লক্ষ্মীকে আর বরণ করা হল না সিংহ পরিবারের 

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাঁতরাগাছি স্টেশনে ট্রেন ধরতে গিয়ে ফুট ওভারব্রিজে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান কোলাঘাটের রাইন গ্রামের বছর আটত্রিশের কমলাকান্ত সিংহ। রাতেই দুঃসংবাদ পাওয়ায় এক লহমায় বদলে গিয়েছে সিংহ পরিবারের ছবি। লক্ষ্মীকে বরণের আগেই লক্ষ্মী বিদায়ের সুর গোটা পরিবারে।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল ও সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়

কোলাঘাট ও হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:২৬
Share:

মৃত কমলাকান্ত সিংহ

সকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় স্ত্রী মিতাকে জানিয়েছিলেন সন্ধ্যায় কোলাঘাট স্টেশনে নেমে লক্ষ্মীপুজোর বাজার করে ফিরবেন। কিন্তু বাড়ি আর ফেরা হল না কমলাকান্তের। এল তাঁর নিথর দেহ।

Advertisement

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাঁতরাগাছি স্টেশনে ট্রেন ধরতে গিয়ে ফুট ওভারব্রিজে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান কোলাঘাটের রাইন গ্রামের বছর আটত্রিশের কমলাকান্ত সিংহ। রাতেই দুঃসংবাদ পাওয়ায় এক লহমায় বদলে গিয়েছে সিংহ পরিবারের ছবি। লক্ষ্মীকে বরণের আগেই লক্ষ্মী বিদায়ের সুর গোটা পরিবারে।

ছবিটা প্রায় একই রকম মুর্শিদাবাদের নশিপুরে। অসুস্থ ছেলের চিকিৎসার জন্যই তাসের সর্দারকে (৬১) গ্রাম ছেড়ে পাড়ি দিতে হয়েছিল কেরলে। ফেরার আগে বলেছিলেন, ‘‘এই শেষ। আর যাব না।’’ ফিরেও আসছিলেন তাসের। তবে বাড়ি আর পৌঁছনো হল না তাঁর। বুধবার সন্ধ্যায়, তাঁর থেঁতলানো দেহ ফিরল নশিপুরের বাড়িতে। গ্রামের বাড়ির দাওয়ায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গুমরে উঠছে কান্না। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, বছর পঁচিশের ছেলেকে নিয়েই ছিল তাঁর সংসার। বছর কয়েক আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েই ডান পায়ে আঘাত পেয়েছিল সে। সেই থেকে বাড়িতে। রুজির টানে তাই বয়স্ক তাসেরকেই ছুটতে হয়েছিল কেরল। সেই আয়ের সিংহভাগই খরচ হয়ে যেত ছেলের চিকিৎসায়। ফেরার আগে, কেরল থেকেই ফোনে জানিয়েছিলেন, ‘‘আর পেরে উঠছি না, এ বার গ্রামেই ফিরে যাব।’’ তাসেরের স্ত্রী সামনা বিবি ফুঁপিয়ে ওঠেন, ‘‘এ ভাবে ফিরতে কে বলেছিল তোমায়!’’

Advertisement

শোকার্ত: কমলাকান্ত সিংহের বাবা-মা। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

স্ত্রী, অষ্টম শ্রেণিতে পড়া নাবালিকা মেয়ে ও বৃদ্ধ বাবা-মাকে নিয়ে একার রোজগারেই সংসারের হাল টানছিলেন পেশায় রং মিস্ত্রি কমলাকান্ত। গত ২০ বছর ধরে চলে আসা সেই রুটিনে যে এ ভাবে ছেদ পড়বে তা ভাবতে পারেননি স্ত্রী মিতা। বুধবার সকালে গ্রামের ষষ্ঠীতলায় কমলাকান্তর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মাটির ঘরের উঠোনে মেয়ে পৌলমীকে নিয়ে থম মেরে বসে মিতাদেবী। চোখের জল ফেলছেন বৃদ্ধ বাবা-মা। মিতাদেবী বলেন, ‘‘মঙ্গলবার বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় লক্ষ্মীপুজোর বাজার করে আনতে বলেছিলাম। বিকেলে মেয়ে ফোন করলে জানিয়েছিল বাসে চেপে যাচ্ছি। বাড়ি ফিরছি।’’

বুধবার বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ বাড়িতে দেহ পৌঁছলে ভেঙে পড়ে গোটা গ্রাম। প্রতিবেশী সুজিত বেরা, বিশ্বজিৎ ঘটক বলেন, ‘‘এলাকার অনেকে কলকাতায় কাজ করতে যান। সাঁতরাগাছি হয়েই যাতায়াত করেন। কিন্তু ওই স্টেশনে ফুট ওভারব্রিজ চওড়া না হওয়ায় খুব অসুবিধা হয়। যার মাসুল দিতে হল কমলাকান্তকে।’’ তাঁদের অভিযোগ, রেল দফতরের গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে কমলাকান্তের। অসহায় পরিবারটিকে বাঁচাতে মৃতের স্ত্রীকে চাকরি দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন