পাহাড়ে জোড়া বিস্ফোরণে খটকা অনেক

তদন্তকারীরা মনে করছেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলে একমাত্র নাগা জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলায় সিদ্ধহস্ত। কিন্তু তারা এখন কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে, নাশকতার রেকর্ড গত কয়েক বছরে নেই। দার্জিলিং‌ বা সিকিম পাহাড়ে নাগা জঙ্গিদের গতিবিধি এর আগে কখনও দেখা যায়নি।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ০৪:৩০
Share:

পর পর দু’দিন দু’টি বিস্ফোরণের পরে ফের শিরোনামে পাহাড়। দার্জিলিংয়ে জিলেটিন জাতীয় বিস্ফোরক এবং কালিম্পংয়ে হ্যান্ড-গ্রেনেড ব্যবহারের কথা প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। পুলিশ এ নিয়ে ধরপাকড় শুরু করেছে। নেপালেও গিয়েছে পুলিশের দল।

Advertisement

পাশাপাশি এনআইএ, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং সেনা গোয়েন্দারাও এই জোড়া বিস্ফোরণের উপর নিজেদের মতো করে নজর রাখছেন। আর তাতেই বেশ কিছু খটকা দেখা দিয়েছে। একটি তদন্তকারী সংস্থার কর্তা সোমবার জানান, কালিম্পং থানা মূল রাস্তা থেকে ঠিক ২০ ধাপ উপরে অবস্থিত। হামলাকারীদের রাস্তা থেকে ছোড়া গ্রেনেড থানায় গিয়ে পড়েছে। যে ধরনের গ্রেনেড ব্যবহৃত হয়েছে তার পিন খোলার পর ফাটতে মাত্র চার থেকে আট সেকেন্ড সময় লাগে। ফলে যে হামলাকারী কালিম্পং থানার নীচের রাস্তায় দাঁড়িয়ে গ্রেনেডের পিন খুনে উপরের দিকে ছুড়েছে সে ‘অসম্ভব দক্ষ’। প্রশ্ন, এত পটু ‘গ্রেনেড থ্রোয়ার’ কালিম্পংয়ে কী ভাবে এল?

তদন্তকারীরা মনে করছেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলে একমাত্র নাগা জঙ্গিরা গ্রেনেড হামলায় সিদ্ধহস্ত। কিন্তু তারা এখন কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে, নাশকতার রেকর্ড গত কয়েক বছরে নেই। দার্জিলিং‌ বা সিকিম পাহাড়ে নাগা জঙ্গিদের গতিবিধি এর আগে কখনও দেখা যায়নি। তা হলে কে বা কারা এর পিছনে?

Advertisement

রাজ্য পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ‘‘গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের অনেকেই জঙ্গিপ্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারা এই কাজ করে থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বের জঙ্গিরাও আসতে পারে। কারণ, মোর্চার এক নেতা অসম থেকে অস্ত্র আনার সময় ধরাও প়ড়েছে।’’

আরও পড়ুন: দ্রুত কথা চাই উধাও শর্তও

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এক সংস্থা সূত্রের খবর, রাজ্য গোয়েন্দা বা পুলিশ গোর্খা যুবকদের জঙ্গি প্রশিক্ষণের যে তথ্য এখনও পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আদানপ্রদান করেছে তা ২০১৪ সালের ঘটনা। সে সময় গুলিচালনা অভ্যাসের কথা বলা হলেও গোর্খাদের বিস্ফোরক বানানো বা তা ব্যবহারের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে রাজ্য কোনও তথ্য দিতে পারেনি। ফলে গোর্খাদের কোন অংশ এই কাজ করে থাকতে পারে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির কাছে তা স্পষ্ট নয়।

যদিও রাজ্য পুলিশের কর্তারা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠানো রিপোর্টে সোনাদায় অস্ত্র প্রশিক্ষণের কথা বলেছে। এমনকী আন্দোলন শুরুর মাস খানেক আগে এ দেশে চিনের রাষ্ট্রদূত দার্জিলিংয়ে এসে সিঙ্গতাম চা বাগানে গিয়েছিলেন। বিমল গুরুঙ্গের পাতলেবাসের বাড়ির দিকেই সিঙ্গতাম চা-বাগান। ফলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে সে কথাও জানিয়ে এসেছে রাজ্য। নেপালেও গুরুঙ্গদের আনাগোনা নিয়ে কেন্দ্রকে তথ্য দিয়েছে নবান্ন।

তার পরেও অবশ্য দার্জিলিং বিস্ফোরণ নিয়েও কিছু ধোঁয়াশার কথা কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির মনে হচ্ছে। এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্তার কথায়, ‘‘যখন গোর্খা নেতারা আলোচনায় বসার আর্জি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে যাচ্ছেন, রাজ্যের কাছে একটি চিঠি চেয়ে বার্তা পাঠাচ্ছেন, তখন কেন বিস্ফোরণ?’’ চকবাজারের ওই বিস্ফোরণে রাস্তা মাত্র আট ইঞ্চি গর্ত হয়েছিল। কিন্তু তার ‘ইমপ্যাক্ট’ ছিল সাঙ্ঘাতিক। এমন ‘নিখুঁত কাজ’ বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরাই করতে পারেন।

রাজ্যের অবশ্য দাবি, দু’টি বিস্ফোরণের দোষীদের দ্রুত ধরে ফেলা যাবে। ইতিমধ্যেই অবশ্য বিমল গুরুঙ্গ, প্রকাশ গুরুঙ্গ, প্রবীণ সুব্বার মতো মোর্চা নেতাদের নামে ইউএপিএ ধারায় এফআইআর করা হয়েছে। প্রশ্ন তা ঘিরেও, তদন্ত শুরুর আগেই পুলিশ কী ভাবে ইউএপিএ-তে চার্জ আনল। তা হলে কি রহস্য কিনারা হতে আর সময় বেশি লাগবে না? যদিও মোর্চা এ নিয়ে ইতিমধ্যেই এনআইএ তদন্ত দাবি করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন