অ্যাসিডের জ্বালা সয়ে অন্যদের ভরসা জোগাচ্ছেন ইনি

দমদমের মেয়ে সঞ্চয়িতা নিজেও সেই হতভাগ্যদের দলে। তিনি বলছেন, ‘‘ছেলেটার সঙ্গে সম্পর্কে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। বেরিয়ে আসার বদলা নিতেই সে আমার মুখে অ্যাসিড মারল।’’

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:৪৩
Share:

সঞ্চয়িতা যাদব। নিজস্ব চিত্র।

জীবনে যা হওয়ার ছিল, কিছুই হয়নি সঞ্চয়িতা যাদবের। উল্টে অঙ্কগুলো গুলিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

চার বছর আগে অ্যাসিড হানার শিকার তরুণীর পুড়ে খাক জীবনের রং ফেরেনি। তাঁর মুখে অ্যাসিড মারার দায়ে অভিযুক্ত ‘প্রাক্তন প্রেমিক’ সৌমেন সাহাকে ধরতেও ব্যর্থ পুলিশ। কিন্তু সঞ্চয়িতা নিজেই আরও অনেকের ক্ষতে প্রলেপ দিচ্ছেন। বেলডাঙার আঙ্গুরা বিবি, নৈহাটির সঙ্গীতা বিশ্বাস বা পাঁশকুড়ার রূপসার ইয়াসমিন, রূপতাজ ইয়াসমিনদের মতো অ্যাসিড আক্রান্তদের কাছেও ‘দিদি’ বা ‘ম্যাডাম’-এর সঙ্গে কথা বলাই একটা আশ্রয়। গরিব, অসহায়দের আইনি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় কাজ করছেন সঞ্চয়িতা। আর সেই সুবাদে তিনি তাঁর মতো আর পাঁচ জনের দগ্ধে যাওয়া জীবনে ছায়া দিচ্ছেন।

গোটা রাজ্যে অ্যাসিড হামলার শিকারদের দুর্গতির পটভূমিতে অবশ্য কিছুই বদলাতে পারেননি সঞ্চয়িতা। ফেব্রুয়ারিতেই হাইকোর্টে একটি মামলায় রাজ্যে অবাধে অ্যাসিড বিক্রি রুখতে সরকারি ব্যর্থতার কথা উঠে এসেছে। অ্যাসিড আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর একটি সর্বভারতীয় সংস্থার কর্তা দিব্যালোক রায়চৌধুরীর দাবি, ২০১৭-তেও বাংলা-সহ পাশাপাশি কয়েকটি রাজ্যে ৭৬টি অ্যাসিড হানার ঘটনা ঘটেছে। এ রাজ্যে শতকরা ৪০ ভাগ অ্যাসিড হানার মামলাতেই বিচার ঝুলে আছে বলেও তাঁর হিসেব।

Advertisement

দমদমের মেয়ে সঞ্চয়িতা নিজেও সেই হতভাগ্যদের দলে। তিনি বলছেন, ‘‘ছেলেটার সঙ্গে সম্পর্কে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। বেরিয়ে আসার বদলা নিতেই সে আমার মুখে অ্যাসিড মারল।’’ সেটা ২০১৪-র সেপ্টেম্বর। পুলিশি তদন্তের টালবাহানা আরও বেশি বিঁধছে সঞ্চয়িতাকে। ২৫ বছরের তরুণীর অভিযোগ, ‘‘ছেলেটা কখনও আমায় ফোনে হুমকি দিয়েছে, কখনও ফেসবুকে বিরক্ত করেছে। ওর বাড়ির লোকও আমায় কেস তুলে নিতে বলেছে। কিন্তু পুলিশ কিছুই করতে পারল না।’’ দমদম থানার পুলিশের সাফাই, কয়েক বার অভিযান চালিয়েও ছেলেটাকে ধরা যায়নি।

আরও পড়ুন: ভিক্ষার টাকা না দেওয়ায় মাকে বাড়িছাড়া করল মেয়ে

তবে বাড়িতে গুমরে পড়ে থাকতে রাজি নন বিএসসি পাশ সঞ্চয়িতা। ভবানীপুরে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় অফিস করছেন ঘাড় সোজা করে। সংস্থাটির কোঅর্ডিনেটর স্যাভিও পিন্টোর কথায়, ‘‘সঞ্চয়িতা নিজে ভুক্তভোগী। তাই ওঁকে দেখে বা ওঁর সঙ্গে কথা বলে অ্যাসিড হানার শিকার অন্য মেয়েরা ভরসা পান।’’ এ দেশে অ্যাসিড হানার শিকার দিল্লির লক্ষ্মী অগ্রবাল, মোহিনী অত্রি, সাহিন বা মুম্বইয়ের দৌলত বি খানের মতো অনেকেই এখন মেয়েদের ক্ষমতায়নের প্রতীক। কলকাতাতেও যে কোনও অবিচারের বিরুদ্ধে সরব অ্যাসিডদগ্ধ আর এক তরুণী মনীষা পৈলান। তিনিও সঞ্চয়িতাকে এগিয়ে চলতে সাহস জুগিয়েছেন।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাজের সূত্রেই এখন তাঁর মুখস্থ কোন মেয়ের সরকারি ক্ষতিপূরণ জোটেনি, কিংবা কবে কার মামলার তারিখ। ‘‘ওই মেয়েদের বলি, অন্তত ঘরে মুখ না-লুকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বাঁচো।’’— অফিসে বসেই বলছিলেন সঞ্চয়িতা। মুখের পোড়া দাগ ছাপিয়ে দুনিয়ার চোখে চোখ রাখার আর এক নাম হয়ে উঠছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন