Dengue

নিজের বুদ্ধিতে ডাক্তারি বাড়াচ্ছে ডেঙ্গির বিপদ

মহিলার ডেঙ্গি ধরা পড়েছে এলাইজা পরীক্ষায়। রক্তে প্লেটলেট দেড় লক্ষের কাছাকাছি। ডাক্তারি পরিভাষায় অবস্থা স্থিতিশীল। কিন্তু গোলমাল অন্য জায়গায়। রোগিণীর পেট ফুলে জয়ঢাক।

Advertisement

দেবদূত ঘোষঠাকুর

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:০৬
Share:

ভিড়: বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

চিকিৎসকের সামনে বসা ছ’বছরের ছেলেটির চোখ-মুখ ফুলে গিয়েছে। কালো পায়খানা হচ্ছে। কফের সঙ্গে চাপ চাপ রক্ত। শ্বাস নিতেও কষ্ট।

Advertisement

বাড়ি দক্ষিণ কলকাতার নিম্ন মধ্যবিত্ত এলাকায়। পাঁচ দিন ধরে জ্বর ছেলেটির। রক্ত পরীক্ষা হয়নি। জ্বর হওয়ার পরের দিনই পাড়ার চিকিৎসকের কাছে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি চার দিন পরে রক্ত পরীক্ষা করাতে বলেছিলেন।

রক্ত পরীক্ষা হয়নি, চিকিৎসকের লিখে দেওয়া ওষুধ পড়েনি, অথচ বাড়িতেই তার চিকিৎসা শুরু হয়ে গিয়েছিল! পেঁপে পাতার রস, মুসাম্বির রস দিনে তিন বার। অ্যান্টিবায়োটিক দিনে দু’বার। দিনে তিন লিটার করে জল। পাঁচ দিনের দিন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রোগীকে যখন আনা হল, তখন অবস্থা সঙ্কটজনক।

Advertisement

মহিলার ডেঙ্গি ধরা পড়েছে এলাইজা পরীক্ষায়। রক্তে প্লেটলেট দেড় লক্ষের কাছাকাছি। ডাক্তারি পরিভাষায় অবস্থা স্থিতিশীল। কিন্তু গোলমাল অন্য জায়গায়। রোগিণীর পেট ফুলে জয়ঢাক। ডেঙ্গি ধরা পড়েছে শুনে পরিবার এবং প্রতিবেশীদের পরামর্শে মহিলা দিনে পাঁচ লিটার করে জল খেয়েছেন। তড়িঘড়ি হাসপাতাল। ডেঙ্গির চিকিৎসা নয়, পেট থেকে জল বার করার জন্য।

দক্ষিণ কলকাতার উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের ২৩ বছরের তরুণকে জোর করেই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন চিকিৎসক। এনএসওয়ান পজিটিভ হওয়ার পরে বাড়ির লোকেরাই তাঁকে দিনে তিন লিটার করে জল খাইয়েছেন। পেঁপে পাতার রস আর মুসাম্বির রস ঘণ্টায় ঘণ্টায়। চিকিৎসকের কথায়, ‘‘বাড়িতে থাকলে ডেঙ্গি না হলেও এই চিকিৎসায় সে মারা পড়ত। অকালে গ্যাস্ট্রাইটিস হত। পেট ফুলত। হাসপাতালে থাকুক। এলাইজা পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা না পড়লে ছেড়ে দেব।’’

কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় এ বার যে প্রজাতির ডেঙ্গি হানা দিয়েছে, তাতে এ রকম ‘নিজে নিজে ডাক্তারি’ অনেক ক্ষেত্রেই বিপদ ডেকে
আনছে। এক চিকিৎসকের নিদান, ‘‘এমনিতেই ডেঙ্গির কোনও নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। উপসর্গ এবং রক্তের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসা করতে হয়। ডেঙ্গির যে সব জীবাণু এখন শরীরে ঢুকছে, সেগুলির মতিগতিও অনেক সময়ে বোঝা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় নিজে ডেঙ্গির চিকিৎসা করতে যাওয়াটা আত্মহত্যার সামিল।’’

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, রক্ত বেরোচ্ছে রোগীর বমি-পায়খানার সঙ্গে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের ব্যাখ্যা, ডেঙ্গির জীবাণু খাদ্যনালীতে ঢুকে পাকস্থলী এবং খাদ্যনালীর অন্যান্য অংশের দেওয়ালকে ক্ষইয়ে দেয়। পেঁপে ও মুসাম্বির রস সেই ক্ষয় প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করে। ওই ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ থেকে দ্রুত রক্তপাত শুরু হয়ে যায়। এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘ডেঙ্গির জীবাণু প্রাথমিক ক্ষতিটা করে দেয়। বাকিটা করে পেঁপে ও মুসাম্বির রস। সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই যেগুলি অনেক সময়ে খেতে শুরু করেন রোগীরা।’’

প্রশ্ন উঠেছে এক শ্রেণির চিকিৎসকের চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও। অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের বক্তব্য, রোগী হয়তো জ্বর হওয়ার পরের দিনই চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু ‘পাঁচ দিনের আগে ডেঙ্গি ধরা পড়বে না’ বলে চিকিৎসক অনেক ক্ষেত্রেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন। এখন জ্বর হলে কী করা উচিত বা উচিত নয়— তা নিয়ে সরকারেরও কোনও সচেতনতামূলক প্রচার নেই। নেই চিকিৎসকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ। সব মিলিয়ে জটিল হচ্ছে ডেঙ্গি পরিস্থিতি।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। যেখানে যা দরকার, সেই মতো পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন