স্কুলে সহ-প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)-দের হাত থেকে নিজেদের হাতে নিল স্কুলশিক্ষা কমিশনারেট। সম্প্রতি বিকাশ ভবনে কমিশনারেট এই মর্মে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। শিক্ষামহলের একাংশের মতে, উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিট হাইস্কুলের ঘটনার জেরেই এই পদক্ষেপ করেছে সরকার। বিকাশ ভবনের কর্তারা অবশ্য এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
কমিশনারেটের এক কর্তা জানান, চলতি বছর মার্চে সরকার যে স্কুলশিক্ষা আইন সংশোধন করেছে সেখানে প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব সহ-প্রধান শিক্ষককেই দেওয়া হয়েছে। সে কারণে সহ-প্রধান শিক্ষক পদের গুরুত্ব বেড়ে গিয়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু তারপর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বহু স্কুল থেকে অভিযোগ আসতে শুরু করে। কোথাও কোথাও রাতারাতি নিয়ম না মেনেই পছন্দের কাউকে সহ-প্রধান শিক্ষক করে একেবারে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষিকা করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন পরিচালন সমিতির সভাপতিদের বিরুদ্ধে। ডিআইদের কাছে অভিযোগ জানিয়েও লাভ না হওয়ায় বহু স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিকাশ ভবনে অভিযোগ করেন। তারপরে ডিআইদের কড়া হওয়ার বার্তাও দেন কর্তারা। কিন্তু তাতেও বিশেষ কাজ হয়নি বলেই শিক্ষামহলের দাবি।
এর পরেই উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাড়িভিট হাইস্কুলের গোলমালের ঘটনা ঘটে। ওই স্কুলে শিক্ষক নিয়োগকে ঘিরে গোলমাল ও দু’জনের মৃত্যুর পরে নড়েচড়ে বসে দফতর। গত সেপ্টেম্বরে বিকাশ ভবনে স্কুলশিক্ষা দফতরের কর্তা ও ডিআইদের সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে ঠিক হয় স্কুল থেকে পাওয়া শিক্ষকদের শূন্য পদের তালিকা পৌঁছবে ডিআই-এর কাছে। তা দেখাতে হবে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক ও স্কুলশিক্ষা কমিশনারেটে। অর্থাৎ শূন্যপদের তালিকাও কমিশনারেটকে না জানিয়ে তৈরি করতে পারবেন না ডিআইরা। এ বার এক ধাপ এগিয়ে সহ-প্রধান শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতাও কেড়ে নেওয়া হল।
সাধারত সহ-প্রধান শিক্ষকদের অনুমোদন দিত ডিআই। কিন্তু গোটা প্রক্রিয়া পরিচালনা করত স্কুল নিজেই। ফলে গোটা প্রক্রিয়ায় স্কুলশিক্ষা দফতর অন্ধকারে থাকত বলে বিকাশ ভবন সূত্রে খবর। এখন সমস্ত কিছুতে নজর রাখতেই এই পদক্ষেপ করা হল বলেই মত দফতরের কর্তাদের।
প্রথমে পরিচালন সমিতির সম্মতিক্রমে প্রধান শিক্ষক সহ-প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। তার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা আবেদন করেন। এর পরে চার-পাঁচ সদস্যের একটি সিলেকশন কমিটি গঠন করে স্কুল। যেখানে দু’জন বাইরের প্রতিনিধিও রাখা হয়। এর পরে সহ-প্রধান শিক্ষকের জন্য বেছে নেওয়া নাম সংশ্লিষ্ট ডিআইকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে অনুমোদন মেলে। এখন থেকে সেই নাম পাঠাতে হবে বিকাশ ভবনে স্কুলশিক্ষা কমিশনারেটে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডিআই বলেন, ‘‘এতে ভালই হল। ‘অযাচিত’ চাপ কমবে।’’ যদিও সরকারের এই পদক্ষেপকে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রয়াস হিসেবেই দেখছে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি। সংগঠনের সহ সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ না হলে কোনও কিছুর সুফল পাওয়া যায় না। সমস্ত কিছুতে যে ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হচ্ছে তার ফলে গোটা প্রক্রিয়াই দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে।’’