সমাবর্তনে ‘জল’ ঢেলেছে সুরক্ষাই, মত বিশ্বভারতীর

এক দিকে যেমন জলের জোগান ঠিক রাখতে না পারার জন্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার ফাঁসকেই দায়ী করছেন, তেমনই আবার প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে বিভ্রাট ঘটার জন্য সেই নিরাপত্তার ফস্কা গেরোর কথাই আসছে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৮ ০৪:৪০
Share:

কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। ফাইল চিত্র।

শান্তিনিকেতন তৈরির সময়েই সেখানকার জলকষ্ট টের পেয়েছিলেন কবিগুরু। প্রায় শতবর্ষ পরে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ হয়ে উঠে এল সেই জলকষ্টই!

Advertisement

সমাবতর্নের অনুষ্ঠানস্থলে পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা না থাকার ফলেই সে দিন বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছিল বলে অভ্যন্তরীণ তদন্তে খুঁজে পেয়েছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তাঁদের হিসেবে, পাঁচ বছর সমাবর্তন না হওয়ার ফলে এ বার প্রাক্তনী, ছাত্র-ছাত্রী মিলিয়ে আমন্ত্রিতের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি ছিল। তদন্তে দেখা গিয়েছে, গ্রীষ্মের সকালে ওই অনুষ্ঠানের জন্য মোট ১২ হাজার জলের পাউচের বরাত দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ছ’হাজার পাউচ আম্রকুঞ্জ প্রাঙ্গণে ঢুকেছিল। সকাল থেকে জড়ো হওয়া ভিড়ে যা অচিরেই নিঃশেষ হয়ে যায়। বাকি ৬ হাজার পাউচ নিরাপত্তার কড়াকড়ি এবং ভিড়ের চাপে ভিতরে ঢোকানো যায়নি। জল না পেয়েই অশান্ত হয়ে ওঠেন ছাত্র-ছাত্রীরা।

এক দিকে যেমন জলের জোগান ঠিক রাখতে না পারার জন্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তার ফাঁসকেই দায়ী করছেন, তেমনই আবার প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে বিভ্রাট ঘটার জন্য সেই নিরাপত্তার ফস্কা গেরোর কথাই আসছে। গত ২৫ মে সমাবর্তন শেষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নামতে যাওয়ার ঠিক আগে মঞ্চে উঠে তাঁকে প্রণাম করে একটি ছবি তাঁর হাতে দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। পরে জানা যায়, স্বপন মাঝি নামে ওই ব্যক্তি ভদ্রেশ্বরের বাসিন্দা। এসপিজি-র উপস্থিতিতে কী ভাবে এক আগন্তুক নিরাপত্তার ফাঁক গলে মঞ্চে উঠে গেলেন, তা নিয়ে নড়েচ়ড়ে বসেছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতরও। তার পরে জেলা পুলিশ-প্রশাসন এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের তরফে বিশ্বভারতীতে গিয়ে দফায় দফায় ওই ঘটনা সম্পর্কে খোঁজখবর করা হয়েছে। সে দিনের অনুষ্ঠানের যাবতীয় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্বভারতী তুলে দিয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের হাতে। এখন সেই ফুটেজ এসপিজি-র কাছে।

Advertisement

বিশ্বভারতীর এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রতি ফটকে আমন্ত্রণপত্র বা নিরাপত্তার পাস দেখেই প্রত্যেককে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মঞ্চে ওই ব্যক্তি উঠে প়ড়লেন কী ভাবে, এই ব্যাপারে আমাদের কারও কোনও ধারণা নেই। সম্ভবত, ওঁর সই নেওয়ার নেশা আছে। যা যা ফুটেজ ছিল, আমরা তদন্তকারীদের দিয়েছি।’’

সমাবর্তনের দিন জলের হাহাকার এমনই চেহারা নিয়েছিল যে, আচার্য হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মোদী সেই অসুবিধার ‘দায়’ নিয়ে ছেলেমেয়েদের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। আচার্যের ওই মন্তব্যের পরে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ তাঁদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে অনুষ্ঠানের গোটা ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখেছেন। তাঁদেরও মনে হয়েছে, জল না থাকার জেরেই সমাবর্তনস্থলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেনের কথায়, ‘‘জলের সমস্যাটা ছাড়া আয়োজকদের দিক থেকে আর তেমন কোনও গাফিলতি দেখা যায়নি।’’

শান্তিনিকেতনের ‘সাধু, সাধু’ ধ্বনির রেওয়াজ ভেঙে হাততালি-সিটি বা সমাবর্তনে ‘মোদী, মোদী’ স্লোগান প্রতিষ্ঠানের ‘পবিত্রতা’ নষ্ট করেছে বলে বিতর্ক হয়েছে। এই ঘটনার থেকে অবশ্য ব্যবস্থাপনার দিকটি আলাদাই রাখছেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন