Sitaram Yechury

জাতীয় প্রশ্নে রাজ্যে রাজ্যেও বিরোধী-প্রচার চান ইয়েচুরি

দলের দুই সদ্যপ্রয়াত নেতা মদন ঘোষ ও মৃদুল দে-র স্মরণ-সভায় বুধবার কলকাতায় বক্তা ছিলেন ইয়েচুরি। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে ওই আলোচনায় জাতীয় পরিস্থিতি এবং আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ এসেছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৩ ০৭:২৩
Share:

মদন ঘোষ ও মৃদুল দে-র স্মরণ-সভায় সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে। নিজস্ব চিত্র।

লোকসভা নির্বাচনের আর এক বছর বাকি। তার আগে দেশ জুড়ে বিজেপির মোকাবিলায় ত্রিমুখী কৌশল নিয়ে এগোনোর বার্তা দিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। বিজেপির বিরুদ্ধে গোটা দেশে অভিন্ন বিরোধী জোট যে বাস্তবসম্মত নয়, বরং রাজ্যভিত্তিক পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্বাচনী কৌশল ঠিক হবে, সে কথা আগেই স্পষ্ট করেছে সিপিএম। কিন্তু ত্রিমুখী পরিকল্পনার মধ্যে জাতীয় স্তরের বিষয় নিয়ে রাজ্যে রাজ্যে বিরোধী দলগুলির সর্বাত্মক প্রচারের কথা বলেছেন ইয়েচুরি। যার ফলে জল্পনা তৈরি হয়েছে, তা হলে কি লোকসভা ভোটের আগে এ রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী প্রচারে তৃণমূল কংগ্রেস এবং সিপিএমকে একসঙ্গে দেখা যেতে পারে? তৃণমূল অবশ্য মনে করছে, স্থানীয় রাজনৈতিক বিন্যাসই এমন সম্ভাবনার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

Advertisement

দলের দুই সদ্যপ্রয়াত নেতা মদন ঘোষ ও মৃদুল দে-র স্মরণ-সভায় বুধবার কলকাতায় বক্তা ছিলেন ইয়েচুরি। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে ওই আলোচনায় জাতীয় পরিস্থিতি এবং আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রসঙ্গ এসেছিল। কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে ইয়েচুরি বলেন, দক্ষিণের ওই রাজ্যে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা যে ভাবে ভয়ঙ্কর মেরুকরণ ও বিভাজনের চেষ্টা করেছেন, তার প্রেক্ষিতে দেশে বিজেপি সরকারকে পরাস্ত করা আরও জরুরি হয়ে পড়েছে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদকের কথায়, ‘‘এই সরকারই সংবিধান, সংসদ, বিচারব্যবস্থা, সংবাদমাধ্যমকে দখলে নেমেছে। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এবং প্রজাতান্ত্রিক চরিত্রকে রক্ষার জন্য সরকার থেকে বিজেপিকে দূরে রাখা জরুরি।’’

এই সূত্রেই লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁদের তিন দফা পরিকল্পনার কথা বলেছেন ইয়েচুরি। এক, সাম্প্রদায়িকতার বিরোধিতা থেকে শুরু করে জাতভিত্তিক জনগণনার জন্য জাতীয় স্তরের বিষয়ে রাজ্যে রাজ্যে প্রচার। যেখানে বিভিন্ন শক্তিই সমবেত হবে। এখনও পর্যন্ত বিজেপি-বিরোধী বিভিন্ন দল দিল্লিতে জাতীয় স্তরের বিষয়ে একত্রে সরব হয়েছে। এই প্রেক্ষিতেই জল্পনা হচ্ছে, দিল্লিতে যে ভাবে রাষ্ট্রপতির কাছে তৃণমূল ও সিপিএম একসঙ্গে গিয়েছে, বাংলাতেও তেমন কোনও কর্মসূচি হতে পারে কি না। ইয়েচুরি অবশ্য এর কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি। তবে বলেছেন, ‘‘বিজেপি-বিরোধিতায় তৃণমূল আন্তরিক কি না, তা তাদেরই স্পষ্ট করতে হবে।’’ তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র সুখেন্দু শেখর রায়ের বক্তব্য, ‘‘জাতীয় বিষয়গুলি নিয়ে সংসদের ভিতরে-বাইরে বিরোধীরা সম্মিলিত বা আলাদা ভাবে আন্দোলন করছেই। কিন্তু রাজ্য স্তরে সেই আন্দোলনকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক বিন্যাস বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কেরলে কংগ্রেস এবং সিপিএম নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে। এখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়াই করছে!’’ তবে সব বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী আন্দোলনে আছেন দাবি করে সিপিএমকে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে তো নিজেদের জোটে বিজেপিকেও নিয়েছে। তাদের জ্ঞান দেওয়া মানায়!’’

Advertisement

বামেদের দ্বিতীয় কৌশল হল বেকারি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মতো জীবন-জীবিকার বিষয়ে আরও তীব্র জনতার আন্দোলন গড়ে তোলা এবং তিন, রাজ্য স্তরে বাস্তবতা অনুযায়ী বিজেপিকে পরাজিত করার কৌশল। ভোটের ক্ষেত্রে বাংলায় যে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধেই সিপিএম লড়বে, তা দ্ব্যর্থহীন ভাবেই বলেছেন ইয়েচুরি। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি অপরাজেয় নয়! এটা মনে রেখেই এগোতে হবে।’’

স্মরণ-সভায় ছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র, রামচন্দ্র ডোম প্রমুখ। প্রগতির পক্ষে লড়াই করতে গেলে রাজনীতির সৈনিকদের মগজে শান দিতে হয়, মতাদর্শ আত্মস্থ করতে হয় এবং সেই কাজে মদনবাবু, মৃদুলবাবুদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল, এই ভাবেই তাঁদের মনে রাখার কথা বলেছেন সেলিম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন