সরকারি টাকা আসেনি, মার্কশিট আটকাল স্কুল

স্কুল-পড়ুয়া তফসিলি জাতি ও জনজাতির ছাত্রছাত্রীদের জন্য হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করার বৃত্তি জোগায় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু বীরভূমের অন্তত ৮২টি স্কুলের দেড় হাজারেরও বেশি গরিব পড়ুয়া সেই বৃত্তি পায়নি। গত এক বছর ধরে বৃত্তির টাকা তাদের হাতে না আসায় হস্টেলের খরচ জুগিয়েছে স্কুল। মাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা হস্টেল ছাড়তে গেলে এখন অনেক স্কুলই সেই টাকা ফেরত চাইছে।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

মুরারই শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০৩:৪৪
Share:

স্কুল-পড়ুয়া তফসিলি জাতি ও জনজাতির ছাত্রছাত্রীদের জন্য হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করার বৃত্তি জোগায় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু বীরভূমের অন্তত ৮২টি স্কুলের দেড় হাজারেরও বেশি গরিব পড়ুয়া সেই বৃত্তি পায়নি।

Advertisement

গত এক বছর ধরে বৃত্তির টাকা তাদের হাতে না আসায় হস্টেলের খরচ জুগিয়েছে স্কুল। মাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা হস্টেল ছাড়তে গেলে এখন অনেক স্কুলই সেই টাকা ফেরত চাইছে। গরিব ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশই তা দিতে পারছে না।

বকেয়া টাকা দিতে না-পারায় মুরারই গৌরাঙ্গিনী বালিকা বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল ইতিমধ্যে ছাত্রীদের মাধ্যমিকের মার্কশিট আটকে দিয়েছে। ফলে, ওই ছাত্রীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফর্ম তুলতে পারছে না। বাধ্য হয়ে জেলাশাসক ও স্কুল পরিদর্শকের (মাধ্যমিক) কাছে লিখিত আবেদন করেছে ওই ছাত্রীরা। ময়ূরেশ্বরের নামোকাঁদা গ্রামের রানি মণ্ডল, অপর্ণা মণ্ডল, সুচরিতা মণ্ডলেরা বলে, ‘‘যে স্কুলেই গিয়েছি, বলেছে মার্কশিট ছাড়া ভর্তি নেওয়া যাবে না। হাতে বেশি দিন নেই। আর কি পড়াই হবে না?’’

Advertisement

বীরভূমে স্কুল লাগোয়া ৬১টি এবং স্কুল থেকে দূরে ২১টি থেকে এ রকম হস্টেল রয়েছে। প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত তফসিলি জাতি ও জনজাতির ছাত্রছাত্রীরা সেগুলিতে থাকে। কেন্দ্রীয় ‘প্রিম্যাট্রিক স্কলারশিপ ফর এসসি-এসটি’ বাবদ মাসে তাদের ৭৫০ টাকা বরাদ্দ পাঠায় রাজ্যের অনুন্নত শ্রেণিকল্যাণ দফতর। আগে সোজা স্কুলে টাকা আসত। মুরারইয়ের স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা অন্বেষা দত্ত বলেন, ‘‘গত বছর জুনে জানানো হয়, নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠানো হবে। কিন্তু ছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে টাকা আজও ঢোকেনি। প্রায় লক্ষাধিক টাকা বাকি। বিপুল বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। ওদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতেও অনেক জায়গায় ধার করতে হয়েছে।’’

তা বলে স্কুল মার্কশিট আটকাবে?

অন্বেষাদেবীর যুক্তি, ‘‘ছাত্রীরা স্কুল ছেড়ে চলে গেলে আর টাকা আদায় করা যাবে না। বাধ্য হয়েই এমন সিদ্ধান্ত।’’ তাঁর দাবি, পরীক্ষার আগে ব্লক তফসিলি জাতি ও জনজাতি আধিকারিক, স্কুল পরিচালন কমিটির সম্পাদক, স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান ও অভিভাবকদের উপস্থিতিতে ওই সিদ্ধান্ত হয়। গরিব ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণ অবশ্য আর কোনও স্কুল করেছে বলে খবর নেই। পাইকর আরসিডিএম বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নন্দিনী সিংহ এবং নলহাটির সুলতানপুর নিবেদিতা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় দাস বলেন, ‘‘অমানবিক তো হতে পারি না! তাই মার্কশিট দিয়েছি। ওরা বলেছে, পরে টাকা দিয়ে দেবে।’’

প্রশ্ন হল, কেন সরকারি বরাদ্দ পেল না ছাত্রছাত্রীরা?

অনুন্নত শ্রেণিকল্যাণ দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক কাজল সাহার দাবি, ‘‘২০১৪–১৫ অর্থবর্ষে বৃত্তির সব টাকা পাওয়া যায়নি।’’ জেলা মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক মহাদেব সোরেনের দাবি, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে তাঁর মতে, মার্কশিট আটকানো উচিত হয়নি। বারবার চেষ্টা করা হলেও জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী ফোন ধরেননি ।

ফোন ধরেননি সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী উপেন বিশ্বাসও। দফতরের এক কর্তা অবশ্য দাবি করেন, এক মাত্র স্কুলের তরফে ঠিক সময়ে আবেদন করা না হলে টাকা আটকে যেতে পারে। তা বাদে রাজ্যে কোথাও বৃত্তির টাকা বাকি নেই। মুরারইয়ের স্কুলটির পরিচালন কমিটির সম্পাদক আসরাফ আলি এবং প্রধান শিক্ষিকা অবশ্য এই বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ঠিক সময়েই সমস্ত নথি-সহ আবেদন করা হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, বীরভূমের ৮২টি স্কুলই কি তবে দেরি করে আবেদন জানিয়েছিল?

এই প্রশ্নের জবাব মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন