বনশ্রী সেনগুপ্তকে শ্রদ্ধা। রবিবার রবীন্দ্র সদনে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
অচিন সুরের খোঁজেই যেন দূর আকাশে পাড়ি দিলেন তিনি। বনশ্রী সেনগুপ্তের চিরতরুণ কণ্ঠ থেমে গেল রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ। ‘আজ বিকেলের ডাকে তোমার চিঠি পেলাম’-এর শিল্পীর শেষ চিঠিটা এসে গেল এ দিন দুপুর-দুপুর। বয়স হয়েছিল ৭১ বছর।
তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এ মাসের গোড়ায়। তার পরেও অবশ্য সুর-সভা থেকে ছুটি নেননি বনশ্রীদেবী। ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের আবদারে শুনিয়েছেন প্রিয় গানের কলি। দিন দুয়েক আগে তাঁর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠে। জবাব দেয় একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। তার জেরেই শিল্পীর জীবনাবসান ঘটে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। এ দিন বিকেলে কিছু ক্ষণের জন্য তাঁর মরদেহ রবীন্দ্র সদনে রাখা হয়েছিল। শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় কেওড়াতলায়।
বনশ্রীদেবীর স্বামী শান্তি সেনগুপ্ত বছর চারেক আগে প্রয়াত হয়েছেন। রয়েছেন তাঁর ভাইবোন ও আত্মীয়-পরিজনেরা। শিল্পীর ভাই গৌতম রায় বললেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে গানের পরিবেশে দিদি বড় হয়েছেন।’’ বাবা চিকিৎসক শৈলেন্দ্রনাথ রায়ের নজরদারিতেই গলা সাধা শুরু। সুধীন দাশগুপ্ত, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, নীতা সেন, প্রবীর মজুমদারদের যত্নে সমৃদ্ধ হয়েছে বনশ্রীদেবীর গায়কী। পরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-মান্না দে প্রমুখের সঙ্গেও ডুয়েট গেয়েছেন।
অজস্র হিট গানের শিল্পী বনশ্রীদেবী পেয়েছেন অসংখ্য সরকারি ও বেসরকারি পুরস্কার। এ দিন বিকেলেও রবীন্দ্র সদনে শিল্পী যখন চিরনিদ্রায় শায়িত, তখনও বিকেলের ডাকে চিঠি পাওয়ার শিল্পিত সংবাদ শুনিয়ে যাচ্ছিল তাঁর কণ্ঠ। তখন বাগ্রুদ্ধ হৈমন্তী শুক্ল, উষা উত্থুপ, শ্রীকান্ত আচার্য প্রমুখ শিল্পী। টুইটে শোক প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছুটির দুপুরে সোশ্যাল মিডিয়া মুখর ‘অনুরোধের আসর’-এর জমানার স্মৃতিমেদুরতায়। ইন্টারনেটের সৌজন্যে বনশ্রীদেবী যেখানে নিরন্তর গেয়ে চলেছেন, ‘এক দিন সেই দিন, সঙ্গী-বিহীন পথে চলে যেতে হবে’!