এ ভাবেই আনন্দে মেতে উঠেছে সিঙ্গুর।
সবুজ রঙে মুখগুলো এতটাই ঢেকে গিয়েছে যে নিজের লোককেও দেখে চেনার উপায় নেই। খাওয়া-দাওয়ার তোয়াক্কা নেই, অসুস্থ শরীরকেও তোয়াক্কা নয় আজ।
আনন্দে প্রায় লাফিয়ে লাফিয়েই চলেছে মিছিলটি। আবালবৃদ্ধবণিতা নির্বিশেষে এক হয়ে গিয়েছে সেই মিছিলে। রয়েছে সেই খুদেগুলোও যারা এই রায়ের আগুপিছু কিছুই বোঝে না। কিন্তু তাদের কাছেও যেন আজ বড় আনন্দের দিন। সব মিলিয়ে সিঙ্গুরে বুধবার উৎসবের মেজাজ।
সেই ২০০৬ সালের ঘটনা। সিঙ্গুরে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তার পর অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে। পরের ১০টা বছর সিঙ্গুরের জমির দিকে তাকিয়ে হাপিত্যেস করেই কাটিয়ে দিয়েছেন সিঙ্গুরবাসী। আজ রায় বেরনোর পরেই যেন বদলে গেল সিঙ্গুরের চিত্রটা। সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে সিঙ্গুর মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার পরই আবারও শ’য়ে শ’য়ে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন। সেই ১০ বছর আগের মতোই। শুধু এ বারে ক্ষোভের বদলে তাঁদের মুখে ছিল হাসি আর চোখে ছিল স্বস্তির জল। শীর্ষ আদালত জমি ফিরিয়ে দেওয়ার নিদান দিয়েছে যে!
আরও পড়ুন:
ইচ্ছুকদের টাকা ফেরাতে হবে না, অনিচ্ছুকরা পাবেন ক্ষতিপূরণ
বুদ্ধের সিঙ্গুর অধিগ্রহণ অবৈধ ছিল, সুপ্রিম রায়ে ঐতিহাসিক জয় মমতার
তবে এ দিন সকাল থেকে অবশ্য মেজাজটা অন্যই ছিল সিঙ্গুরের। বলা চলে, অন্য দিনের তুলনায় এ দিন একটু শান্তই ছিল সিঙ্গুর। কারও যেন তর সইছিল না। সকাল থেকেই টিভির সামনে ভিড় করে বসেছিলেন সিঙ্গুরবাসী। রায় যে কোন দিকে যাবে তা নিয়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাড়ার মোড়ে মোড়ে কানাঘুষোও চলতে শুরু করে। বেলা আড়াইটে নাগাদ টিভির পর্দায় সিঙ্গুর মামলার রায় দেখানোর পরেই আস্তে আস্তে বদলে যায় ছবিটা। খাওয়া-দাওয়া ভুলে সবাই রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে শুরু করেন। পরিস্থিতি এমনই যে, এত দিন যে মহিলাটি অসুস্থ ছিলেন, এই রায়ে তিনিও যেন আচমকাই একদম ‘ফিট’ হয়ে গিয়েছেন। সকলের পায়ে পা মিলিয়ে মেতে উঠেছেন এই জয়ের আনন্দে।
এ দিন সিঙ্গুরে আন্দোলনের দুই মুখ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং বেচারাম মান্না মিছিল বের করেন। সবুজ আবিরে ঢেকে যায় সিঙ্গুর। উৎসবের চেহারা নেয় সিঙ্গুর জুড়ে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে ইচ্ছুক এবং অনিচ্ছুক কৃষকেরা নির্বিশেষে জমি ফেরত পাবেন। তা নিয়েও অনিচ্ছুক কৃষকদের মনে কোনও ক্ষোভ নেই। তাঁদের শুধু একটাই অনুরোধ, অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আর যেন না হয়। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জমি ফিরিয়ে দিক সরকার।