West Bengal News

মালদহ থেকে সরে যাচ্ছে জাল নোটের করিডর, গোয়েন্দাদের নজর নতুন রুটে

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, গত প্রায় ছ’মাস ধরে মালদহ সীমান্তে জাল নোট পাচারের চেষ্টা অনেকটাই কমে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:২৭
Share:

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস

মালদহ থেকে জাল নোট পাচারের ঘাঁটি সরাচ্ছে কারবারিরা। ভারত এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের এমনটাই ধারণা। তবে সেই তথ্য হাতে আসার পর আদৌ স্বস্তিতে নেই গোয়েন্দারা। কারণ কোথায় এই জাল কারবারিরা নতুন ঘাঁটি তৈরি করছে সেই সম্পর্কে এখনও কোনও তথ্য নেই গোয়েন্দাদের।

Advertisement

গত প্রায় সাত বছর ধরে এ রাজ্যের মালদহ জেলার কালিয়াগঞ্জ এবং বৈষ্ণবনগর থানা এলাকা এবং সংলগ্ন বাংলাদেশ সীমান্ত কুখ্যাত হয়ে উঠেছে গোটা দেশের জাল নোটের প্রধান বিপণন কেন্দ্র হিসাবে। এই এলাকা থেকেই দেশ জুড়ে পাচার করা হত জাল নোট। গত তিন বছর ধরে সেই জাল নোট চক্র ভাঙতে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা(এনআইএ), সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), কেন্দ্রীয় শুল্ক গোয়েন্দা দফতর (ডিআরআই)-এর মত একাধিক সংস্থা। জাল নোট বিরোধী এই অপারেশনে আগাগোড়া সহযোগিতা করেছেন বাংলাদেশের গোয়্ন্দারা এবং সে দেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন(র‌্যাব)।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রে খবর, গত প্রায় ছ’মাস ধরে মালদহ সীমান্তে জাল নোট পাচারের চেষ্টা অনেকটাই কমে গিয়েছে। যারা কেরিয়ার হিসাবে কাজ করত তাদের উপর নজর রেখেও দেখা গিয়েছে তারা জাল নোটের কারবার থেকে সরে এসেছেন। তারই মধ্যে এ বছরের সেপ্টেম্বরমাসের ৮ তারিখ বাংলাদেশের চাপাইনবাবগঞ্জে রুবেল ইসলাম নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে র‌্যাব। তার কাছ থেকে ৭০ লাখ মূল্যের জাল ভারতীয় টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সঙ্গে হদিশ মিলেছিল ছাপার সরঞ্জামেরও।

Advertisement

আরও পড়ুন: এক কেজি পেঁয়াজ ৩.৭২টাকা! দাম শুনেই মৃত্যু চাষির

রুবেলকে জেরা করেই বাংলাদেশের জাল নোট চক্রের আরও বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য তথ্য পান গোয়েন্দারা। সেই তথ্য অনুযায়ী র‌্যাব বাংলাদেশের চাপাই নবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ সহ রাজধানী ঢাকারও একাধিক জায়গায় তল্লাশি চালায়। কয়েক জন জাল নোটের কারবারিও গ্রেফতার হয়। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্নেষণ করতে গিয়েই দু’দেশের গোয়েন্দাদের ধারণা মালদহ ছেড়ে এবার জাল নোটের পাচারের নতুন রুট তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দাদের ধারণা, মালদহ থেকে সরিয়ে এবার নমনী অসমের দিকে পাচারের নতুন রুট তৈরি করছে জাল নোটের কারবারিরা।

সূত্রের খবর, বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ওই তথ্য ইতিমধ্যেই এনআইএ এবং এ দেশের গোয়্ন্দাদের জানিয়েছেন। জাল নোটের বিরুদ্ধে অপারেশনে যুক্ত থাকা এক গোয়্ন্দা বলেন,“ আমরা এই তথ্য পেয়েছি। এটা সত্যি যে মালদহ দিয়ে নোট পাচারের পরিমাণ খুব দ্রুত কমে এসেছে। তবে আচমকা এটা কমিয়ে দেওয়ার অর্থ নতুন রুট তৈরি হওয়া নাও হতে পারে। হতে পারে জাল নোটের কারবারিরা আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তাই আমরা সব তথ্যই খতিয়ে দেখছি। অসমেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।”

আরও পড়ুন: ভারতীয় সেনার পোশাক পরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা পাক সেনার! নওগামে গুলিতে হত দুই

এর আগে এনআইএ-র গোয়েন্দারা প্রায় তিন বছরে এ রাজ্যে জাল নোট পাচার চক্রের প্রায় এক ডজন পান্ডাকে গ্রেফতার করেছেন, যারা মূলত সীমান্তের ওপার থেকে জাল নোট আমদানি করত এবং সেই সঙ্গে বিভিন্ন কেরিয়ার বা বাহকের মাধ্যমে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিত। ধৃত পান্ডাদের জেরা করেই গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন সীমান্তের অন্য পারে বাংলাদেশের চাপাই নবাবগঞ্জ জেলাতে জাল নোট কারবারিরা রীতিমত ছাপাখানা তৈরি করে ফেলেছে। সেই খানেই ছাপা হচ্ছে জাল ভারতীয় নোট। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সেই তথ্য তাঁরা বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের জানালে, র‌্যাব গত এক বছরে প্রায় দশটি এ রকম ছাপা খানায় হানা দেয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা, সীমান্তের দুই পারে ক্রমাগত বাড়তে থাকা চাপ সামলাতে না পেরেই মালদহ করিডর থেকে সরে যাচ্ছে জাল নোটের কারবারিরা। তবে কোথায় তৈরি হচ্ছে নতুন করিডর সেটা খুঁজে বের করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ গোয়েন্দাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন