IIEST-Shibpur

IIEST Shibpur: নবাগতদের গীতা শুনিয়ে হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য প্রচার! গৈরিকীকরণের অভিযোগে বিতর্ক শিবপুরে

আইআইইএসটি-তে স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস শুরু হতে চলেছে। সেই পড়ুয়াদের অন্তর্ভুক্তির ভার্চুয়াল কর্মশালা চলছে কয়েক দিন ধরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাওড়া শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৫৫
Share:

ফাইল ছবি

সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে ছাত্রছাত্রী, সকলেরই কাজকারবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে। সেই শিবপুর আইআইইএসটি-তে প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের ‘ইনডাকশন’ বা অন্তর্ভুক্তির ভার্চুয়াল কর্মশালায় ভগবদ্গীতা ও হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য প্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল। ক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং আধিকারিকদের একাংশের প্রশ্ন, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি শিখতে আসা ছেলেমেয়েদের এ-সব গেলানো-বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে কেন? এই কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সব ধর্মের পড়ুয়ারাই লেখাপড়া করতে আসেন। তাঁদের সামনে এই ভাবে শুধু হিন্দু ধর্মেরই বা প্রচার চালানো হবে কেন?

Advertisement

আইআইইএসটি-তে স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস শুরু হতে চলেছে। সেই পড়ুয়াদের অন্তর্ভুক্তির ভার্চুয়াল কর্মশালা চলছে কয়েক দিন ধরে। শনিবার, ১৮ ডিসেম্বর কর্মশালার চতুর্থ দিনে শিক্ষায় এই গৈরিকীকরণের অভিযোগ উঠেছে। বস্তুত, অভিযোগ উঠেছিল কর্মশালার প্রথম দিনেই। সে-দিন চিফ ওয়ার্ডেন সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় যখন নবাগত পড়ুয়াদের উদ্দেশে বক্তব্য পেশ করছিলেন, তখন তাঁর পরিচয় দেখানো হচ্ছিল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) রাজ্য সভাপতি হিসেবে! ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও আধিকারিকদের একাংশের প্রশ্ন, সুদীপ্তবাবু যদি এবিভিপি-র রাজ্য সভাপতি হয়েও থাকেন, তা হলেও এই অনলাইন কর্মশালায় কী ভাবে সেই পরিচয় দেওয়া হল? সুদীপ্তবাবু জানিয়েছিলেন, ব্যাপারটা পুরোপুরি তাঁর অজানতে ঘটে গিয়েছে। এক বার লিঙ্ক কেটে যাওয়ার পরে ফের যখন ঢুকেছিলেন, তখনই কোনও বিভ্রান্তির ফলে ওই ‘পরিচয়’ দেখিয়েছে।

কিন্তু এই ধরনের কাজের ব্যাপারটা যে সেখানেই শেষ হয়নি, তার প্রমাণ মেলে কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে। সে-দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ছবি দেখিয়ে বোঝানো হয়, মোদী কী ভাবে সারা দেশে বছরে দু’‌কোটি বেকারকে চাকরি দিচ্ছেন। তা নিয়েও অসন্তোষ দেখা দেয় ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও আধিকারিক মহলে। তবে শনিবার, কর্মশালার চতুর্থ দিনে গৈরিকীকরণের চেষ্টা সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ওই দিন কর্মশালা চলাকালীন বক্তাদের তালিকায় না-থাকা এক ব্যক্তিকে এনে বিজ্ঞানচর্চার এই প্রতিষ্ঠানে, ভগবদ্গীতা ও হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য প্রচার করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে গীতা বা হিন্দু ধর্মের কী সম্পর্ক? তাঁদের এ-সব বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে কেন? শুধু তো হিন্দু নয়, এই প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসেন অন্যান্য ধর্মের ছেলেমেয়েরাও। তা হলে কি এখানে অন্যান্য ধর্মেরও প্রচার চালানো হবে? যদি তা না-হয়, তা হলে শুধু হিন্দু ধর্মের প্রচার কেন?

Advertisement

এই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে কোনও ধরনের রাজনৈতিক কাজকর্ম করা যাবে না, এমনটাই নির্দেশ রয়েছে। অথচ সেখানেই খোলাখুলি ভাবে শিক্ষার গৈরিকীকরণের চেষ্টার অভিযোগে সরব শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী মহল। বিরক্ত আধিকারিকদের একাংশও। অভিযোগের তির মূলত প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা পার্থসারথি চক্রবর্তীর দিকে। অভিযোগ, তিনি বারাণসীর আইআইটি বিএইচইউ থেকে এসে শিবপুর আইআইইএসটি-র দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিভিন্ন সময়ে গৈরিকীকরণের চেষ্টা হয়েছে এবং হচ্ছে। ভারতীয় সংবিধানের অন্যতম ভিত্তি বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানভিত্তিক চেতনা। এই ধরনের ঘটনা তাতেও আঘাত আনছে বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি অংশ।

এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে সংস্থার অধিকর্তাকে বার বার ফোন করা সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব মেলেনি। আইআইইএসটি-র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নির্মাল্য ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ওই কর্তা জানিয়ে দেন, পারিবারিক কারণে তিনি এখন ছুটিতে আছেন। এই ব্যাপারে কিছু জানেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন