Santragachhi

স্টেশন থেকে বেঁচে ফিরেছি তো? এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না!

(লেখক সাঁতরাগাছির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী)এই পথেই বাড়ি ফিরি রোজ। এ সব চেনা ছবি। তাই গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। সাহস করে এগোলাম।

Advertisement

রঞ্জুরিমা দাস

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ২১:৩৪
Share:

সাঁতরাগাছি স্টেশনে দুর্ঘটনার মুহূর্ত। ইনসেটে লেখক।

রোজকার মতোই অফিস থেকে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু এমন ঘটনার সম্মুখীন হব ভাবিনি। সাঁতরাগাছিতেই আমার অফিস। ছুটির পর ধীরেসুস্থেই এগোচ্ছিলাম সাঁতরাগাছি স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে। সাঁতরাগাছি-চেন্নাই মেল তখনও দাঁড়িয়েই ছিল প্ল্যাটফর্মে। ৩ ও ৫ নম্বরেও ট্রেন দাঁড়িয়েছিল। ঠেলাঠেলি চলছিল রোজকার মতোই। ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল এক একজন।

Advertisement

এই পথেই বাড়ি ফিরি রোজ। এ সব চেনা ছবি। তাই গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। সাহস করে এগোলাম। কিন্তু আজ গতিক ঠিক লাগল না। রোজ ধাক্কাধাক্কি হয়। তবে আজ যেন একটু বেশিই। কয়েকটা ধাপ পেরিয়েছি সবে। ভিড়ের মধ্যে আটকে গেলাম। সামনে-পিছনে একটুও এগোতে পারছিলাম না। পা রাখা তো দূর, ভিড় থেকে মাথা বের করে শ্বাস নেব যে, তারও জো নেই। ওইভাবে প্রায় ২০মিনিট দাঁড়িয়েছিলাম। ভিড় না এগোচ্ছিল, না পিছোচ্ছিল।

কিছুক্ষণ পর আরপিএফের একজন ব্রিজের নীচে এলেন। আরও দু’-চারজন এল। টেনে টেনে লোকজনকে সিঁড়ি থেকে নামানোর চেষ্টা করছিলেন ওঁরা। কিন্তু তাতে ঠিক উল্টোটা ঘটল। শুরু হল মারপিট। ব্রিজের উপর থেকে লাইনের উপর ব্যাগপত্র ফেলতে শুরু করল একদল। মাথায় বস্তা নিয়ে যারা উঠেছিল তারাও লাইনের উপর সব ফেলতে লাগল।

Advertisement

আরও পড়ুন: স্টেশনে একসঙ্গে ৮টি ট্রেন, প্রবল ঠেলাঠেলিতে সাঁতরাগাছিতে পদপিষ্ট, মৃত ২

আরপিএফের তরফে সকলকে ১ নম্বর স্টেশনে নামতে বলা হয়। তারপর হুড়োহুড়ি বেড়ে গেল আরও। ওভারব্রিজের রেলিংটা ধরে কোনওরকমে দাঁড়িয়েছিলাম। সেখান থেকেই দেখলাম, ধাক্কাধাক্কিতে অনেকে মাটিতে পড়ে গেলেন। তাঁদের মাড়িয়েই নামার চেষ্টা করতে লাগল একদল।

কোলে বাচ্চা নিয়ে ভিড়ে আটকে গিয়েছিলেন এক মহিলা। তিনি নিজেও অসুস্থ ছিলেন। ক্যাথিটার লাগানো ছিল। হুমড়ি খেয়ে এক কোণে পড়ে গেলেন তিনি। কিছু করতে যাব কি, তার আগে কেউ একজন ধাক্কা মারল। টাল সামলাতে পারলাম না। প্ল্যাটফর্মের উপর পড়ে গেলাম। দিন কয়েক আগে ডান পায়ে চোট পেয়েছিলাম। প্ল্যাটফর্মে পড়ে মনে হল পা-টা যেন গুঁড়িয়ে গেল। কোনওরকমে পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম ভিডিয়ো রেকর্ডিং করব বলে। আশপাশের কয়েকজন আমাকে বকতে শুরু করলেন। তবু যতটা পারলাম নিলাম।

কয়েকজনের সাহায্যে কোনওরকমে উঠে দাঁড়ালাম। অনেকক্ষণই অপেক্ষা করতে হল। তারপর খালি হল ব্রিজ। ফের ফুটব্রিজে উঠলাম। তারপর ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন ধরলাম। বাড়িতে মা একা থাকে। প্রথমে কিছু না বললেও, ট্রেনে উঠে সব জানালাম। কোনওরকমে বাড়ি এসে পৌঁছেছি। কিন্তু এখনও আতঙ্ক কাটছে না আমার। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে কখনও ভাবিনি। ওই মহিলা ও তাঁর বাচ্চার কথা মনে পড়ছে খুব। ভিড়ের মধ্যে ওদের আর দেখতে পাইনি। জানি না ওদের কী অবস্থা।

আমি নিজে যে কীভাবে বেঁচে ফিরলাম জানি না। কাল হয়তো অফিস যেতে পারব না। কিন্তু কয়েক দিন পর তো যেতেই হবে! ওই পথেই! ফের যদি এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে! তখন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসতে পারব তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন