ঘৃণা, জুলুম রুখতে একজোট শিল্পীরা 

এ শহরে পড়তে আসা পোলিশ তরুণ রাজার ভূমিকায় কলসী বাজিয়ে হুক্কা হুয়া-য় মগ্ন। আবহে বাজছে, ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’! 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৯ ০২:৫৯
Share:

প্রতিবাদের ভাষা: নাটকে যুদ্ধ-জিগিরের বিরুদ্ধে বার্তা। শনিবার বিজয়গড়ে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

সুকুমার রায়ের ‘বোম্বাগড়ের দেশ’টাই যেন উঠে এসেছে ২০১৯-এর কলকাতায়।

Advertisement

কুমড়ো নিয়ে ক্রিকেট খেলতে উদ্যত ‘রাজার পিসি’র ব্যাটটা কে যেন পিছন থেকে টানছেন! এ শহরে পড়তে আসা পোলিশ তরুণ রাজার ভূমিকায় কলসী বাজিয়ে হুক্কা হুয়া-য় মগ্ন। আবহে বাজছে, ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে’!

শান্তিনিকেতন-কলকাতার অনামী শিল্পীদের উপস্থাপনায় এর বাইরে কথা নেই একটাও। এক ফালি গেরুয়া কুমড়ো নিয়ে ক্রিকেটের প্রতীকি ব্যঞ্জনায় ঘিরে-থাকা ভিড়টা হাসিতে সরব। প্রতিবাদের অব্যর্থ ভাষায় একযোগে কলকাতা-দিল্লি-মুম্বই-বেঙ্গালুরু বা করাচি-ওয়াশিংটনের সঙ্গেও মিলে গেল কলকাতা।

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারে ‘আর্টিস্টস ইউনাইট’-বলে ডাক দিয়ে ঘৃণার বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের পক্ষে পথে নেমেছিলেন নানা বয়সের নামী-অনামী শিল্পীরা। শনিবারের বিকেল-সন্ধে জুড়ে বিজয়গড়ের নিরঞ্জন সদনের ভিতর-বাহির সেই যেমন খুশি প্রতিবাদের মাঠ। প্রেক্ষাগৃহের ভিতরে মঞ্চের ক্যানভাসে ডানা মেলা পাখিদের উড়ান হয়ে উঠেছে ভারতের মানচিত্র। গানে-কথায়-শর্টফিল্মে ঘনিয়ে উঠছে প্রতিবাদের ডাক।

বাইরেটায় আবার ‘বসে আঁকো’র ভঙ্গিতে রেখায়-রঙে সরব নামী-অনামী চিত্রশিল্পী। সামনের উঠোনে চলছে পর পর অভিনয়-উপস্থাপনা। হঠাৎ বাংলায় পোস্টার লেখার জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের খোঁজ পড়ল। শহরের নানা এলাকায় স্থাপনা-শিল্পের প্রকল্পে যুক্ত ডানা রায়, সুমনা চক্রবর্তীদের সাহায্যে এগিয়ে এলেন রাজনৈতিক কর্মী সুমন সেনগুপ্ত। ইংরেজি-বাংলায় লেখা পোস্টার দিশা খুঁজছে, আজকের ভারতের কিছু মোক্ষম সঙ্কটে। ‘বিভিন্ন গোষ্ঠীর নামে ভুল ধারণা ভাঙার পথ কোনটা’, ‘ভুয়ো খবর কী ভাবে রুখবেন’ কিংবা ‘ভালবাসার বার্তা কী ভাবে ছড়াবেন’-শীর্ষক কয়েকটা পোস্টার প্রেক্ষাগৃহের সামনেই টাঙানো হয়েছিল। তাতে অনেকেই যে যার মতো মত লিখে গেলেন। মুম্বই থেকে হাজির পরিচিত অভিনেতা জয়ন্ত কৃপালনি এই জমায়েতে কী করছেন? জবাব এল: ‘‘মুম্বইয়ে থাকলেও এই প্রতিবাদেই যেতাম। কলকাতায় আছি, আর কোথায় থাকব!’’ আয়োজকদের তরফে নাট্যকর্মী পাঞ্চালী কর বলছিলেন, ‘‘কোনও নির্দিষ্ট দল বা দেশের কথা প্রতিবাদে বলছি না, আবার বলছিও। যুদ্ধ, হিংসা, শিল্পের কণ্ঠরোধ— সব কিছুর বিরুদ্ধে এই জমায়েত।’’ প্রতিবাদীরা এসেছেন, নিজের তাগিদে। হল-ভাড়া থেকে নানা খরচ— উঠে আসছে নিজেদের দানেই। আজ, রবিবার কিড স্ট্রিটে এবং কাল, সোমবার উত্তর কলকাতার রাজা রামমোহন লাইব্রেরি হলেও দু’টি জমায়েত হওয়ার কথা। নাট্যসমালোচক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধ শক্তি কিন্তু আসলে একজোট, প্রতিবাদীদেরও এককাট্টা থাকতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন