মদন তথ্য গোপন করছেন, কোর্টে বলল সিবিআই

এক জনকে প্রথম বার জেরা করেই সন্তুষ্ট সিবিআই। কিন্তু অন্য জনের ক্ষেত্রে উল্টো প্রতিক্রিয়া তদন্তকারীদের। শুক্রবার আলিপুর আদালতে সিবিআইয়ের অভিযোগ, সহযোগিতা দূরে থাক, তথ্য গোপন করে গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করছেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। তদন্তকারীরা আদালতকে জানান, ২০ জানুয়ারি জেলে গিয়ে মন্ত্রীকে জেরা করেছিলেন তাঁরা। সেখানে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। তার মধ্যে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন মদন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:২২
Share:

এক জনকে প্রথম বার জেরা করেই সন্তুষ্ট সিবিআই। কিন্তু অন্য জনের ক্ষেত্রে উল্টো প্রতিক্রিয়া তদন্তকারীদের।

Advertisement

শুক্রবার আলিপুর আদালতে সিবিআইয়ের অভিযোগ, সহযোগিতা দূরে থাক, তথ্য গোপন করে গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করছেন পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। তদন্তকারীরা আদালতকে জানান, ২০ জানুয়ারি জেলে গিয়ে মন্ত্রীকে জেরা করেছিলেন তাঁরা। সেখানে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করা হয়েছিল। তার মধ্যে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর কার্যত এড়িয়ে গিয়েছেন মদন।

ঘটনাচক্রে এ দিন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কে জেরা করেছে সিবিআই। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা জেরার পর তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মুকুল রায় তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে তিনি আরও তথ্য দেবেন বলেও জানিয়েছেন। সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে একই কথা বলেছেন মুকুলও। সিবিআই অফিসাররাও জানিয়েছেন, তদন্তে সহযোগিতা করায় মুকুলকে গ্রেফতারের প্রয়োজন পড়েনি। অন্য দিকে জেরার প্রথম দিনেই গ্রেফতার করা হয়েছিল মদনকে।

Advertisement

আদালতের বাইরে সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত বলেন, “মদনবাবু তদন্তে সহযোগিতা করেননি। বিষয়টি আমরা আদালতকে জানিয়েছি।” যদিও এ ব্যাপারে মদনের আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, সিবিআই অফিসারেরা নিজেদের পছন্দসই জবাব না পেলেই অসহযোগিতার কথা বলেন। মদনবাবুর জামিন আটকাতে এটা সিবিআইয়ের নতুন চাল বলেও তাঁর দাবি।

আদালতে হাজিরা ছিল সারদা কেলেঙ্কারিতে আর এক অভিযুক্ত তথা সুদীপ্ত সেনের আইনজীবী নরেশ বালোড়িয়ারও। তাঁর হয়েও আইনজীবীরা জামিনের আর্জি জানান। দু’পক্ষের শুনানি শেষে অবশ্য মদনবাবু ও নরেশ, দু’জনেরই জামিনের আবেদন খারিজ করেছেন আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট হারাধন মুখোপাধ্যায়। দু’জনকেই ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন।

সিবিআই সূত্রের খবর, প্রথমে তদন্তে বিশেষ সহযোগিতা না করলেও, গ্রেফতার হওয়ার পর মদন বেশ কিছু তথ্য দিয়েছিলেন। তার ভিত্তিতে নতুন কিছু সূত্রও পান গোয়েন্দারা। আদালতেও সে কথা জানিয়েছিলেন সিবিআইয়ের আইনজীবী। সেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরে আরও কিছু তথ্য যাচাই করার ক্ষেত্রে পরিবহণ মন্ত্রীকে জেলে গিয়ে জেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তদন্তকারীদের একাংশের আশা ছিল, এ বারও মদন সাহায্য করবেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁরা নিরাশ হয়েছেন বলেই তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি করা হয়েছে।

এ দিন আদালতে হাজির হওয়ার দিন থাকলেও অসুস্থতার কারণে তাঁকে আদালতে নিয়ে আসা হয়নি। সিবিআই সূত্রের খবর, আলিপুর জেল থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, মদনবাবু শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা আদালতে হাজির হওয়ার উপযুক্ত নয়। আদালতের বাইরে মদনবাবুর আর এক আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পরিবহণমন্ত্রী স্লিপ অ্যাপনিয়া, হাইপার টেনশন ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এ সব থেকেই তাঁর অসুস্থতা আরও বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।” মদনবাবুর শারীরিক অবস্থা খারাপ এবং সিবিআই অকারণে জেলে আটকে রাখতে চাইছে, এই কারণ দেখিয়ে মন্ত্রীর হয়ে জামিনের সওয়াল করেন তাঁর আইনজীবীরা।

জামিনের বিরোধিতা করতে উঠে সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থসারথি দত্ত জানান, সারদা রিয়েলটি সংস্থা (যে মামলায় মদন মিত্রকে গ্রেফতার করা হয়েছে) কোনও আইনি বৈধতা ছাড়াই ব্যবসা করছিল। প্রচুর মানুষ এই সংস্থায় লগ্নি করেছিলেন। সেই সব টাকা নয়ছয় হয়েছে। তার ফলে কারা লাভবান হয়েছেন, সেটাও তদন্তে খুঁজে দেখা হচ্ছে। পার্থসারথিবাবু এ দিন মদনবাবুকে সারদার বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশীদার এবং সংস্থা থেকে অনৈতিক ভাবে লাভবান বলেও ব্যাখ্যা করেছেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিন নাম না করে মুকুল রায়ের জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন তিনি। দুপুরে আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেছেন, “তদন্ত চলছে। বেশ কয়েক জনকে আজও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন