চক্রবর্তী পারলেন! জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে শেষ পর্যন্ত অব্যাহতি পেলেন বাম পরিষদীয় দলনেতা।

Advertisement

যাদবপুরের বিধায়ক সুজনবাবু এত দিন বাম পরিষদীয় দলনেতার পাশাপাশি সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকও ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি আবার দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীরও সদস্য। বাম পরিষদীয় নেতার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই জেলার ভার ছাড়তে চাইছিলেন তিনি। কিন্তু বিকল্প হিসাবে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়ে চূড়ান্ত ফয়সালার অভাবে বিষয়টি ঝুলে ছিল। শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির বৈঠকে বৃহস্পতিবার সুজনবাবুর প্রস্তাব মেনেই তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় দলের নতুন জেলা সম্পাদক হয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ শমীক লাহিড়ী।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে বিরোধী দলনেতার পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন সূর্যবাবু। কিন্তু বিধানসভা ভোটের অল্প দিন আগে বিরোধী দলনেতা পদে বদল হলে অসুবিধা হবে বলে বামফ্রন্ট বিধায়কদের আপত্তি ছিল। সম্মতি দেননি দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও। বাম পরিষদীয় নেতা হওয়ার পরে একই সমস্যায় পড়েন সুজনবাবুও। বিধানসভার দায়িত্ব ও দলীয় সংগঠনের দেখাভাল একই সঙ্গে করে ওঠা সমস্যা হচ্ছিল। সূর্যবাবু নিজে ভুক্তভোগী বলে তিনি সুজনবাবুর সমস্যা বুঝে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন। সূর্যবাবু এবং দলের আর এক পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসুর উপস্থিতিতেই জেলা কমিটির বৈঠকে শমীকবাবুকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সুজনবাবু বলেছেন,

Advertisement

দায়িত্ব হাতবদলের পরে সংগঠন আরও কার্যকরী হবে বলেই তাঁরা সকলে আশাবাদী। প্রথমে রাজি না হলেও সুবক্তা এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয় শমীকবাবু দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত হওয়ায় হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে আলিমুদ্দিনও! শমীকবাবু বলেন, ‘‘আসলে সুজনদার উপরে অনেক বেশি চাপ পড়ে যাচ্ছিল। আমাকে দল

যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করব।’’

খাতায়-কলমে এ দিনের সিদ্ধান্ত অবশ্য ‘সর্বসম্মত’ হয়নি। সিপিএম সূত্রের খবর, বৈঠকে নতুন সম্পাদক বসানোর বিরোধিতা করেছেন যাদবপুর এলাকার এক সময়ের দাপুটে নেতা খোকন ঘোষ দস্তিদার। তা ছাড়াও রুহুল আমিন গাজি, অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও শাহনওয়াজ মুকামিকে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিধানসভা ভোটে কঠিন লড়াইয়েও যাদবপুর পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিল সিপিএম। অথচ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে যাদবপুরকে গুরুত্ব না দিয়ে সোনারপুর থেকেই পাঁচ নেতাকে কেন জায়গা দেওয়া হল, এই প্রশ্ন তুলে বিরোধিতা করেছেন যাদবপুর অঞ্চলের একাধিক নেতা। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলছেন, ‘‘যে কোনও সিদ্ধান্তেই কিছু আপত্তি থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতেই যা হওয়ার, হয়েছে।’’

সুজনবাবুকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে যুব ফ্রন্টের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ছাত্র শাখার দায়িত্বে রাখা হয়েছে। কলকাতার বদলে তাঁর হাতে কোচবিহার দেখার দায়িত্ব। এর পরে জেলা সম্পাদক পদ থেকেও অব্যাহতি দিয়ে আলিমুদ্দিন তাঁকে বার্তা দিল, পরিষদীয় দলনেতার কাজেই এখন অনেক বেশি মনোনিবেশ করতে হবে। সুজনবাবু সরে যাওয়ায় উত্তর ২৪ পরগনায় মুখ বদল নিয়েও জল্পনা সামনে এসেছে। জেলা সম্পাদক গৌতম দেব অসুস্থতার কারণেই এখন পূর্ণ সময়ের দায়িত্ব পালনে অপারগ। প্রাথমিক টানাপড়েন কাটিয়ে দক্ষিণ দমদমের এক যুব নেতাকে সম্ভাব্য জেলা সম্পাদক হিসাবে ভেবেও ফেলা হয়েছে। আপাতত গৌতমবাবু আগামী ১৮ জানুয়ারির জেলা সমাবেশকেই মর্যাদার প্রশ্ন হিসাবে দেখছেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন