মিংমার জন্য ভয় নেই চিতাবাঘেও

স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাস্টারমশাইদের জন্য অপেক্ষা করে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মিংমা। সকাল ১০টায় স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষক উত্তম ছেত্রী। ঢুকেই বারান্দায় টাঙানো ঘন্টা ঢং ঢং করে বাজিয়ে দেন। ব্যস, ক্লাস শুরু। মিংমা বেঞ্চে বই খুলে বসে।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৭ ০৪:৫০
Share:

মনোযোগী: ক্লাসরুমে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে মিংমা। নিজস্ব চিত্র।

স্কুলটা ঠিক ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো। রূপকথার গল্পও বলা যায়। চার পাশে ঘন সবুজ পাইন বন। আকাশ নীল থাকলে বারান্দায় দাঁড়ালে দূরে দেখা যায় বরফঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা। পাহাড়ের কোলে কাঠের তৈরি ছোট্ট স্কুলের ক্লাসরুমে কখনও ঢুকে পড়ে পেঁজা তুলো মেঘ!

Advertisement

এমন স্কুলে পড়ুয়া সাকুল্যে এক জন। বছর আটেকের মিংমা গেচক শেরপা। জঙ্গলের পথে হেঁটে রোজ সেই স্কুলে পৌঁছন দুই শিক্ষক।

শুধু মিংমার জন্যই।

Advertisement

স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মাস্টারমশাইদের জন্য অপেক্ষা করে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র মিংমা। সকাল ১০টায় স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষক উত্তম ছেত্রী। ঢুকেই বারান্দায় টাঙানো ঘন্টা ঢং ঢং করে বাজিয়ে দেন। ব্যস, ক্লাস শুরু। মিংমা বেঞ্চে বই খুলে বসে।

দার্জিলিং থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলঘেরা ছোট্ট গ্রাম চটকপুর। সেখানেই চটকপুর ফরেস্ট প্রাইমারি স্কুল। মিংমাকে পড়ান উত্তমবাবু ও কুমার রাই। ৭ কিলোমিটার দূরের সোনাদা থেকে হেঁটে স্কুলে আসেন তাঁরা। চটকপুরের জঙ্গলে রয়েছে চিতাবাঘ, ভালুক। তাতে ভয় নেই শিক্ষকদের। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘জঙ্গলে যে কোনও সময় চিতাবাঘ হামলা করতে পারে। কিন্তু স্কুল কামাই করি না। কোনও দিন মিংমা না এলে মন খারাপ হয়ে যায়। সারা দিন স্কুলে কোনও কাজ ছাড়া বসে বাড়ি ফিরে যেতে হয়।’’

চটকপুর গ্রামে থাকেন ৯২ জন। স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ থাপা বলেন, ‘‘এক সময় ওই স্কুলে ২০-২৫ জন পড়ত। গ্রামের লোকসংখ্যা কমে গিয়েছে। মিংমার বয়সী মাত্র তিনটে ছেলে রয়েছে। দু’জন পড়তে যায় সোনাদায়।’’ চটকপুরের এক মাত্র প্রাথমিক স্কুলের ছাত্র মিংমাকে ভালবাসে গোটা গ্রাম। ‘ভিআইপি’ মিংমার আবদার মেটাতে ব্যস্ত থাকেন সবাই। তার জন্য মিড ডে মিলও তৈরি হয়। কুমার রাই বলেন, ‘‘মিংমার মা সুশীলা শেরপাই ছেলের মিড ডে মিল রান্না করে দেন।’’ মিংমা বলে, ‘‘পড়ার ফাঁকে আমার সঙ্গে খেলাও করেন স্যররা। গল্পও শোনান।’’

আগামী বছর ওই স্কুল থেকে পাশ করবে মিংমা। চলে যেতে হবে অন্য স্কুলে। তার পর কী হবে ৬০ বছরের পুরনো ওই প্রাথমিক স্কুলের? প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘আশপাশের গ্রামে প্রাথমিক স্কুলে পড়ার মতো কোনও ছাত্র রয়েছে কি না, তা খুঁজতে হবে।’’

পড়ুয়া না মিললে স্কুলের কী হবে, তার উত্তরই এখন খুঁজছে চটকপুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন