থ্যালাসেমিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের ২৫ বছর

সূচনা ১৯৯৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর। কেটে গিয়েছে ২৫ বছর। বয়স থাবা বসিয়েছে তৎপরতায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৯ ০০:২৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

কতই বা বয়স হবে তখন— ২২ বা ২৩! মতিঝিল কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ছেন। উৎসাহ ও উদ্যোগের কোনও রকম অভাব ছিল না। তিন বন্ধু সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় ঘুরে ঘুরে শুরু করেছিলেন প্রচার। হ্যান্ডবিলে লেখা: ‘বিয়ের আগে ঠিকুজি-কোষ্ঠী নয়। রক্তপরীক্ষা করান।’

Advertisement

সূচনা ১৯৯৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর। কেটে গিয়েছে ২৫ বছর। বয়স থাবা বসিয়েছে তৎপরতায়। তবু সেই প্রথম সাইকেল র‌্যালির ২৫ বছর পূর্তিতে এ বছর আবার সাইকেল নিয়ে বেরোতে চান তিন বন্ধু— সৌমেন পুরকাইত, পিঙ্কু জানা আর পুলক রাজবংশী। অত ঘোরার দম নেই আর। সময়ও নেই। সৌমেন খাবার ডেলিভারি সংস্থায় চাকরি করেন। পিঙ্কু ও পুলক নিজের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। তবু ঘুরবেন। কতটা ঘুরবেন, এখনও ঠিক করেননি।

সেই তখন, থ্যালাসেমিয়া নিয়ে যখন এত প্রচার-সচেতনতা ছিল না, সেই সময় কিসের প্রেরণায় আচমকা এমন উদ্যোগ? সাধারণ মানুষকে ওই রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে দমদম-অর্জুনপুরের বাসিন্দা তিন যুবক এ ভাবে বেরিয়ে পড়েছিলেন কেন?

Advertisement

সৌমেন জানাচ্ছেন তাঁর ভুলতে না-পারা শিক্ষিকা শ্যামলী রায়ের কথা। থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শ্যামলী স্কুলে পড়াতেন। তাঁর বাড়িতে পড়তে যেতেন সৌমেন। তাঁর কাছ থেকেই থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে জানতে পারেন। জানতে পারেন, তাঁর প্রিয় দিদিমণি মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন, দ্রুত। আর কারও ক্ষেত্রে যাতে এমনটা না-হয়, সেই জন্য শুরু হয় সৌমেনদের উদ্যোগ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি বছর তাঁরা অর্জুনপুরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের জন্য আলাদা রক্তদান শিবির করেন। তবে সাইকেল র‌্যালি আর হয়ে ওঠেনি।

২৫ বছর আগের স্মৃতি হাতড়ে সৌমেন জানান, রাজ্যের বিভিন্ন জেলা ঘুরতে ঘুরতে দার্জিলিঙে পৌঁছে দেখা করেছিলেন সুবাস ঘিসিংয়ের সঙ্গে। গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের সেই নেতা কাঁধ ঝাঁকিয়ে উৎসাহ দিয়েছিলেন তাঁদের। শিলিগুড়িতে তাঁদের দেখতে পেয়ে অসম থেকে আসা থ্যালাসেমিয়া-আক্রান্ত শিশুর পিতা হাত ধরে অসমে যেতে বলেছিলেন। সময়ের অভাবে যাওয়া হয়নি।

সৌমেনের কথায়, ‘‘এখন আগের তুলনায় মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। কিন্তু সেই সচেতনতার ছবি আমার দিদিমণি দেখে যেতে পারেননি।’’ ১৯৯৭-এর ফেব্রুয়ারিতে চলে যান শ্যামলী। থ্যালাসেমিয়া-সচেতনতার প্রচারে তাঁর স্মৃতি জিইয়ে রাখতে চাইছেন সৌমেনরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন