হার মেনেছে দারিদ্র, সোনা সোমা-চন্দনের

ওদের দু’জনের সংসারেই অনটন। দু’জনেই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে ভাল অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্ন দেখে। দু’জনেই সুযোগ পেয়েছিল ওয়ার্ল্ড স্কুল গেমসে। চিনে সদ্য শেষ হওয়া সেই আন্তর্জাতিক প্রতিয়োগিতায় নেমে গলায় সোনার পদক ঝুলিয়ে ফিরেছে তারা দু’জনেই। মুখ উজ্জ্বল করেছে পশ্চিমবঙ্গের।

Advertisement

প্রশান্ত পাল ও প্রকাশ পাল

পুরুলিয়া ও তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫৪
Share:

চন্দন বাউরি ও সোমা কর্মকার

ওদের দু’জনের সংসারেই অনটন। দু’জনেই দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে ভাল অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্ন দেখে। দু’জনেই সুযোগ পেয়েছিল ওয়ার্ল্ড স্কুল গেমসে। চিনে সদ্য শেষ হওয়া সেই আন্তর্জাতিক প্রতিয়োগিতায় নেমে গলায় সোনার পদক ঝুলিয়ে ফিরেছে তারা দু’জনেই। মুখ উজ্জ্বল করেছে পশ্চিমবঙ্গের।

Advertisement

ওদের এক জন, সোমা কর্মকার। পুরুলিয়ার মাঙ্গুড়িয়া গ্রামের এই মেয়ে লংজাম্পে সোনা জিতেছে। অন্য জন, হুগলির তারকেশ্বরের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা চন্দন বাউরি। সে সোনা জিতেছে ৪০০ মিটার দৌড়ে। ২৭ জুন থেকে চিনের ইওহন শহরে শুরু হওয়া প্রতিযোগিতা শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার। বাংলা স্কুল ক্রীড়ার (অ্যাথলেটিক্স) কোচ কৌশিক সরকার বলেন, ‘‘শুক্রবারই খবর পেলাম সোমা আর চন্দন তাদের ইভেন্টে সোনা পেয়েছে। বাংলার ক্রীড়ার জন্য এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কী হতে পারে! ওদের এই সাফল্য বাংলার অ্যাথলেটিক্স নিয়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছে।’’

২০০৯ সালে মালদহে অনুষ্ঠিত রাজ্য প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় লং জাম্পে শীর্ষস্থান পেয়ে সোমার অ্যাথলেটিক্সের জগতে পা রাখা। এর পুরুলিয়া মফস্সল থানার মাঙ্গুড়িয়া গ্রামের মাঠেই নিজেকে অনুশীলনে ডুবিয়ে রেখেছিল সে। সোমার বর্তমান ঠিকানা দুর্গাপুরের সেল অ্যাকাডেমি। সেখানের অ্যাথলেটিক্স কোচ তপনকুমার ভাণ্ডারি খুশি ছাত্রীর সাফল্যে। এ দিন তিনি বলছিলেন, ‘‘মনে পড়ছে, প্রথম যেদিন আমার কাছে এল মেয়েটা, খুব কাঁদছিল। ওর সঙ্গে আমি বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় গিয়েছি। ওর প্রত্যয় দেখেছি। আমি জানতাম, সোমা ভাল ফল করবেই।’’ তিনি জানান, সোমা ওখানে ৫.৪২ মিটার লাফিয়েছে। দিল্লি থেকে সোমার সঙ্গে কথাও হয়েছে তপনবাবুর।

Advertisement

গত মে মাসে কাতারের দোহায় আয়োজিত এশিয়ান ইয়ুথ অ্যথলেটিক্সে সুযোগ পেয়েও পাসপোর্ট তৈরি না হওয়ায় যেতে পারেনি সোমা। এ বার চিনে যাওয়ার আগে বলেছিল, দেশের মাটিতে সাফল্য পেয়েছে। এ বার লড়াই বিদেশের মাটিতে। চিন থেকে ফিরে দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ফোনে এ দিন সোমা বলে, ‘‘আমার উপরে অনেকে আস্থা রেখেছিলেন। তাঁদের আস্থার মযার্দা দিতে পেরে ভাল লাগছে।’’ প্রথমে দুর্গাপুরে ফিরবে সোমা। তার পর কোচের অনুমতি নিয়ে কয়েক দিনের জন্য বাড়ি যেতে চায়।

চন্দন অবশ্য দোহায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু, কোনও অক অজ্ঞাত কারণে সে আবিষ্কার করে, নিজের প্রিয় ইভেন্ট ৪০০ মিটার দৌড়েই তার নাম নথিভুক্ত নেই! শেষ অবধি ওই মিটে ৪০০ মিটার রিলে রেস-এ দ্বিতীয় স্থান পায়। চলতি বছরের গোড়ায় কেরলে জাতীয় গেমসে সিনিয়র পর্যায়ে ৪০০ মিটারে তৃতীয় হয় চন্দন। আর এ রাজ্যে বয়স ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় ৪০০ মিটারে প্রথম হওয়াটা প্রায় অভ্যাস করে ফেলেছে তারকেশ্বরের রামনগর নূটবিহারী পালচৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর মাধ্যমিক পাশ করা এই ছেলেটি। ওয়ার্ল্ড স্কুল গেমসের ৪০০ মিটারে ৪৭.১ সেকেন্ড সময় করে সোনা জিতেছে সে। এই সময় করে এশিয়ান স্কুল মিটের পুরনো রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছে সে।

তারকেশ্বরের রথতলা গ্রামে চন্দনের বাড়ি। সেখানে মা ঝর্না বাউরি আর দাদা সন্তুর সঙ্গে থাকে চন্দন। মা খেতমজুর। এ হেন দিন আনি দিন খাই পরিবারের ছেলেটিকে গড়েপিঠে তুলেছেন তারকেশ্বরেই রাজদীপ কারক। চন্দনের সোনা জেতার খবরে আনন্দ বাঁধ মানছে না তাঁর। বললেন, ‘‘আমার কোচিং জীবনের সব চেয়ে বড় দিন। চন্দন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এখনও ঘোর কাটছে না!’’ চন্দনের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন