প্রতীকী ছবি।
আলিপুর জেল থেকে বন্দি পালানোর ঘটনার জেরে এ বার কারারক্ষীদের রাতের ডিউটির পরিবর্তন করছে কারা দফতর। রবিবার কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘‘জেলের নিরাপত্তার স্বার্থেই রাতে কারারক্ষীদের ডিউটির সময়সীমা পরিবর্তন করা হচ্ছে। এত দিন রাতে মাত্র একটি শিফ্ট-এ কাজ করতেন কারারক্ষীরা। এ বার থেকে তাঁরা রাতে দু’টি শিফ্ট-এ কাজ করবেন। রাতের ডিউটির পরিবর্তন সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তি সোমবার রাজ্যের ৫৯টি সংশোধনাগারে পাঠানো হবে।’’
আলিপুর সংশোধনাগার থেকে সম্প্রতি বন্দি পালানোর ঘটনার জন্য ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসা শিফ্ট ডিউটির পরিবর্তনই যে দায়ী, তা ঠারেঠোরে স্বীকার করে নেন কারামন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘চার বছর আগে শিফ্ট ডিউটির পরিবর্তন হয়। রাত দশটা থেকে সকাল ছ’টা পর্যন্ত নাইট শিফ্ট ছিল। রাতে একটানা ডিউটি করা রক্ষীদের পক্ষে কষ্টকর। জেলের নিরাপত্তার স্বার্থেই সমস্ত সংশোধনাগারে রাতের ডিউটি আট ঘণ্টার বদলে দু’টি ভাগে চার ঘণ্টা করা হচ্ছে।’’
গত ১৪ জানুয়ারি ভোরে আলিপুর জেল থেকে পাঁচিল টপকে চম্পট দেয় তিন বাংলাদেশি বন্দি। কড়া নজরদারিতে থাকা ১৪ নম্বর সেল থেকে ওই তিন বন্দি পালিয়ে যাওয়ায় জেলের নিরাপত্তার বেআব্রু অবস্থা প্রকাশ্যে চলে আসে। ঘটনার পরেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছে জেল সুপার-সহ তিন কারারক্ষীকে। তদন্তে জানা গিয়েছে, গত ১৪ জানুয়ারি ভোরে কর্তব্যরত কারারক্ষীরা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন।
ওয়াচ টাওয়ারেও কোনও রক্ষী ছিলেন না। আর কারারক্ষীদের ঘুমের সুযোগ নিয়েই ১৪ নম্বর সেলের পাশের পাঁচিল টপকে পালিয়ে যায় তিন বন্দি।
কারা দফতর সূত্রের খবর, ব্রিটিশ আমল থেকে কারারক্ষীদের ডিউটি ভাগ করা ছিল দিনে-রাতে মোট সাতটি শিফ্ট-এ। দিনে দু’টি, সন্ধ্যা ছ’টা থেকে ভোর ছ’টা পর্যন্ত মোট পাঁচটি শিফ্ট। সন্ধ্যা ছ’টা থেকে ভোর ছ’টা পর্যন্ত মোট পাঁচটি শিফ্ট ছিল। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা, ৯টা থেকে রাত ১১টা, ১১টা থেকে রাত ১টা, ১টা থেকে রাত ৩টে, এবং ৩টে থেকে সকাল ৬টা। এই ব্যবস্থা বদলায় ২০১৩ সালে। এর পর থেকে সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১-৩০, ১-৩০ থেকে রাত ১০টা এবং ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত তিনটি শিফ্ট-এ কাজ করতেন কারারক্ষীরা।
আজ, সোমবার থেকে কারা দফতরের নয়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী দিনে দু’টি শিফ্ট ছাড়াও রাত ১১টা থেকে রাত ৩টে এবং রাত ৩টে থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত কাজ করবেন কারারক্ষীরা। কারামন্ত্রীর কথায়, ‘‘রাতে অপেক্ষাকৃত কম সময় ডিউটি করায় রক্ষীরা সতর্ক থাকবেন। পাশাপাশি রাত ৩টে নাগাদ ডিউটির শিফ্ট বদলানোর সময়ে রক্ষীদের আনাগোনা চলবে। এতেও সংশোধনাগারের নিরাপত্তা অনেকটা বাড়বে।’’
আলিপুর জেল থেকে তিন দাগী আসামী পালানোর পরে শিফ্ট ডিউটির পরিবর্তন নিয়ে সরব হয়েছিলেন কারা কর্তাদের একাংশ। কারা দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘গত চার বছরে নতুন শিফ্ট ডিউটির কারণে রাজ্যের প্রতিটি জেলই কার্যত বন্দিদের কাছে মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছিল। এ বার রাতের শিফটকে দু’টি ভাগে ভাগ করায় জেলের নিরাপত্তা আরও বাড়বে।’’