বদলির প্রস্তাবে কর্মী-শ্রমিকদের সাড়া নেই কেন, প্রশ্ন শালিমারে

রাজনীতি বা অন্য কোনও রকম অশান্তি যেখানে বিশেষ থাবা বসাতে পারেনি, হাওড়ার সেই শালিমার পেন্টস কারখানা কেন বন্ধ হল, প্রশ্ন উঠছেই। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, অন্যত্র বদলির প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও এক জন শ্রমিক-কর্মচারীও সেটা মেনে নিলেন না কেন? বস্তুত, এই প্রশ্ন ঘিরেই এখন বিতর্ক তুমুল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:২৩
Share:

শালিমার কারখানার সামনে ভিড় কমছে শ্রমিক-অবস্থানে। —নিজস্ব চিত্র।

রাজনীতি বা অন্য কোনও রকম অশান্তি যেখানে বিশেষ থাবা বসাতে পারেনি, হাওড়ার সেই শালিমার পেন্টস কারখানা কেন বন্ধ হল, প্রশ্ন উঠছেই। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, অন্যত্র বদলির প্রস্তাব দেওয়া সত্ত্বেও এক জন শ্রমিক-কর্মচারীও সেটা মেনে নিলেন না কেন? বস্তুত, এই প্রশ্ন ঘিরেই এখন বিতর্ক তুমুল।

Advertisement

গত ১৪ জুলাই প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মচারীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে শালিমারের এক আধিকারিক লিখেছেন, মার্চে আগুন লাগার পর থেকে কারখানার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ইউনিয়নের সঙ্গে তাঁদের এক সপ্তাহ ধরে আলোচনা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই শ্রমিক-কর্মীদের চাকরির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য বদলির প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের মতামত জানাতে হবে। সংস্থা সূত্রের খবর, তাদের প্রস্তাবে এক জনও সাড়া দেননি।

শালিমার-কর্তৃপক্ষের চিঠির ওই বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য বলে দাবি করেছেন রাজ্যের এক মন্ত্রী এবং তৃণমূল প্রভাবিত ইউনিয়নের নেতারা। শুক্রবার শালিমারের শ্রমিক সংগঠনের সহ-সভাপতি দেবাশিস সেন বলেন, “বদলির ব্যাপারে কারখানা-কর্তৃপক্ষ কোনও দিনই আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেননি। হঠাৎই বদলির প্রস্তাব দিয়ে মাত্র এক দিন উত্তর দেওয়ার সময় দেওয়া হয়েছিল। তাই শ্রমিকেরা কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।”

Advertisement

দেবাশিসবাবুর বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে সুর মিলে যাচ্ছে রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী ও জেলা তৃণমূলের সভাপতি অরূপ রায়েরও। তিনি বলেন, “বদলির ব্যাপারে মালিক পক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করল কোথায়! ওরা তো একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”

কী বলছেন কর্মী-শ্রমিকেরা?

কর্মী-শ্রমিকদের অভিযোগ, বদলির প্রস্তাব দেওয়া হলেও তাতে বেতন বাড়ানোর কোনও কথা ছিল না। এখানে তাঁরা যে-বেতন পান, তাতে রাজ্যের বাইরে গিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া শেষ যে-চুক্তি হয়েছে, তাতে হাওড়ার কারখানাতেই কাজের কথা বলা হয়েছে। তবু আলোচনা হয়তো করা যেত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এক দিনের মধ্যে উত্তর চেয়ে সেই সুযোগ রাখেননি। তবে কর্তৃপক্ষের তরফে সঞ্জয় মজুমদার এ দিন দাবি করেন, “বদলি নিয়ে সংগঠনের সঙ্গে দফায় দফায় কথা হয়েছে। ওরা মানতে চায়নি।” কিন্তু কেউ বদলি নিতে রাজি না-হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল কি?

“আমরা কোনও স্বেচ্ছাবসরের প্রস্তাব দিইনি,” জবাব সঞ্জয়বাবুর। শিল্পমহলের একাংশের বক্তব্য, সাধারাণ ভাবে বদলির ক্ষেত্রে বেতন-কাঠামোর পরিবর্তন করা হয় না। তবে কেউ যেতে না-চাইলে তাঁকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নজির রয়েছে। শালিমার সংস্থা সূত্রের খবর, এ রাজ্যে কারখানা গুটিয়ে ফেলার ব্যাপারে তারা এক রকম মনস্থ করে ফেলেছে। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক শিল্প-পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হতে থাকায় তার প্রভাব পড়েছে রঙের ব্যবসাতেও। তাই কারখানা চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক কারখানা খোলার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিলেও শালিমার পেন্টসের শ্রমিকদের আশঙ্কা কাটছে না। শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের বক্তব্য, কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে নেতাদের কারও দেখা নেই। ফলে আন্দোলনের অভিমুখ নিয়ে তাঁরা দ্বিধায়।

বৃহস্পতিবার শুধু শাসক দলের স্থানীয় বিধায়ক ব্রজমোহন মজুমদার শালিমার কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন, ধর্নামঞ্চে বক্তৃতা দেন। ওইটুকুই! অনেকের অভিযোগ, মালিক পক্ষ কারখানা সম্পর্কে সরকারকে ভুল তথ্য দিচ্ছে।

কারখানা খোলার ব্যাপারে ইতিমধ্যে বৈঠক হয়েছে। ২৩ জুলাই ফের বৈঠক হওয়ার কথা। কিন্তু এরই মধ্যে গেটের সামনে তৈরি হওয়া ধর্নামঞ্চ ফাঁকা হতে শুরু করেছে। এ দিন কারখানার গেটের সামনে দু’-এক জন নেতা ও শ্রমিক ছাড়া রংকল বাজার এলাকা ছিল অনেকটাই ফাঁকা।


শালিমার কারখানার আবাসন থেকে জিনিসপত্র নিয়ে সপরিবার বেরিয়ে যাচ্ছেন এক কর্মী। শুক্রবার রণজিৎ নন্দীর তোলা ছবি।

বুধবার কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও কারখানার ভিতরে নিরাপত্তাকর্মী-সহ সংস্থার পদস্থ কর্তাদের কয়েক জন পরিবার নিয়ে এখনও রয়েছেন। এ দিন মহিলারা বিশেষ দরকারে কারখানার গেটের বাইরে গেলেও পুরুষদের কারখানার বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়। কারখানার কর্মী-শ্রমিকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে থাকায় পুলিশ এমন নির্দেশ দিয়েছে বলে ওই পরিবারগুলির একাংশের বক্তব্য।

মহকুমাশাসক বাণীপ্রসাদ দাস বলেন, “কারখানার ভিতরে কিছু লোক আটকে আছেন বলে শুনেছি। এই নিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ অভিযোগও করেছেন। পুলিশ ও শ্রম দফতরকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” শ্রমিকেরা জানান, তাঁরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। ঘরের খাবার ফুরিয়ে আসছে। কারখানা-কর্তৃপক্ষও তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করছেন না। ফলে তাঁরা বুঝতেই পারছেন, কী করা উচিত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন