দক্ষিণেশ্বর মন্দির যাতায়াতের রাস্তায় যানজট ও দর্শনার্থীদের ভিড় কমাতে একটি ‘স্কাই ওয়াক’ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের জন্য ওই রাস্তার দোকানদারদের পুনর্বাসন দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু দোকানদারেরা সেই সিদ্ধান্ত মানতে চাইছেন না। তবে রাজ্য সরকারও যে এই ‘স্কাই ওয়াক’ তৈরির সিদ্ধান্তে অনড়, তা বুধবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি।
এ দিন ফিরহাদ বলেন, ‘‘সবার সঙ্গে আলোচনা করেই পুনর্বাসন দিয়ে প্রকল্পের কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওটা পুরসভার জায়গা। তাই প্রকল্পের কাজ হবেই। এর পরেও দোকানদারেরা সহযোগিতা না করলে কড়া ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবে রাজ্য সরকার।’’
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে ঢোকার জন্য রানি রাসমণি রোডই এক মাত্র মূল রাস্তা। এই রাস্তার দু’ধারে প্রসাদ, খাবার, আচার-সহ হরেক দোকান। ফলে প্রতিনিয়ত এই রাস্তায় দর্শনার্থী ও যানবাহনের জট লেগেই থাকে। সমস্যা মেটাতে দীর্ঘ দিন ধরে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছিলেন দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ। সেই মতো ওই রাস্তায় স্কাই ওয়াক তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ঠিক হয়, স্কাই ওয়াকের উপরে থাকবে দোকান ও পথচারীদের হাঁটার জায়গা। নীচ দিয়ে শুধু গাড়ি চলবে। মার্চ মাসে প্রকল্পটির শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু প্রকল্পের ফলক বসানোর সময়েই প্রশাসনের আধিকারিকদের বাধা দেন দোকানদারেরা। পুরভোটের মুখে ওই ঘটনা ঘটায় তখনকার মতো চুপ করে যায় স্থানীয় ও রাজ্য প্রশাসন। ভোট মিটতে কামারহাটি পুরবোর্ড গঠনের পরেই স্কাই ওয়াক নিয়ে জট কাটাতে আসরে নামেন খোদ পুরমন্ত্রী। মঙ্গলবার তিনি সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে দোকানদারদের জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তই চৃড়ান্ত। তার কোনও বদল করা যাবে না। প্রকল্প তৈরির জন্য এক বছর রানি রাসমণি রোড বন্ধ থাকবে। ওই দোকানদারদের রুটিরুজির কথা ভেবেই মন্দিরে প্রবেশের বিকল্প রাস্তার দু’ধারে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে।
কিন্তু ফিরহাদের ওই কথার সঙ্গে সহমত হতে পারছেন না দোকানদারেরা। তাঁরাও জানিয়েছেন, এক বছরের জন্য তাঁরা কোথাও পুনর্বাসন নেবেন না। রানি রাসমণি রোডের দু’ধারে দোকান রেখেই কাজ করতে হবে। এমনকী, প্রকল্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনও দোকান স্কাই ওয়াকের উপরে তোলা যাবে না।
তাঁদের আরও দাবি, যে বিকল্প রাস্তার (হীরালাল কলেজের সামনে দিয়ে টি এন বিশ্বাস রো়ড হয়ে গোলমোহর পেপার মিলের সামনে মন্দিরের পিছনের গেট) কথা বলা হচ্ছে, সেখানে ১৩৭টি দোকানের জায়গা হবে না। উপরন্তু সেখানে ব্যবসার নিরাপত্তাও নেই।
দক্ষিণেশ্বর রানি রাসমণি রোড দোকানদার সমিতির সম্পাদক অজিত সিংহ বলেন, ‘‘আমরা সার্ভেয়ারকে দিয়ে বিকল্প নকশা তৈরি করেছিলাম। যেখানে দোকানগুলি নীচে রাখা যায়। কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনতেই চাননি। নীচে দোকান না থাকলে কখনওই ব্যবসা চলবে না। আগামী ২৯ জুন আমরা বৈঠক করে বৃহত্তর আন্দোলনের পথ ঠিক করব।’’
অজিতবাবুর কথায়, ‘‘পুরমন্ত্রী বলছেন এই প্রকল্প মুখ্যমন্ত্রী নিজে ঠিক করেছেন। কিন্তু আমাদের মনে হয় না দোকানদারদের রুটিরুজিতে আঘাত করে তিনি কোনও কাজ করবেন।’’ এ ব্যাপারে কামারহাটির পুর-চেয়ারম্যান গোপাল সাহা বলেন, ‘‘মানবিক ভাবে বিচার করেই দোকানদারদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেন যে ওঁরা বারবার সমস্যা করছেন জানি না।’’