৭০ হাজার কল আর সারদার প্রভাবশালী

২০১২-এর জুলাই থেকে ২০১৩-মে পর্যন্ত সুদীপ্ত ও দেবযানী তাঁদের ফোন থেকে কাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তা বিধাননগর পুলিশের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিল সিবিআই।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় 

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ০৩:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

পাঁচটি ফোনে এগারো মাসে ৭০ হাজার কলের রেকর্ড মিলেছে! সে জন্য সিবিআই-কে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ২৩ মাস। মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। সেখানে সবিস্তার কল রেকর্ড দিতে গিয়ে বিধাননগরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার কোনও কারচুপি করেছিলেন কি না, তা-ও হলফনামা দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হয়েছে সিবিআই অধিকর্তা ঋষিকুমার শুক্লকে। তারই মাঝে ওই ৭০ হাজার কলের বিশ্লেষণ সেরে ফেলেছেন সিবিআই গোয়েন্দারা। সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের পাঁচটি ফোনে যে সব প্রভাবশালী সব চেয়ে বেশি কথা বলেছেন, এ বার তাঁদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় সিবিআই। কারণ, সারদা মামলায় সিবিআই-কে বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের খোঁজ করে প্রভাবশালীদের ভূমিকা দেখতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisement

তদন্তকারী সংস্থার দাবি, নথি থেকে জানা গিয়েছে ২০০৮-র জুলাই থেকে ২০১৩-র এপ্রিল পর্যন্ত সারদা বাজার থেকে ২৪৫৯.৫৯ কোটি টাকা তুলেছিল। এর মধ্যে ১৯৮৩.০২ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি। যার একটি বড় অংশ ‘প্রভাবশালীরা’ ভোগ করেছেন বলে সিবিআইয়ের সন্দেহ। এক কর্তার কথায়, ‘‘সারদার নথিপত্র যাচাই করে আড়াই হাজার কোটি টাকার খোঁজ মিলেছে। কিন্তু বহু শাখায় নগদে কারবার চলত। সেখানে কত টাকা জমা পড়েছে, আর কত টাকা প্রভাবশালীরা নিয়ে গিয়েছেন, তা জিজ্ঞাসাবাদ না-করে জানা সম্ভব নয়।’’

২০১২-এর জুলাই থেকে ২০১৩-মে পর্যন্ত সুদীপ্ত ও দেবযানী তাঁদের ফোন থেকে কাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তা বিধাননগর পুলিশের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিল সিবিআই। পুলিশ সেই কল ডেটা রেকর্ডস (সিডিআর) দিতে ১৪ মাস টালবাহানা করে। তার পরেও সব মিলিয়ে মাস তিনেকের রেকর্ড সিবিআই-কে দিয়েছিল তারা। সুদীপ্ত, দেবযানী পালিয়ে যাওয়ার আগে দু’-তিন মাস কাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, সেই তথ্য তাদের হাতে নেই বলে সিবিআই-কে জানায় বিধাননগর পুলিশ। সব মিলিয়ে মাত্র হাজার পাঁচেক কল রেকর্ড পাওয়া যায়। কিন্তু সিবিআই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাহায্যে দু’টি টেলিফোন সংস্থার থেকে পাঁচটি ফোনের ১১ মাসের সিডিআর হাতে পায়, তাতে ৭০ হাজার কলের হদিশ মেলে।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ফোন রহস্য

• ৪ এপ্রিল ২০১৭: বিধাননগরের সিপি-কে চিঠি দিয়ে ৫টি ফোনের সিডিআর চাওয়া হল।
• ১৯ জানুয়ারি ২০১৮: ৪টি ফোনের সিডিআরের সিডি পাঠাল রাজ্য।
• ৯ মার্চ ২০১৮: দেখা গেল সিডি-তে কোন রেকর্ড নেই। পাল্টা চিঠি বিধাননগর পুলিশকে।
• ২৮ জুন ২০১৮: বিধাননগর পুলিশ ই-মেল এর মাধ্যমে সিডিআর পাঠাল।
• ১৫ অক্টোবর ২০১৮: অসম্পূর্ণ সিডিআর দেখে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাহায্য চাইল সিবিআই রাজ্য পুলিশ বলে, যা ছিল সব দেওয়া হয়েছে।
• ১ মার্চ ২০১৯: টেলিকম সংস্থা ৫টি ফোনের ৭০ হাজার কল রেকর্ড দিল সিবিআই-কে অসহযোগিতার অভিযোগ মানতে নারাজ রাজ্য।

এর পর সিবিআইয়ের টেকনিক্যাল অ্যান্ড ফরেন্সিক সায়েন্স ইউনিট (টাফসু) সেই সব কল ডেটা বিশ্লেষণ করে অন্তত ২০ জন প্রভাবশালীর নাম পেয়েছে। যাঁরা সারদা মালিক উধাও হয়ে যাওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে বার বার কথা বলেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন