লিঙ্গ নির্ধারণ নয়, বোঝাবে পড়ুয়ারা

গ্রামের পাশাপাশি শহুরে শিক্ষিত বাসিন্দাদের মধ্যেও লিঙ্গ নির্ধারণের মতো বেআইনি কাজ নিয়ে সচেতনতা খুব কম। সেই জন্যই স্কুলপড়ুয়াদের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ০৫:১৩
Share:

উপকার পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে ধন্যবাদের কোনও দরকার নেই। পরিবর্তে যদি কিছু করতেই চাও তো আরও তিন জনকে সাহায্য করো।

Advertisement

বলিউডি ছবি ‘জয় হো’-র এই ধাঁচেই স্কুলপড়ুয়াদের মাধ্যমে এ বার লিঙ্গ নির্ধারণের অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা কর্মসূচি চালানোর পরিকল্পনা করছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ভ্রূণহত্যার মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা তুলে ধরতে স্কুলপড়ুয়ারা কতটা সমর্থ হবে? নাকি এই প্রচেষ্টাও নিছক একটি প্রকল্প হয়েই থেকে যাবে?

২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে পুরুষ ও নারীর অনুপাত প্রতি হাজারে সাড়ে ন’‌শো। জন্মের আগে লিঙ্গ নির্ধারণ এবং কন্যাভ্রূণ হত্যার পরিণামেই নারীর সংখ্যা কমছে। গ্রামের পাশাপাশি শহুরে শিক্ষিত বাসিন্দাদের মধ্যেও লিঙ্গ নির্ধারণের মতো বেআইনি কাজ নিয়ে সচেতনতা খুব কম। সেই জন্যই স্কুলপড়ুয়াদের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে।

Advertisement

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, রাজ্যের সব সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের নিয়ে কর্মশালা শুরু হয়েছে। প্রতিটি স্কুলের জনা পাঁচেক পড়ুয়া কর্মশালায় যোগ দিচ্ছে। সেখানে লিঙ্গ নির্ধারণের আইনি খুঁটিনাটি এবং ক্ষতিকারক দিক তুলে ধরা হচ্ছে তাদের সামনে। তারা যাতে স্কুলে গিয়ে অন্য পড়ুয়াদের বিষয়টি জানায়, দেওয়া হচ্ছে সেই নির্দেশও। স্কুলের পাশাপাশি নিজের পাড়াতেও এ বিষয়ে প্রচার চালাবে পড়ুয়ারা। এই প্রচার চালাতে গিয়ে কী ধরনের অভিজ্ঞতা হচ্ছে কিংবা লিঙ্গ নির্ধারণ সম্পর্কে আরও কী ধরনের আলোচনা কর্মশালায় থাকলে সুবিধা হবে, সেই বিষয়ে মতামতও লিখে পাঠাচ্ছে পড়ুয়ারা। ভাল কাজ এবং মতামতের জন্য তাদের পুরস্কার দেওয়ারও ব্যবস্থা করছে স্বাস্থ্য দফতর।

তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশের প্রশ্ন, লিঙ্গ নির্ধারণের মতো জটিল সামাজিক সমস্যা নিয়ে স্কুলপড়ুয়ারা কি খোলামেলা আলোচনা করতে পারবে? ডেঙ্গির মতো সমস্যায় সচেতনতার প্রচার চালাতে গিয়েই নানান জটিল পরিস্থিতিতে পড়েন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেখানে লিঙ্গ নির্ধারণের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে স্কুলপ়ড়ুয়াদের কথা কতখানি গ্রাহ্য হবে, সেই বিষয়ে সংশয় থাকছে ষোলো আনা।

প্রশাসনের অবশ্য দাবি, এর আগে নাবালিকা বিবাহ রুখতে একই ধাঁচে সচেতনতার প্রচার চালিয়ে সাফল্য এসেছে। অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা অদিতিকিশোর সরকার বলেন, ‘‘তরুণ প্রজন্মকে সামাজিক সমস্যা মোকাবিলার কাজে লাগাতে না-পারলে কোনও পরিবর্তন হবে না। স্কুল স্তর থেকে লিঙ্গ নির্ধারণের মতো সামাজিক অপরাধ সম্পর্কে জানতে পারছে, আলোচনা করছে। এর সুফল মিলবে। নতুন প্রজন্মকে এই অপরাধ সম্পর্কে সতর্ক করাই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।’’ অন্য এক স্বাস্থ্যকর্তা জানান, লিঙ্গ নির্ধারণের বেআইনি দিক নিয়ে সচেতনতা প্রসারে স্কুলপড়ুয়াদের কাজে লাগানোটা প্রকল্পের প্রথম ধাপ। ওই পড়ুয়াদের পাশাপাশি নববিবাহিত দম্পতিদের নিয়েও কী ভাবে ভ্রূণহত্যার মতো বিষয়ে কর্মশালা করা যায়, সেই পরিকল্পনাও চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন