চাষযোগ্য করেই জমি ফেরত সিঙ্গুরে, ফের বললেন মমতা

সিঙ্গুরের জমি যদি চাষযোগ্য না থাকে, তবে তাকে কৃষিযোগ্য করে তুলেই ফেরত দেবে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ এই প্রতিবেদককে জানান, বাংলার মাটি উর্বর। সেই জমিতে পাথর দিয়ে কিছু ফ্লোরিং-এর কাজ করা হয়েছে। সেগুলিকে ভেঙে আবার চাষের জমি করে তোলা হবে। কিছু নির্মাণকাজও হয়েছে। সে সবও ভেঙে ফেলা হবে। রাজ্য সরকার আত্মবিশ্বাসী যে ওই জমিতে আবার চাষবাস করা সম্ভব হবে।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

মিউনিখ শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫১
Share:

প্রকল্প এলাকার বাইরে চলছে রাস্তার কাজ। ছবি: দীপঙ্কর দে।

সিঙ্গুরের জমি যদি চাষযোগ্য না থাকে, তবে তাকে কৃষিযোগ্য করে তুলেই ফেরত দেবে রাজ্য সরকার।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ এই প্রতিবেদককে জানান, বাংলার মাটি উর্বর। সেই জমিতে পাথর দিয়ে কিছু ফ্লোরিং-এর কাজ করা হয়েছে। সেগুলিকে ভেঙে আবার চাষের জমি করে তোলা হবে। কিছু নির্মাণকাজও হয়েছে। সে সবও ভেঙে ফেলা হবে। রাজ্য সরকার আত্মবিশ্বাসী যে ওই জমিতে আবার চাষবাস করা সম্ভব হবে।

মমতার সিঙ্গুরে যাওয়ার কথা আগামী ১৪ তারিখ। সেদিন মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলবেন। তার পর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সিঙ্গুরে জনসভা করে ভবিষ্যতের রোড ম্যাপের কথা ঘোষণা করা হবে। মমতার বক্তব্য, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায় অক্ষরে অক্ষরে মেনে এগোবো। সেখানে বলা হয়েছে, জমি কৃষকদের ফিরিয়ে দিতে হবে। আমাদের প্রতিশ্রুতি আমরা পালন করব।’’ মমতার মন্তব্য, ‘‘পাথর কেটেই তো চাষ হয়, এখানে সমস্যা কোথায়?’’ সরকারি সূত্রের মতে, সিঙ্গুরের জমির একটা অংশ নিয়ে টাটার সঙ্গে আবার আলোচনা করার প্রস্তাব ছিল। কিন্তু সিঙ্গুরের জমি নিয়ে কোনও নতুন আলোচনায় যেতে চান না মমতা। তিনি টাটাকে প্রয়োজনে নতুন জমি দেওয়ার পক্ষপাতী।

Advertisement

এখানে দু’টি প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। টাটা সূত্র জানাচ্ছে, সিঙ্গুরে তারা প্রায় ১০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে বসে রয়েছে। ফলে তারা রাজ্য সরকারের প্রস্তাবে রাজি হবে কেন? তবে টাটা সূত্রে এ কথাও জানা যাচ্ছে যে তারা রাজ্য সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে ফের আদালতে যেতে চায় না। টাটার এক কর্তার কথায়, ‘‘এটা কোনও আদর্শের বিষয় নয়। আমরা ব্যবসা করতে এসেছি। বাংলায় ব্যবসা করতে চাইছি। রাজ্য সরকারের থেকে নতুন প্রস্তাব এলে আমরা বিবেচনা করতে প্রস্তুত।’’

অন্য যে প্রশ্ন উঠে এসেছে, তা হল, শিল্পের জন্য এক লপ্তে ১ হাজার একর জমি রাজ্য সরকারের পক্ষে কী ভাবে পাওয়া সম্ভব? মমতা অবশ্য জানাচ্ছেন, ‘‘আমাদের জমি রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।’’ তবে পশ্চিমবঙ্গে সমস্যা হচ্ছে ১০০ বা ২০০ একর পাওয়া পাওয়া গেলেও একলপ্তে বড় জমি পাওয়া কঠিন। আর বড় জমি অধিগ্রহণ মানেই তো কৃষি জমিতে হাত দিতে হবে। এ ব্যাপারে মমতার ব্যাখ্যা, যদি কেউ স্বেচ্ছায় কোনও ব্যবসায়ী বা শিল্প-বাণিজ্য কর্তার কাছে কৃষি জমি বিক্রি করতে চান, তা হলে রাজ্য সরকারের কোনও বক্তব্য নেই। তবে সিঙ্গুরে জোর করে জমি নেওয়া হয়েছিল। সেখানে ইচ্ছুক আর অনিচ্ছুক চাষির মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এর ফলে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হয়। সে জন্যই বর্তমান রাজ্য সরকার পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, বাঁকুড়ায় জমি অধিগ্রহণে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটেই আজ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, ‘‘সিঙ্গুরে যা হয়ে গিয়েছে, সেটা অতীত। ওটা একটা রাজনৈতিক সংগ্রাম ছিল। এখন আর ইগো দেখানোর ব্যাপার নেই। টাটা আসুক। এটা খুব ভাল ব্যাপার যে টাটা আজ বাংলায় বিনিয়োগ করতে চাইছে।’’ সুদীপ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিহিংসায় বিশ্বাসী নন। তিনি বাংলার উন্নতি চান। টাটার এমডি বা রিলায়্যান্সের প্রতিনিধিরা এখন জানিয়েছেন, আগামী দিনে দেশের উন্নয়নের মুখ হয়ে উঠবে বাংলা।তবে কি রাজ্যে আবার বিনিয়োগ করবে টাটারা? সুদীপের ব্যাখ্যা, টাটারা বিনিয়োগ করবে না, এমন কথা তারা বলেনি। বরং রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ রয়েছে প্রশাসনিক সাহায্য পাওয়ার কথা বলেছেন তারা। সুদীপের মতে, যারা মমতা ও টাটাদের সম্পর্ক নিয়ে বক্রোক্তি করেন, তাঁদের তা শুধরে নেওয়ার সময় এসেছে।

সিঙ্গুর-পর্ব একটা নতুন অধ্যায়ের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। অমিত মিত্রও মনে করছেন, কোর্টের রায়ের পর জমি আইন সংক্রান্ত বিষয় অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, রাজ্য টাটাদের সঙ্গে ট্র্যাক-টু আলোচনা শুরু করেছে। অমিত মিত্রের সঙ্গে টাটাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তিনি নিজে কথা বলছেন। টাটার কর্ণধার সাইরাস মিস্ত্রিও উৎসাহী। অনেকেই মনে করছেন, সিঙ্গুর যুদ্ধের শেষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন