বৃদ্ধা মাকে খুন, গ্রেফতার ছেলে-বৌমা

জবরদস্ত পরিকল্পনা করেও শেষ রক্ষা হল না! শেষপর্যন্ত কল্যাণীর বি ব্লকের বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে ওই বৃদ্ধার ছেলে ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। গত ২ মে বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে অপর্ণা বসু (৭৫) নামে এক বৃদ্ধার পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০২:২৬
Share:

জবরদস্ত পরিকল্পনা করেও শেষ রক্ষা হল না!

Advertisement

শেষপর্যন্ত কল্যাণীর বি ব্লকের বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে ওই বৃদ্ধার ছেলে ও তাঁর স্ত্রীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। গত ২ মে বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে অপর্ণা বসু (৭৫) নামে এক বৃদ্ধার পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই পড়শিদের সন্দেহ হয়, এটা নিছক মৃত্যুর ঘটনা নয়। গত শনিবার মৃতের ছোট ছেলে অনিন্দ্য বসু পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, সম্পত্তির লোভে তাঁর দাদা-বৌদিই খুন করেছে অপর্ণাদেবীকে। সোমবার সকালে পুলিশ অভিযুক্ত আনন্দ বসু ও তাঁর স্ত্রী মিতা বসুকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা খুনের কথা কবুল করেছে।

জেরায় পুলিশ জানতে পেরেছে, অপর্ণাদেবীকে খুন করার পরে পুরো এক রাত সেই মৃতদেহ ফ্ল্যাটেই ফেলে রেখেছিল ধৃতেরা। পুলিশ জানিয়েছে, দেনায় জর্জরিত আনন্দ সম্পত্তির লোভেই অপর্ণাদেবীকে খুন করেছে। গত সোমবার কল্যাণী বি ব্লকের একটি আবাসনের বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে পচা গন্ধ বেরনোর খবর পুলিশের কাছে আসে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই ফ্ল্যাটের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ ছিল। তখনই তাদের সন্দেহ হয়। কারণ, বাড়িতে বৃদ্ধ একাই থাকতেন। তাঁর বড় ছেলে আনন্দ দীর্ঘদিন ধরেই কলকাতায় থাকে। ছোট ছেলে অনিন্দ্য সুইৎজারল্যান্ডে চাকরি করেন।

Advertisement

পুলিশ দরজা ভেঙে অপর্ণাদেবীর মৃতদেহ উদ্ধার করে। ততদিনে মৃতদেহে পচন ধরেছিল। মৃতদেহ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়। সেই রিপোর্ট এখনও পুলিশের কাছে আসেনি। পুলিশই আনন্দকে খবর দেয়। মায়ের মৃতদেহ নিয়ে সেই সৎকার করে। বাইরে থেকে দরজা বন্ধ ছিল জানার পরও সে ভাবলেশহীন ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। কোনও অভিযোগ না হওয়ায় পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে। তবে প্রথম থেকেই তাদের সন্দেহ ছিল, কোথাও গড়বড় কিছু রয়েছে। কারণ, অপর্ণাদেবীর প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, রবিবার (১ মে) সকালেই আনন্দ ও তার স্ত্রী সেই বাড়ি থেকে কলকাতা ফেরে।

পুলিশ জানিয়েছে, আনন্দ একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করে। তার স্ত্রী নীতার বাপের বাড়ি চন্দননগর। বাজারে আনন্দের প্রচুর দেনা রয়েছে। সেই অনিন্দ্যবাবুকে মায়ের মৃত্যুর খবর দেয়। দিন কয়েক আগে সুইৎজারল্যান্ড থেকে কল্যাণীতে ফেরেন তিনি। প্রতিবেশীরা তাঁকে জানান, মায়ের মৃত্যুর আগে আনন্দ এবং নীতা দিন কয়েক সেই বাড়িতেই থেকে গিয়েছে। এমনকী মায়ের সঙ্গে আনন্দের ঝগড়াও তাঁরা শুনেছেন। এর পর অনিন্দ্যবাবু দাদার সঙ্গে কথা বলেন। আনন্দের অসংলগগ্ন কথায় তাঁর সন্দেহ হয়। শনিবার তিনি দাদা-বৌদির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার রাতে আনন্দ এবং নীতাকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। তারা প্রথমে কিছুতেই খুনের কথা স্বীকার করেনি। গভীর রাতে আলাদা করে দুজনকে জেরা করা হয়। পুলিশ আনন্দকে জানায়, প্রতিবেশীরা তাকে বাড়ির দরজা বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করতে দেখেছে। রবিবার তাদের যাওয়ার পরে অপর্ণাদেবীর মৃত্যু হলে সোমবার মৃতদেহে পচন ধরে দুর্গন্ধ বেরনোর কথা নয়। তারপর সে বলে, পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়ে মৃত্যু হয়েছে তার মায়ের। এরপরেই পুলিশের কাছে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। গ্রেফতার করা হয় দু’জনকেই। পুলিশের দাবি, মিতাদেবীকে আলাদা ভাবে জেরা করা হয়। সেখানেই তিনি কবুল করে ফেলেন আসল ঘটনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন