ধৃত লগ্নি কর্তাদের মধ্যে এক জন। সোমবার স্নেহাশিস ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
দু’টি তুলনায় পুরনো নাম। একটি অপেক্ষাকৃত নতুন। অন্তত আর্থিক কেলেঙ্কারির নিরিখে। সোমবার, একই দিনে ওই তিনটি বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার মধ্যে দু’টির সাত জন ডিরেক্টর গ্রেফতার হলেন কেন্দ্র ও রাজ্যের গোয়েন্দাদের হাতে। তৃতীয় সংস্থাটির কেউ এ দিন গ্রেফতার না-হলেও তাদের দফতরে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথিপত্র আটক করা হয়েছে।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার সময়েই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, অন্যান্য বেসরকারি লগ্নি প্রতিষ্ঠানেও তদন্ত চালাতে হবে ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে। এ দিন উইন রিয়েলকন নামে একটি লগ্নি সংস্থার পাঁচ জন ডিরেক্টরকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আর অর্থ লগ্নি সংস্থা আইকোরের দুই ডিরেক্টরকে গ্রেফতার করেছেন সিআইডি-র অফিসারেরা। দুই তদন্তকারী সংস্থারই অভিযোগ, নানান প্রলোভন দেখিয়ে, প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমানতকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছিল উইন রিয়েলকন এবং আইকোর। কিন্তু বেশির ভাগ আমানতকারীই টাকা ফেরত পাননি বলে অভিযোগ। এর মধ্যে উইন রিয়েলকনের নাম এর আগে বিশেষ আসেনি। তবে আইকোরের কর্ণধার-সহ কিছু কর্তা ধরা পড়েছেন আগেই।
ওই দুই লগ্নি সংস্থার কর্তাদের এ দিন পাকড়াও করা হয়েছে দু’ভাবে। রিয়েলকনের কর্তাদের গ্রেফতার করা হয় রীতিমতো তলব করে। আর নিজেদের সংস্থার একটি উদ্যোগ পরিদর্শনে বেরিয়ে পাকড়াও হন আইকোরের দুই ডিরেক্টর।
সিবিআই জানায়, উইন রিয়েলকন সংস্থার ধৃত ডিরেক্টরদের নাম মহীতোষ গঙ্গোপাধ্যায়, পার্থপ্রতিম রায়, রাজু দে, জয় ভৌমিক এবং রাজীব দেবনাথ। এই পাঁচ জনের বাড়িতেই আগে তল্লাশি চালান সিবিআই অফিসারেরা। বেশ কিছু নথিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই এ দিন ওই পাঁচ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছিল। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে অসঙ্গতি মেলায় পরে পাঁচ জনকেই গ্রেফতার করা হয়। এ বার তাঁদের হেফাজতে নিয়ে আরও তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে বলে সিবিআই জানায়।
সিআইডি জানায়, আইকোরের দুই ডিরেক্টর সমর মুস্তাফি এবং অরিজি়ৎ সরকার জলপাইগুড়ি থেকে এ দিন দুপুরে ভবানীপুরে তাঁদের সংস্থারই একটি শপিং মলের কাজকর্ম দেখতে এসেছিলেন। সেই সময় তাঁদের পাকড়াও করা হয়। তাঁরা উত্তরবঙ্গে ওই সংস্থার মূল এজেন্টও ছিলেন।
গত জুনে এক আমানতকারী বেলঘরিয়া থানায় আইকোর গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ছ’লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। নভেম্বরে তার তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই ব্যক্তির সঙ্গে মোট ১০ লক্ষ টাকার প্রতারণা করা হয়েছে আইকোর ই-সার্ভিসের নামে। আইকোর গোষ্ঠীর অধীনে আছে ১৯টি সংস্থা। সব ক’টিরই এমডি অনুকূল মাইতি। কলকাতা পুরসভার ভোটের আগের দিন অনুকূলকে তাঁর গল্ফ গ্রিনের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা করে সিআইডি। তার পরেই সংস্থার অন্য কর্তারা গা-ঢাকা দেন।
গোয়েন্দাদের অভিযোগ, শুধু আইকোর নয়, ওই গোষ্ঠীর অধীনে আরও ১৯টি সংস্থা সিকিওরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া বা সেবি-র অনুমতি ছাড়াই মাল্টি ইনভেস্টমেন্ট সিস্টেম, ডিবেঞ্চার, ফিক্সড ডিপোজিট-সহ বিভিন্ন উপায়ে তিন হাজার কোটি টাকা তুলেছিল ২০১০ সাল থেকে। ১২ জন ডিরেক্টরের মধ্যে এ-পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।
সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র অফিসারেরা এ দিন লেক টাউনে এমপিএসের অফিসে হানা দেন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এর আগেও এমপিএসের সম্পত্তি এবং মজুত সামগ্রীর হিসেব প্রস্তুত করতে অভিযান চালিয়েছিল ইডি-সিবিআইয়ের দল। এ দিন ফের তারা এমপিএসের দফতরে যায়। সেই অভিযানের সময় এমপিএসের দুই অধিকর্তা ও কৌঁসুলি হাজির ছিলেন।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এর আগের অভিযানে চাবি-বিভ্রাটকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু সময় নষ্ট হয়েছিল। লেক টাউনে এমপিএসের বন্ধ অফিসের যত চাবি পুলিশের কাছে রয়েছে, সেগুলি দিয়ে সব ঘর খোলা যায়নি। এ দিনও প্রথমে তিনটি ঘরের চাবি খুলতে পারেননি তদন্তকারীরা। বাধ্য হয়ে তিনটি ঘরের তালা ভেঙে তল্লাশি চালান তদন্তকারীরা। ওই অফিস থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।