সারদা তদন্তে অত্রির কাছেও সিবিআই  

তবে সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় অত্রিবাবু পরে কথা বলবেন বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জানান

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০১:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

সারদা-তদন্তে পর্যটন সচিব অত্রি ভট্টাচার্যের অফিসে পৌঁছল সিবিআই। তাঁর বক্তব্য জানতে শুক্রবার পর্যটন দফতরে গিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

তবে সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় অত্রিবাবু পরে কথা বলবেন বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে জানান। পর্যটন সচিবের অফিসে গিয়ে তাঁর বক্তব্য জানার জন্য নয়াদিল্লির সদর দফতর থেকে সপ্তাহখানেক আগেই অনুমোদন এসেছে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, রাজীব কুমারের বাড়ি যাওয়া সংক্রান্ত বিতর্কের পর সিবিআই অফিসারেরা রাজ্যের আর কোনও আধিকারিকের বাড়ি বা অফিসে যাননি।

এ প্রসঙ্গে অত্রিবাবুকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। ‘মেসেজ’-এরও জবাব দেননি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র দাবি করেছে, তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সচিব থাকাকালীন ‘একটি বিষয়ে’ সিবিআই জানতে চেয়েছিল। তা তিনি জানিয়েও দিয়েছেন। তদন্তকারী সংস্থা আরও কিছু জানতে চাইলে ভবিষ্যতে সহযোগিতা করবেন। ওই ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, সচিব হিসাবে তিনি ‘উপরতলার নির্দেশ’ কার্যকর করেছিলেন মাত্র।

Advertisement

কী বিষয়ে সিবিআইয়ের অত্রিবাবুর বক্তব্য জানা প্রয়োজন? কেন্দ্রীয় সংস্থার বক্তব্য, ২০১৩ সালে সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন কাশ্মীরে ধরা পড়েন। সারদার টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র তখন টালমাটাল। সে সময় তথ্য-সংস্কৃতি দফতর সিদ্ধান্ত নেয়, সারদার টিভি চ্যানেল ‘তারা টিভি’-র দায়ভার নেবে সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ‘তারা’-কে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ছ’কোটি টাকা তারা-র অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয় বলে সংস্থা সূত্রে খবর।

সিবিআই জানতে চায়, লক্ষ লক্ষ আমানতকারীর টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযুক্ত সারদা সংস্থার মালিককে গ্রেফতার করার পর সেই সরকারই কেন তাদের টিভি চ্যানেলে টাকা দিয়েছিল। যে সময় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে সারদার চ্যানেলে টাকা গিয়েছিল, সে সময় ওই তহবিলে টাকা দান করেছিল অন্য বেশ কিছু অর্থলগ্নি সংস্থা। সরকারি বাজেট থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে টাকা দেওয়া হয়েছিল। সিবিআইয়ের আরও প্রশ্ন, দানের টাকায় মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল চলে। এই তহবিল সিএজি অডিটের আওতার বাইরে। কেন সেখানে বাজেটের বা বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার টাকা নেওয়া হল? কেনই বা তা ‘তারা টিভি’কে দেওয়া হয়েছিল। চ্যানেলটি কেন শুধুমাত্র সরকারের প্রচার করত? এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত কে নিয়েছিলেন?

এ সব জানতে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের তৎকালীন সচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে চিঠি দিয়েছিল সিবিআই। জবাবে সরকার জানিয়েছিল, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন সহায়তা করা হয়েছিল। সিবিআই ওই ফাইল চেয়ে পাঠালে সরকার সেটি দেয়। ফাইল অনুযায়ী, ‘তারা’কে টাকা দেওয়ার ‘চূড়ান্ত অনুমোদন’ মুখ্যমন্ত্রী তথা তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছিলেন।

সিবিআই এখন জানতে চায়, সরকার এসআইটি গঠন করে সারদা-কাণ্ডের তদন্ত শুরু করা সত্ত্বেও কেন তাদেরই চ্যানেলে সাহায্য করেছিল? কেন সচিব হিসাবে অত্রিবাবু এমন কাজে বাধা দেননি? আমলারা রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন কি না, তা-ও জানতে চায় সংস্থা।

সরকারি সূত্রে খবর, সংশ্লিষ্ট চ্যানেল বন্ধ হলে অনেকেই চাকরি হারাতেন এবং তারা-র মিউজিক চ্যানেলটি তখন খুবই জনপ্রিয় ছিল। সব মিলিয়ে সরকারের উপর চ্যানেল বাঁচানোর সামাজিক চাপও এসে পড়ে। তারা টিভির কর্মীরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আদালত তাঁদের প্রশ্ন করে, একটি চ্যানেল পরিচালনা করা যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। কর্মীরা তা করবেন কী ভাবে? সরকারি আইনজীবী আদালতকে জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার ওই চ্যানেল পরিচালনা করতে সহযোগিতা করবে।

পরবর্তী পর্যায়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মহারাজ সিংহ, তৎকালীন তথ্য-সংস্কৃতি সচিব অত্রি ভট্টাচার্য এবং শিল্পপতি আলোক মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ‘তারা’ চ্যানেলে গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে। ‘তারা’র কর্মীদের নিয়ে আরও একটি কমিটি গড়া হয়। সেই সময় রাজ্য সরকার চ্যানেলটি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তার আগে মুখ্য সচিব, অর্থ সচিবের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার জানিয়ে দেয়, মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে তারাকে প্রতি মাসে সহায়তা দেওয়া হবে। সহায়তা দেওয়া হলেও তারার পরিচালন ব্যবস্থা অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। কারণ, রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট অধ্যাদেশ রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন