আবিল চূর্ণী
river

দু’দেশের কর্তাদের ঘুম ভাঙাতে মরিয়া লড়াই

নদীর নামটি ভারী মিষ্টি। নদিয়ার অনেকটা অঞ্চল পাড়ি দিয়ে তা বয়ে নিয়ে চলে জীবনধারা। কিন্তু সে ধারায় বিষ মেশাচ্ছে সভ্যতা। বাংলাদেশের কারখানা তো বটেই, বর্জ্য আসছে চলার পথে পড়া ব্যস্ত শহর থেকেও। চূর্ণী তবে বাঁচবে কী করে? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার।একটা জীবন্ত নদীর খেয়াল যদি আমরা না রাখি, সে একটা মৃত নদীতে পরিণত হবে। এটা সকলের কাছেই সঙ্কটের।”  কিন্তু যেহেতু দূষিত জল আসছে পড়শি দেশের কারখানা থেকে, তাই স্থানীয় স্তরে এর সমাধান সম্ভব নয়

Advertisement

সম্রাট চন্দ

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৩
Share:

শিবনিবাসে চূর্ণী নদী। বাঁ দিকে, মাথাভাঙা থেকে বেরোচ্ছে চূর্ণী। পাবাখালিতে। নিজস্ব চিত্র

চূর্ণীকে বাঁচাতে গেলে যে পড়শি দুই দেশকেই এগিয়ে আসতে হবে, তা মানছেন নদীপারের বাসিন্দা থেকে শুরু করে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের সদস্য, সকলেই।
বাংলাদেশের দর্শনার চিনিকল ও সদ্য গড়ে ওঠা অন্য একটি কারখানার বর্জ্য মাথাভাঙা নদীতে ফেলা বন্ধ করার দাবি উঠেছে বহু দিন আগেই। অবিলম্বে নদীর এই দূষণ বন্ধ করার দাবি উঠেছে অনেক আগেই। রানাঘাটের চিকিৎসক প্রদীপ মোহান্তি বলেন, “এক দিন নদীপারেই সভ্যতা গড়ে উঠেছে। আর আজ মানুষ সেই নদীকেই মেরে ফেলছে, এটা যন্ত্রণার। নদী পরিষ্কার রাখা হচ্ছে না। একটা জীবন্ত নদীর খেয়াল যদি আমরা না রাখি, সে একটা মৃত নদীতে পরিণত হবে। এটা সকলের কাছেই সঙ্কটের।”
কিন্তু যেহেতু দূষিত জল আসছে পড়শি দেশের কারখানা থেকে, তাই স্থানীয় স্তরে এর সমাধান সম্ভব নয়। কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিত বিশ্বাস বলেন, “চূর্ণী দূষণের সমস্যা বাড়ছেই। কেন্দ্রের উচিত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলা। বাংলাদেশে যেখানে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, সেখানে একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানোর দাবি আমরা কেন্দ্রের কাছে জানিয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলুক। কিন্তু কোনও সদুত্তর পাইনি।”
নয়ের দশকেই গড়ে উঠেছে ‘মাথাভাঙা চূর্ণী বাঁচাও কমিটি’। সেই সময়েই পোস্টকার্ডে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সমস্যার কথা জানানো হয় সংস্থার তরফে। এর পরে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ মন্ত্রক, প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতিকেও সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসার জন্য আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
গত দু’বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একাধিক বার আবেদনের পাশাপাশি গণ-স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। আবেদন করা হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছেও। কিন্তু চূর্ণীর সমস্যা সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে।
অগত্যা ‘বাঁচাও কমিটি’ জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। সংস্থার তরফে স্বপন ভৌমিক বলেন, “৭০ সাল থেকে চূর্ণীর দূষণের সমস্যা বেড়ে গেছে। আগে বছরে দু’তিন বার বর্জ্য ফেলত বাংলাদেশের চিনিকল। এখন তা নিয়মিত ফেলা হয়। আমরা প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দফতর, রাজ্য সরকারের কাছেও সমাধানের আর্জি জানিয়েছি। তবে এখনও ফল হয়নি। কেন্দ্র এখন রাজ্যের ঘাড়ে ঠেলছে।”
তাঁরাও দাবি তুলেছেন, দর্শনার কারখানায় বর্জ্য নিরোধক প্ল্যান্ট বসানোর। আগামী অক্টোবর থেকেই এই নিয়ে আন্দোলন আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা। ওই কমিটির সঙ্গে আরও বেশ কিছু পরিবেশপ্রেমী সংগঠন একত্রিত হয়ে ২ থেকে ৪ অক্টোবর গেদে থেকে রানাঘাট সাইকেল যাত্রার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। নানা জায়গায় সভা এবং স্লাইড শো করে নদী বাঁচাতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানানো হবে।
শুধু ব্যাপক প্রচারই নয়। চূর্ণীর দূষণের জেরে মৎস্যজীবীরা যে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরাম। তবে শেষমেশ কবে কর্তাদের তা কর্ণগোচর হবে, কেউ জানে না। অনেক জলই তো বইল, দু’দেশের সরকার কবে এগিয়ে এসে চূর্ণীর স্বচ্ছ সুদিন ফিরিয়ে দেয়, তার অপেক্ষায় আছেন নদীতীরের আপামর মানুষ।
সময় যত যাচ্ছে, জেদও বাড়ছে।
(‌শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন