দুপুরের খাবার থেকে নানান সরকারি সুযোগ-সুবিধার বন্দোবস্ত হয়েছে। স্কুলের সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু ক্রমশই কমে চলেছে পড়ুয়ার সংখ্যা!
সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলে মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির হার কমতে থাকায় এবং স্কুলছুটের অনুপাত বেড়ে যাওয়ায় রাজ্য সরকার চিন্তিত। এই সমস্যার গভীরে পৌঁছে তার সমাধান করতে সম্প্রতি স্টেট কাউন্সিল ফর এডুকেশনাল অ্যান্ড ট্রেনিং বা এসসিইআরটি-কে দায়িত্ব দিয়েছে স্কুলশিক্ষা দফতর।
ওই দফতরের এক কর্তা জানান, সরকার সব রকমের সুযোগ-সুবিধা দিয়েও স্কুলছুটে লাগাম পরাতে পারছে না। গত বছর মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তাদের বৈঠকে রাজ্যকে ‘অ্যাপ্রাইজাল রিপোর্ট অব অ্যানুয়াল ওয়ার্ক প্ল্যান অ্যান্ড বাজেট ২০১৭-২০১৮’ দেয় কেন্দ্র। তাতে দেখা যায়, ২০১৫-’১৬ এবং ২০১৬-’১৭ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু কমে গিয়েছে পড়ুয়ার সংখ্যা। ওই শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরে স্কুলছুটের সংখ্যাও বেড়েছে।
সর্বশিক্ষা মিশন প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক স্তরের স্কুলছুটের সমীক্ষা করলেও সাম্প্রতিক অতীতে মাধ্যমিক স্তরে স্কুলছুট নিয়ে কোনও সমীক্ষা হয়নি বলে জানান এক শিক্ষাকর্তা। তিনি আরও জানান, কোনও ক্ষেত্রেই সমস্যা সমাধানে পরামর্শ চাওয়া হয় না। এ বার চিত্র অনেকটাই আলাদা। মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠকে এই সমস্যার কারণ খুঁজে সমাধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তাই এসসিইআরটি-কে দিয়ে এ বারেই প্রথম সমীক্ষা করিয়ে তাদের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।
স্কুলের রাস্তা ছাড়ছে যারা
২০১৫-’১৬ ২০১৬-’১৭
• অষ্টম থেকে নবমে ভর্তি ৮৩.৫৬ % ৮০.২১%
• মাধ্যমিক স্তরে স্কুলছুট ১৮.৫৯% ২৩.৬৭%
সূত্র: মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অ্যাপ্রাইজাল রিপোর্ট অব অ্যানুয়াল ওয়ার্ক প্ল্যান অ্যান্ড বাজেট ২০১৭-’১৮
এসসিইআরটি-র এক কর্তা জানান, তাঁরা মূলত কাজ শুরু করবেন অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিকে নিয়ে। সব জেলার কিছু স্কুলকে চিহ্নিত করে সেখানকার কর্তৃপক্ষ, ওই সব শ্রেণির পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকদের বক্তব্য শোনা হবে। প্রশ্নোত্তর পর্বের জন্য কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তার ভিত্তিতে স্কুলের সুযোগ-সুবিধা, পাঠ্যক্রমের উপকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে তাঁদের মত জানার চেষ্টা হবে।
হিন্দু স্কুলের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তুষারকান্তি সামন্ত বলেন, ‘‘অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে পড়াশোনা চালাতে পারলেও অনেকে তার পরে আর পড়াতে পারছেন না। পড়ুয়া কমতে থাকার এটা একটা কারণ।’’ ওই স্তরে পাশ-ফেল থাকাটাও একটা কারণ বলে মনে করেন তিনি। প্রতীচী ট্রাস্টের রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর ও ফেলো সাবির আহমেদ জানান, অষ্টম শ্রেণির পরে হঠাৎই পাঠ্যক্রম কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ভারসাম্য থাকছে না। পড়ুয়ারা আগ্রহ হারাচ্ছে। স্কুলে পঠনপাঠনের ঘাটতির ফলে বাড়ছে গৃহশিক্ষক-নির্ভরতা। তাতে যে-টাকা লাগে, সেটা জোগানোর সামর্থ্য না-থাকায় অনেক পরিবার পিছিয়ে আসছে। তবে স্কুলশিক্ষা দফতর মনে করে, পাঠ্যক্রম বিজ্ঞানসম্মত।
এসসিইআরটি-কে এই সব দিক যাচাই করে তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার উপরে ভিত্তি করেই পদক্ষেপ করবে রাজ্য সরকার।
সম্প্রতি রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশনের রিপোর্ট দেখাচ্ছিল, তফসিলি জাতি ও জনজাতির ক্ষেত্রে স্কুলছুট বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। তার উপরে মাধ্যমিক স্তরে রাজ্যের প্রায় সব স্কুলে কমবেশি এই চিত্র ফুটে ওঠায় চিন্তায় সরকার।