মায়ের অপেক্ষায় ধূপগুড়ির নির্যাতিতার দুই সন্তান

শনিবার সন্ধেয় ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিন সন্তানের জননী সেই আদিবাসী বধূ। ধর্ষণের পরে তাঁর শরীরে কাঁটার লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়ায় রক্তক্ষরণের পরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। ওই অবস্থাতেই অবশ্য বুধবার তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন।

Advertisement

অর্ণব সাহা

ধূপগুড় শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৩
Share:

জবানবন্দি নেওয়ার জন্য জলপাইগুড়ি আদালতে নিয়ে আসা হচ্ছে ধূপগুড়ি-কাণ্ডের নির্যাতিতাকে। ছবি: সন্দীপ পাল

গত বার লক্ষ্মীপুজোর দিন বিকেলে পাশের বাড়ির জ্যাঠাইমাকে বারান্দায় মাদুর পেতে বসে নারকোল নাড়ু বানাতে দেখে বছর সাতেকের ছেলেটা জিজ্ঞেস করেছিল ‘‘মা, তুই নাড়ু বানাতে পারিস?’’ ছেলের কপালে একটা চুমু খেয়েছিলেন আদিবাসী গৃহবধূ। কিছু ক্ষণ পরে খান সাতেক নাড়ু পাকিয়ে দুই ছেলেমেয়ের হাতে দিয়েছিলেন।

Advertisement

এ বার লক্ষ্মীপুজোয় মা ঘরে নেই। বাবা সাত মাসের বোনকে নিয়ে মায়ের সঙ্গে হাসপাতালে। আশপাশে সব বাড়িতেই লক্ষ্মীপুজো। লক্ষ্মীর সরার সামনে ফল, মিষ্টি, নাড়ু, মোয়ার কত ছড়াছড়ি। পাশের বাড়ির সেই জ্যাঠাইমা এসে সন্ধেয় নেমন্তন্নও করে গিয়েছেন। কিন্তু সেখানে যেতে মন সায় দিচ্ছে না। করোগেটেড টিনের ছাউনি দেওয়া, কিছুটা মাটি, বাকিটা দরমার বেড়া দেওয়া বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে লক্ষ্মীপুজোর বিকেলে দুই ভাই বোন অপেক্ষা করছে মায়ের ফিরে আসার। মায়ের হাতের পাকানো নাড়ুর স্বাদই যে আলাদা।

শনিবার সন্ধেয় ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিন সন্তানের জননী সেই আদিবাসী বধূ। ধর্ষণের পরে তাঁর শরীরে কাঁটার লোহার রড ঢুকিয়ে দেওয়ায় রক্তক্ষরণের পরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন তিনি। ওই অবস্থাতেই অবশ্য বুধবার তিনি ম্যাজিস্ট্রেটকে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন।

Advertisement

স্ট্রেচারে করেই এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। বসতেও পারছেন না। যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠছেন মাঝে মধ্যেই। কেন হাসপাতালেই তাঁর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হল না? পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘তাঁকে সে কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনিই আদালতে আসতে জোর করেন। তাই স্ট্রেচারে করে চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়ে তাঁকে আনা হয়।’’

তাঁর ফাঁকা বাড়ি আগলে বসে রয়েছে দুই ছেলেমেয়ে। এক জনের বয়স আট, অন্য জনের ছয়। প্রতিবেশীরা অবশ্য যে যার মতো করে সকাল বিকেল দু’মুঠো ভাত রেঁধে তাদের খেতে দিচ্ছেন। কিন্তু মায়ের জন্য মন খারাপ কমছে না। তাদের মায়ের সঙ্গে ঠিক কী হয়েছে, তারা জানে না। শুধু জানে মায়ের কঠিন অসুখ। তাই হাসপাতালে ভর্তি। ছোট করে চুল ছাঁটা ছয় বছরের মেয়েটা বলছিল, ‘‘রাতে ঘুমোতে গেলেই মা আর বোনের জন্য মন কেমন করে।’’ তাকে মাঝপথে থামিয়েই ছেলে বলল, ‘‘আমরা ঠিক করেছি এ বার বাড়ি ফিরলে মা শুধু আরাম করবে। আমি আর বোন মাকে খাইয়ে দেব। নাড়ুও বানাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন