Student Politics

স্কুলেই রাজনীতির পাঠ দিতে চায় বাম ছাত্র সংগঠনগুলি, বাড়ছে শাখা, সে তাগিদ নেই তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেসের

সম্প্রতি স্কুল শাখা গঠনকে বেশ ফলাও করে দেখাতে চাইছে বামেরা। কিন্তু তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস— কোনও দলের ছাত্র সংগঠনই নীতিগত ভাবে স্কুলের গণ্ডিতে সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে চায় না।

Advertisement

শোভন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:০১
Share:

বিভিন্ন চাত্র সংগঠনের পতাকা। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে শাসদকদলের ছাত্র সংগঠন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এখন নিরঙ্কুশ। সেখানে হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে বিরোধীরা প্রায় নেই বললেই চলে। সেই প্রেক্ষাপটে স্কুলে স্কুলে ছাত্র সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলি। তাতে যেমন রয়েছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই, তেমনই রয়েছে এসইউসির ছাত্র সংগঠন ডিএসও-ও। বিক্ষিপ্ত ভাবে সিপিআইয়ের ছাত্র সংগঠন এআইইএসএফ-ও সেই কাজ করছে।

Advertisement

কিন্তু স্কুলে স্কুলে ছাত্র সংগঠন গড়ার ব্যাপারে কোনও তাগিদ দেখা যাচ্ছে না তৃণমূল, কংগ্রেস বা বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠনের তরফে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং ছাত্র পরিষদ স্পষ্টই বলছে, স্কুলে রাজনীতির পাঠ দেওয়া তারা সমর্থন করে না। তাই স্কুলে সংগঠন গড়ে তোলার কোনও বিষয় নেই তাদের সাংগঠনিক অভিধানে। সঙ্ঘের ছাত্রশাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ আবার স্কুলে সদস্যসংগ্রহ করে। কিন্তু তাকে সাংগঠনিক কাঠামো দিতে চায় না তারা।

এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছেন, ‘‘গত বার সম্মেলন প্রক্রিয়ার পর রাজ্যে ১৬০০-র বেশি শাখা তৈরি হয়েছিল। যার মধ্যে ছিল ৭০০-র মতো স্কুলশাখা। এবার সেটা বাড়বে।’’ এসএফআইয়ের সাংগঠনিক কাঠামোয় একটি স্কুলে একটিই শাখা হয়। ডিএসও-র ক্ষেত্রে তা নয়। এসইউসির ছাত্র সংগঠনটি আবার স্কুল সংগঠনে ক্লাসভিত্তিক শাখা তৈরি করে। ডিএসও-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌরাঙ্গ খাটুয়ার কথায়, ‘‘গত ‌এক মাস ধরে আমাদের শাখা গঠনের কাজ চলছে। এখনও পর্যন্ত ১৫০০টি স্কুলশাখা তৈরি করা গিয়েছে। এই সংখ্যা আরও বাড়বে।’’

Advertisement

কিন্তু রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল? টিএমসিপির রাজ্য সহ সভাপতি সুদীপ রাহার বক্তব্য, ‘‘আমরা কখনওই স্কুলে সংগঠন করিনি। করার প্রশ্নও নেই। কিন্তু যে বাম সংগঠনগুলি স্কুলে শাখা তৈরি করে সংখ্যাতত্ত্ব হাজির করছে, তাতে তাদের লাভ কী হচ্ছে? বামেরা কি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু করতে পারছে?’’ তৃণমূলের বিরোধী পরিসরে রাজনীতি করছে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদ। কোথাও কোথাও তারা সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জোট গড়ে কলেজের ভোটে লড়ারও পরিকল্পনা করছে। কিন্তু স্কুল সংগঠন নিয়ে বামেদের পথে হাঁটতে চায় না তারা। ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদ বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। তাই আমরা স্কুলে সংগঠন করি না।’’ এবিভিপির দক্ষিণবঙ্গ সাংগঠনিক রাজ্য কমিটির সম্পাদক সঙ্গীত ভট্টাচার্যর কথায়, ‘‘আমরা নবম শ্রেণি থেকে স্কুল পড়ুয়াদের সংগঠনের সদস্য করি। কিন্তু স্কুল স্তরে কোনও শাখা গঠন গড়ার রেওয়াজ আমাদের নেই।’’

চিনা বিপ্লবের পুরোধা মাও জে দং বলেছিলেন, ‘‘গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরো।’’ সেই স্লোগানই সত্তরের দশকে বাংলার রাজনীতিকে আলোড়িত করেছিল। নকশালবাড়ি আন্দোলনের সময়েও ওই একই স্লেগান দিয়েছিলেন চারু মজুমদার। বাম ছাত্র সংগঠনগুলি কি কিছুটা সেই মডেলেই স্কুল দিয়ে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরতে চাইছে? চাইলেও হচ্ছে কোথায়? এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজনের জবাব, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই স্কুল সংগঠনের ফলে আমরা তৈরি সংগঠককে কলেজে পাচ্ছি। কিন্তু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এখন সেই পরিবেশ নেই যে রাজনীতি করা যাবে।’’ ঘরোয়া আলোচনায় অনেক এসএফআই নেতা এ-ও স্বীকার করে নিচ্ছেন, স্কুলে যার মাথায় সংগঠনের মতাদর্শের বুনিয়াদি বিষয় ঢুকিয়ে দেওয়া যাচ্ছে, কলেজে যাওয়ার পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের আর ধরে রাখা যাচ্ছে না।

স্কুলের পড়ুয়াদের রাজনীতির পাঠ দেওয়া ঠিক না ভুল, তা নিয়ে যুক্তি-পাল্টা যুক্তি রয়েছে। ঘটনা হল, বামেরা যখন রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল, তখন রাজ্যের বেশির ভাগ কলেজই ছিল সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের দখলে। সেই সময়ে স্কুল সংগঠনের ব্যাপারে খুব একটা গুরুত্ব দিতেন না জেলা বা স্থানীয় স্তরের ছাত্রনেতারা। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার পরে নানা কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বদলে এলাকাভিত্তিক ছাত্র সংগঠন গড়ায় জোর দিয়েছে তারা। ইদানীং দেখা যাচ্ছে, স্কুল শাখা গঠনকে বেশ ফলাও করে দেখাতে চাইছে বামেরা। কিন্তু তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস— কোনও দলের ছাত্র সংগঠনই ‘নীতিগত’ ভাবে স্কুলের গণ্ডিতে সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে চায় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন