নিজস্বী-নেশায় মৃত্যু আইআইটি অধ্যাপকের

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বর্ষার জলে ভরা সুদৃশ্য পাথর-খাদানের সামনে দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়ের সঙ্গে মোবাইলে ছবি তুলছিলেন ওই অধ্যাপক। খাদানের ধারে ছেলেকে নিয়ে বসে জয়দীপ যখন নিজস্বী তুলছিলেন, তখনই জলে পড়ে যায় ছেলে উড়ান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ০৩:২৭
Share:

জয়দীপ ভট্টাচার্য

নিজস্বী তোলার হুজুগে কখনও প্রাণ যাচ্ছে ট্রেনের তলায় পিষে, কখনও পাহাড় থেকে পড়ে। তবু সচেতনতা ফিরছে না। নিজস্বীর নেশায় এ বার বলি খড়্গপুর আইআইটি-র এক তরুণ অধ্যাপক।

Advertisement

রবিবার আইআইটি-র কাছে হিজলি কলেজ সংলগ্ন খড়্গপুর গ্রামীণ থানার মোরাম খাদানের জমা জলে পড়ে মারা যান জয়দীপ ভট্টাচার্য (৩৯) নামে ওই অধ্যাপক। আসানসোলের বার্নপুরের বাসিন্দা জয়দীপ আইআইটি-র মহাসাগর ও নৌ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। থাকতেন আইআইটি-র ‘এ টাইপ’ কোয়ার্টারের কাজুবাগান এলাকায়। এ দিন বছর আড়াইয়ের মেয়ে শিরিন ও আট বছরের ছেলে উড়ানকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আর ফিরলেন না।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বর্ষার জলে ভরা সুদৃশ্য পাথর-খাদানের সামনে দাঁড়িয়ে ছেলেমেয়ের সঙ্গে মোবাইলে ছবি তুলছিলেন ওই অধ্যাপক। খাদানের ধারে ছেলেকে নিয়ে বসে জয়দীপ যখন নিজস্বী তুলছিলেন, তখনই জলে পড়ে যায় ছেলে উড়ান। তাকে বাঁচাতে গিয়ে অধ্যাপক নিজেও জলে পড়ে যান। স্থানীয় দুই মহিলা এসে উড়ানকে উদ্ধার করেন। তবে জয়দীপ তলিয়ে যান। দীর্ঘক্ষণের চেষ্টার পরে জয়দীপের দেহ উদ্ধার হয়। খবর পেয়ে পৌঁছয় পুলিশ। ঘটনাস্থলে যান আইআইটি-র নিরাপত্তারক্ষী ও অন্য অধ্যাপকেরাও।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “বহুদিনের পুরনো জল ভরা একটি মোরাম খাদানের ধারে ছেলেকে নিয়ে সেলফি তুলছিলেন ওই অধ্যাপক। তখনই জলে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। একজন আইআইটি-র অধ্যাপক, সেলফি তুলতে গিয়ে প্রাণ হারালেন এটা ভেবে খারাপ লাগছে। এটা সচেতনতার অভাব ছাড়া কিছু নয়।” ঘটনার কথা শুনে এ দিন হাসপাতালে যান তৃণমূলের জেলা নেতা জহরলাল পাল। তিনি বলেন, “এলাকায় খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ছেলেকে নিয়ে সেলফি তোলার সময়ে পড়ে গিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ভাবতে খারাপ লাগছে আইআইটির একজন অধ্যাপককে এ ভাবে সেলফির নেশায় প্রাণ দিতে হল।”

দুপুরে স্ত্রী মহুয়া ভট্টাচার্যের কাছে জয়দীপের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছয়। তবে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জয়দীপের পরিজনেরা। তাঁর ছেলেমেয়ের দেখভালের দায়িত্বে থাকা পরিচারিকা মৌমিতা ভট্টাচার্য শুধু বলেন, “প্রতি শনি ও রবিবারই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কাছেপিঠে ঘুরতে যেতেন দাদা। কী ভাবে যে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছি না।” এ প্রসঙ্গে আইআইটি-র রেজিষ্ট্রার প্রদীপ পাইনের বক্তব্য, “জয়দীপবাবুর মৃত্যু খুব দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন