বাক্যালাপ: রঘুনাথগঞ্জে ফুটবল প্রদর্শনীর উদ্বোধনে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। শুক্রবার। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।
ওই তো ব্রিজ থেকে নেমে আবার ঘুরে ডান দিকের রাস্তা।
উড়ালপুলে ওঠার মুখে কিছু লোক বসেই আছে ওই এক লাইনে রাস্তা বাতলে দেওয়ার জন্য! গোটা মুর্শিদাবাদ তো বটেই, অন্যান্য জেলা থেকেও সাক্ষাৎপ্রার্থীরা এসে ঠিকানা জানতে চাইছেন তো। কারণ, জঙ্গিপুর এখন রাষ্ট্রপতির কেন্দ্র! অন্তত দু’দিনের জন্য।
রাষ্ট্রপতি পদ থেকে বিদায়ের আগে শেষবেলায় তাঁর পুরনো নির্বাচনী কেন্দ্রে পুরোদস্তুর জনসংযোগ কর্মসূচিতে ব্রতী হয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। কেন্দ্রের নানা জায়গায় ঘুরে স্কুল উদ্বোধন করছেন, ফুটবল ম্যাচে প্রধান অতিথি হচ্ছেন, এলপিজি সংযোগ বিলি করবেন বলে ঠিক করছেন। সেই সঙ্গে সাংসদ থাকার সময়ে তৈরি করা ‘জঙ্গিপুর ভবনে’ বসাচ্ছেন আম দরবার। সাম্প্রতিক অতীতে কোনও রাষ্ট্রপতি এ ভাবে জনপ্রতিনিধিসুলভ কর্মকাণ্ডে হাত দিয়েছেন কি না, জোর গলায় বলতে পারছেন না কেউই!
রাইসিনা হিলসের বাসিন্দা হয়ে যাওয়ার পরেও জঙ্গিপুরের বাড়িতে এসে রাত কাটিয়ে গিয়েছেন দেশের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি। কিন্তু এ বারেরটা অন্য রকম। রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে চলে যাওয়ার আগে কোথাও যেন একটা ‘আমি তোমাদেরই লোক’ বার্তা দেওয়ার চেষ্টা। প্রণববাবু নিজে বলে থাকেন, বীরভূমে তাঁর পৈতৃক ভিটে। নিজের বাড়ি বলতে জঙ্গিপুরই। রাষ্ট্রপতির বিদায়লগ্নে তাঁর এই সফর দেখে কংগ্রেস নেতাদের একাংশ অবশ্য বলছেন, জঙ্গিপুরের বর্তমান সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের জন্য আসলে জমি শক্ত করে দিয়ে যেতে চাইছেন প্রাক্তন।
সত্যিই এ সফর একটু অন্য রকম। দুর্গাপুরের সুশীল ভট্টাচার্য যেমন এসে ঠায় দাঁড়িয়েছিলেন রাস্তার ধারে। রাষ্ট্রপতি প্রণববাবুর জীবনী বাংলা ও ইংরেজিতে ইতিপূর্বে লেখা হয়ে গিয়েছে তাঁর। সেই বইয়ের হিন্দি অনুবাদ রাষ্ট্রপতির হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা নেই আগে থেকে। রাস্তার ধারে পুলিশ তবু তাঁকে দাঁড়াতে ছাড় দিল। বাড়ি থেকে বেরিয়ে ম্যাকেঞ্জি পার্কে ফুটবল খেলাতে যাওয়ার আগে হাতের ইশারায় প্রণববাবু তাঁকে বলে গেলেন, ঘুরে এসে রাতে কথা বলবেন। আবার বিএসএফের ১৮৩ ব্যাটলিয়নের চাকরি-খোয়ানো সুশীল হালদার সপরিবার হত্যে দিয়েছিলেন চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায়। তাঁর কাছ থেকে কাগজপত্র চেয়ে রাখা হয়েছে।
চিকিৎসার সুরাহা, পড়াশোনার ব্যবস্থা—এ সব আর্জি নিয়ে সাক্ষাৎপ্রার্থীরা তো ছড়িয়ে আছেনই। কিন্তু এ সবের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে কেন? রঘুনাথগঞ্জের এক দোকানদার সাফ বলছেন, “উনি চাইলে মৃত্যুদণ্ড রুখে দিতে পারেন!ওঁর কাছে বলাই তো সহজ। প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী, যাঁকে দরকার বলে দেবেন।”
প্রণববাবু বিলক্ষণ জানেন, সব কাজ অত সহজ নয়। তবু বিদায়ের আগে রাষ্ট্রপতিসুলভ বলয়টা নিজের পাশ থেকে সরিয়ে রাখছেন। আর তাঁর পাশে সারাক্ষণ সাংসদ-পুত্র অভিজিৎকে যে দেখা যাচ্ছে? সেটা নেহাতই দ্বিতীয় জনের কর্তব্য!