বহরমপুরের জনসভায় অধীর চৌধুরী। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
কংগ্রেসের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভাঙিয়ে এনে সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের সমস্ত পুরসভা ও জেলা পরিষদের দখল নিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু শাসক দলের এহেন ‘আগ্রাসন’ সত্ত্বেও জেলার মানুষ যে তাঁর সঙ্গেই রয়েছে সোমবার বহরমপুরে লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত করে তা বোঝাতে চাইলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
বাংলার এই জেলায় বরাবরাই সাংগঠনিক ভাবে দুর্বল ছিল তৃণমূল। তাই সেখানে শক্তি বাড়াতে বিধানসভা ভোটের আগে দলের তরুণ নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। তাতে ভোট শতাংশ কিছুটা বাড়াতে পারলেও আসন জেতার দিক থেকে সাফল্য বিশেষ ছিল না। কিন্তু তাতে হতোদ্যম না হয়ে বরং ভোটের পর কংগ্রেস ও বাম জনপ্রতিনিধিদের ভাঙিয়ে এনে মুর্শিদাবাদে একের পর এক পুরসভা ও জেলা পরিষদের দখল নিতে শুরু করে শাসক দল। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে যায়, মুর্শিদাবাদে
অধীর-মিথ নিয়েও।
সেই প্রেক্ষাপটে নিজের ও দলের শক্তি প্রদর্শনের জন্যই মূলত এ দিন বহরমপুরের টেক্সটাইল মোড়ে সভার আয়োজন করেছিলেন অধীরবাবু। যা ঘিরে সকাল থেকে বহরমপুরে কার্যত উপচে পড়ে ভিড়। সভার চারপাশে যে ভাবে কর্মী-সমর্থকরা ভিড় করেন, তাতে এক সময় মঞ্চের পিছনের দিকের আড়ালও খুলে দিতে হয়। কর্মী সমর্থকদের এমন উন্মাদনা দেখে শাসক দলের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক হন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। বক্তৃতায় বলেন,‘‘টাকা ছড়িয়ে ওরা পুরসভা, জেলা পরিষদ দখল করেছে। কিছু জনপ্রতিনিধিকেও কিনেছে। কিন্তু সাধারণ কংগ্রেস কর্মীদের কিনতে পারেননি। আজকের সভায় বিপুল জন-সমাবেশ তারই প্রমাণ।’’ মঞ্চে ছিলেন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নানও। তাঁর কথায়,‘‘চল্লিশ বছর ধরে বহরমপুরে আসছি। কংগ্রেসের এত বড় জমায়েত আগে দেখিনি।’’
প্রায় এক মাস আগে ১৮ অক্টোবর বহরমপুর স্টেডিয়াম মাঠে জেলা পরিষদ দখলের জন্য ‘উৎসব’ করেছিল তৃণমূল। সেই সভায় শুভেন্দু ছাড়াও অভিযেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মানস ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। দলের বিধায়কদের ভাঙন রুখতে এবং কংগ্রেসের শক্তিপ্রদর্শনের জন্য সেদিনই অধীরবাবু পাল্টা সভার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। গত প্রায় এক মাস ধরে জেলার ১৩ জন কংগ্রেস বিধায়ককে দিয়ে ব্লকে ব্লকে প্রচার করেন। তৃণমূল যে মানুষের ভোটের বিকিকিনি করছে তা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে হুমায়ুন কবীরের মতো অতীতে দলত্যাগীদের কংগ্রেসে ফিরিয়ে আনেন।
প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, মুর্শিদাবাদ জেলার আরও কিছু কংগ্রেস বিধায়ককে ভাঙানোর যে পরিকল্পনা তৃণমূল নেতৃত্ব করেছিলেন, এখনই আর তা সফল হওয়ার আশা কম। কারণ এই বিপুল সমাবেশ দেখার পরে নতুন করে কোনও কংগ্রেস বিধায়ক তৃণমূলের দিকে পা-বাড়ানোর আগে দু’বার চিন্তা করবেন।
অধীরের এই ‘সাফল্য’-কে অবশ্য কোনও গুরুত্ব দিতে নারাজ পরিবহণ মন্ত্রী তথা জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি,‘‘বিধানসভা ভোটের তুলনায় ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মুর্শিদাবাদে আরও ভোট পাবে তৃণমূল। তার পর লোকসভা ভোটে বহরমপুরে অধীর চৌধুরীকে পরাস্ত করে ছাড়বে তৃণমূল।’’