কোর্টে তিরস্কৃত এসএসসি-কর্তা

আদালতের নির্দেশ না-মানায় এবং নিয়োগ মামলা নিয়ে টালবাহানা করায় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট।দীর্ঘদিন ধরে অনেক মামলার জট কাটিয়ে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের রাস্তা খুলেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭ ০৩:২০
Share:

আদালতের নির্দেশ না-মানায় এবং নিয়োগ মামলা নিয়ে টালবাহানা করায় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরে অনেক মামলার জট কাটিয়ে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের রাস্তা খুলেছে। কিন্তু এসএসসি বিভিন্ন মামলার নিষ্পত্তিতে উদ্যোগী না-হওয়ায় উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ বন্ধ রয়েছে বলে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ। এসএসসি-কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বিচারপতি রাজীব শর্মা বৃহস্পতিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ভর্ৎসনা করেন এসএসসি-র চেয়ারম্যানকে।

‘‘আপনাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার খেসারত দিতে হচ্ছে মামলাকারীদের। আপনারা আদালতের নির্দেশ মানছেন না। বিচারের কাজে দেরি হচ্ছে,’’ এসএসসি-র চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে বলেন বিচারপতি শর্মা।

Advertisement

বিচারপতির তিরস্কারের মুখে সুবীরেশবাবু আশ্বাস দেন, তাঁর দফতর আদালতের নির্দেশ মানবে।

শিলাদিত্য সরকার নামে বাঁকুড়ার এক বাসিন্দা ২০১৫ সালের উচ্চ প্রাথমিক টেট পাশ করেও নিয়োগপত্র পাননি। ওই প্রার্থীর আইনজীবী মনসারাম মণ্ডল জানান, তাঁর মক্কেল সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। ২০১৩ সালে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। তাতে বলা হয়, ‘এগ্‌জেমটেড ক্যাটিগরি’‌তে প্রাক্তন জওয়ানদের ‘ছাড়’ দেওয়া হবে। ২০১৬ সালে উচ্চ প্রাথমিকের ফল বেরোয়। টেট-উত্তীর্ণ শিলাদিত্য ইন্টারভিউয়ের ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে দেখেন, তাতে তাঁর মতো প্রার্থীদের জনিয ‘ছাড়’-এর কোনও উল্লেখই নেই। কেন নেই, কোথাও তার সদুত্তর না-পেয়ে শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টে মামলা করেন ওই প্রাক্তন ফৌজি।

উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বিভিন্ন মামলার শুনানিতে বিচারপতি শর্মাও এসএসসি-র কাছে জানতে চান, কী কারণে ‘ছাড়’ দেওয়া হবে না। শিলাদিত্যের অন্য আইনজীবী অনিন্দ্যসুন্দর দাস জানান, এসএসসি-কর্তৃপক্ষ এর জবাব দিতে পারেননি। হাইকোর্ট হলফনামা দিতে বলে এসএসসি-কে। ১৭ মার্চ হলফনামা পেশ করার কথা ছিল। কিন্তু তা নির্দিষ্ট তারিখে জমা না-পড়ায় চেয়ারম্যানকে তলব করে আদালত।

সুবীরেশবাবু এ দিন আদালতে হাজির হয়েছেন দেখে বিচারপতি শর্মা তাঁর বিরুদ্ধে নির্দেশ না-মানা এবং মামলা নিয়ে টালবাহানা করার অভিযোগ তোলেন। এসএসসি-প্রধানের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আপনাদের বক্তব্য জানানোর জন্য এক জন দক্ষ অফিসারকে নিযুক্ত করছেন না কেন? আপনাদের অকারণ দেরির জন্য এত জন প্রার্থীর ভবিষ্যৎ ঝুলে থাকবে? তাঁদের হয়রানি বন্ধ হবে না? নিয়োগের মেধা-তালিকাও প্রকাশ হবে না?’’ চেয়ারম্যান জানান, আদালতের নির্দেশ মেনে তাঁরা এক জন অফিসারকে নিযুক্ত করবেন।

চেয়ারম্যানের কৌঁসুলি এ দিন আদালতে হলফনামা জমা দিয়ে জানান, ২০১৬ সালে নিয়োগ নিয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে, কোনও রকম ‘ছাড়’ মিলবে না। আবেদনকারীর আইনজীবী অনিন্দ্যসুন্দর পাল্টা সওয়ালে বলেন, ছাড়ের ব্যাপারে ২০১৩ সালে যে-বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল, এ ক্ষেত্রে সেটাই ধর্তব্য।

দু’পক্ষের সওয়াল শুনে হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, এক সপ্তাহের মধ্যে এই বিষয়ে এসএসসি-র হলফনামার পাল্টা হলফনামা জমা দিতে হবে আবেদনকারী প্রার্থীকে। তার পরে মূল মামলার শুনানি হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন