উদ্ধারে গিয়েও পর্যটক ছাড়া ফিরল জাহাজ

পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। যার ফলে আন্দামানের দুই দ্বীপ হ্যাভলক আর নীলে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত আটকে রইলেন প্রায় ১৪০০ পর্যটক। তাঁদের সেখান থেকে তুলে পোর্ট ব্লেয়ার নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৫১
Share:

পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। যার ফলে আন্দামানের দুই দ্বীপ হ্যাভলক আর নীলে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত আটকে রইলেন প্রায় ১৪০০ পর্যটক। তাঁদের সেখান থেকে তুলে পোর্ট ব্লেয়ার নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি।

Advertisement

আটক পর্যটকদের পোর্ট ব্লেয়ারে নিয়ে আসার জন্য নৌসেনার চারটি জাহাজ নিয়ে যে অফিসারেরা বুধবার ভোরে ওই দুই দ্বীপে গিয়েছিলেন, উত্তাল সমুদ্রের জন্য তাঁরা জাহাজ কোনও জেটিতেই ভেড়াতে পারেননি। বুধবার রাতেই ওই চারটি জাহাজ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাতাসের দাপট আরও বেড়েছে। সকালের দিকে একটু কমলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে বৃষ্টির প্রকোপ। আরও ফুলে-ফেঁপে উঠেছে সমুদ্র। নৌসেনা জানিয়েছে, আবহাওয়া একটু
অনুকূল না হলে কিছুতেই উদ্ধারকাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এমনকী ওই দুই দ্বীপে ১০টি গ্রামে যে কয়েক শ’ বাসিন্দা রয়েছেন, তাঁদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বাড়ন্ত। তাঁদের কাছেও সে সব পৌঁছনো যায়নি।

বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে দু’জনেই জানিয়েছেন, আটকে পড়া পর্যটকেরা নিরাপদ রয়েছেন। পর্যটকদের পরিবারকে চিন্তা না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন রাজনাথ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন নবান্নে জানিয়েছেন, আন্দামান প্রশাসনের সঙ্গে রাজ্য সরকার ক্রমাগত যোগাযোগ রেখে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা আটকে রয়েছেন, তাঁরা নিরাপদে রয়েছেন বলে শুনেছি। পরিস্থিতি একটু ভালো হলে তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।’’

Advertisement

দিল্লি থেকে নৌসেনার মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ডি কে শর্মা এ দিন বলেন, ‘‘সমুদ্রের মাঝে জাহাজ দাঁড় করিয়ে রেখে কোনও লাভ নেই। আবহাওয়া অনুকূল হলে আমাদের জাহাজ গিয়ে আটকে পড়া পর্যটকদের তুলে নিয়ে আসবে। এই মূহূর্তে সমুদ্রের যা অবস্থা, তাতে পর্যটকদের জাহাজে কোনও ভাবে তোলা গেলেও তাঁরা তিন ঘণ্টার সমুদ্র যাত্রা সহ্য করতে পারবেন না। সমুদ্র এতটাই উত্তাল হয়ে রয়েছে যে জাহাজে উঠলেই বমি করতে শুরু করবেন সাধারণ মানুষ।’’

বর্ধমানের ১০ জন বৃদ্ধকে নিয়ে গত ১ ডিসেম্বর আন্দামানে গিয়েছিলেন অরিন্দম সাহা। সকলেরই বয়স গড়ে ৭৫ বছর। ৪ ডিসেম্বর নীল দ্বীপ ও ৫ ডিসেম্বর তাঁরা যান হ্যাভলকে। সেখান থেকে ৭ ডিসেম্বর ফেরার কথা ছিল। হ্যাভলকে আটকে পড়া বিনয় ভট্টাচার্য, শৈলেন বসুরা এ দিন ফোনে বলেন, ‘‘খুচরোর অভাবে ওষুধ কেনা যাচ্ছে না। এক কিলোগ্রাম আলু কিনতে হয়েছে একশো টাকায়। এক বোতল জলের দাম পড়ছিল ৭০ টাকা। টাকা দিয়েও এ দিন জল মেলেনি। হোটেলের গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ায় সমুদ্রের তীরে কাঠ জ্বেলে রান্না করতে হয়েছে।’’ বর্ধমানে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন অরিন্দমবাবুর স্ত্রী মালাদেবী।

হ্যাভলক ও নীলে প্রকৃতির তাণ্ডব চললেও অদ্ভুত ভাবে শান্ত রয়েছে পোর্ট ব্লেয়ার। বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা থেকে চারটি বিমান পোর্ট ব্লেয়ার যাতায়াতও করেছে। এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, যে পর্যটকেরা হ্যাভলক, নীল দ্বীপে আটকে পড়ার জন্য টিকিটের দিনক্ষণ বদলাতে চাইবেন, তাঁদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হবে না। এমনকী এই রুটে কেউ যদি টিকিট বাতিল করতে চান বা টাকা ফেরত নিতে চান, সে ক্ষেত্রেও কোনও অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন