পরন্তুশ ওরাওঁ।
মানুষ হারিয়ে কোথায় যায়? বিশেষত উত্তরবঙ্গের বন্ধ চা-বাগান থেকে নিজের দেশেরই বিভিন্ন রাজ্যে কাজ খুঁজতে যাওয়া বহু শ্রমিক কোথায় কী ভাবে আছেন? জানা যাচ্ছে না।
বন্ধ চা-বাগানের যে-সব শ্রমিক রুটিরুজির খোঁজে ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে সিআইডি-কে তদন্তে নামতে অনুরোধ করেন রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ। এডিজি (সিআইডি) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় জানান, মানবিকতার খাতিরে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের রেজিস্ট্রার অরিন্দম দত্ত জানান, বাগডোগরা, নকশালবাড়ি, ধূপগুড়ি, মালবাজার, মাদারিহাট-সহ বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রায় ২০টি চা-বাগান থেকে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক কেরল, দিল্লি, রাজস্থান, ভুটান বা নেপালে কাজ করছেন। এই দলে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি শ্রমিকদের সঙ্গে সঙ্গে নাবালক-নাবালিকারাও রয়েছে। ওই শ্রমিকদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার জানান, বন্ধ চা-বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে ২০১৬ সালে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। তখন ওই শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় আদালত। সেই সময়ে তাঁরা কুলি লাইনে ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া শ্রমিকদের কথা জানতে পারেন।
ধূপগুড়ি ব্লকের বানারহাট এলাকার রেড ব্যাঙ্ক চা-বাগানের কর্মী ৪০ বছরের পরন্তুশ ওরাওঁ প্রায় এক বছর আগে কাজের খোঁজে অন্য তিন জনের সঙ্গে কেরল যান। তিন জন ফিরে এলেও তিনি ফেরেননি। তাঁর স্ত্রী সবিতা পাঁচ ছেলেমেয়ে নিয়ে ওই চা-বাগানের রবার লাইনের কুলি বস্তিতেই রয়েছেন। অমিতবাবু বলেন, ‘‘স্ত্রীর সঙ্গে পরন্তুশের শেষ যোগাযোগ হয়েছিল ২০১৭ সালের মার্চে। কেউ জানে না, পরন্তুশ এখন কোথায় এবং কী ভাবে আছেন।’’
সেই চা-বাগানে গিয়েই জানা গেল ২৫ বছরের পাদদু ওরাওঁয়ের কথা। তাঁর পরিবার জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে বাগান যখন খোলা ছিল, তখনই দিল্লি চলে যান পাদদু। বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁরও খোঁজ নেই। চার্চ লাইনের কুলি বস্তিতে গিয়ে অমিতবাবুরা দেখেন, পাদদুর ঘরে তালা ঝুলছে। পাদদুর সঙ্গেও তাঁর পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন আত্মীয়স্বজন।
অমিতবাবু জানান, আদিবাসী মানুষগুলি পুলিশের কাছে যেতে ভয় পান। জিজ্ঞাসা করলে জানান, পুলিশ অনেক জেরা করে। ভয়ে ভয়ে থাকেন, অভিযোগ করতে গিয়ে নিজেদেরই বিপদ না বাড়ে! আরও কয়েকটি বাগান থেকে অন্তত ২০ জন কর্মীর হারিয়ে যাওয়ার খবর এসেছে। সিআইডি তদন্তে নামলে সেই তালিকা তাদের হাতে দেওয়া হবে। অমিতবাবুদের আশঙ্কা, সিআইডি তদন্তে নামলে পরন্তুশ-পাদদুর মতো বহু শ্রমিকের অন্তর্ধানের খবর প্রকাশ্যে আসবে।