Calcutta High Court

ছোটবেলায় ছেড়ে যাওয়া মা এখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত, চাইলে দেখে আসতে পারেন ছেলে, বৃদ্ধার মামলায় আর কী বলল কোর্ট

মামলাকারী বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। জানিয়েছেন, তাঁর অর্থের জোর নেই। ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর মতো কেউ নেই। কিন্তু মায়ের দেখাশোনা করার সামর্থ্য আছে পুত্রের। তবে পুত্র দায়িত্ব নিতে নারাজ।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫ ২০:২৬
Share:

কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের বেঞ্চে মা-ছেলের মামলার শুনানি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ছোটবেলায় যে মা তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, ফিরেও তাকাননি, বৃদ্ধ বয়সে এখন আর সেই মায়ের দায়িত্ব নিতে চাননি ছেলে। দীর্ঘ ১৫ বছর মায়ের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু মা-ছেলের এই মামলা গড়িয়েছে হাই কোর্ট পর্যন্ত। ছেলের সাহায্য পেতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বৃদ্ধা স্বয়ং। সেই মামলাতেই কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ জানালেন, চাইলে মাকে দেখে আসতে পারেন ছেলে। তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে পারেন। কিন্তু যে হেতু মায়ের সাহায্য প্রয়োজন এবং ছেলে আর্থিক ভাবে সচ্ছল, তাই জন্মদাত্রীর প্রতি ন্যূনতম কর্তব্য তাঁকে পালন করতে হবে। আগামী ২৩ জুলাই এই মামলা আবার শুনবে আদালত। মায়ের কী কী সাহায্য প্রয়োজন, ছেলেকে কী কী করতে হবে, কত টাকা দিতে হবে, তা ওই দিন স্থির হতে পারে।

Advertisement

মামলাকারী বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন। জানিয়েছেন, তাঁর অর্থের জোর নেই। ন্যূনতম চাহিদা মেটানোর মতো কেউ নেই। কিন্তু মায়ের দেখাশোনা করার সামর্থ্য আছে পুত্রের। আদালতে বৃদ্ধার আর্জি ছিল, পুত্র তাঁর ন্যূনতম খরচের ভার নিন। কিন্তু পুত্র এতে রাজি হননি। তিনি পেশায় নাবিক। বর্তমানে আটলান্টিক সাগরে জাহাজ চালাচ্ছেন। তাঁর তরফে তাঁর স্ত্রী আদালতে হাজির হয়েছিলেন। জানান, মায়ের সঙ্গে পুত্রের কোনও সম্পর্ক নেই। বাবার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ না করেই ছোটবেলায় মা চলে গিয়েছিলেন। তাই এখন সেই মায়ের প্রয়োজনে পাশে থাকতে চান না তিনি।

উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালতের পর্যবেক্ষণ, মামলাকারী আংশিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তাঁর কোমর থেকে পা পর্যন্ত অচল। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে তাঁর হুইলচেয়ার প্রয়োজন। কিন্তু এখন তিনি যে বৃদ্ধাশ্রমে রয়েছেন, সেখানে এই বিশেষ চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা নেই। সেখানকার কর্তৃপক্ষ তাই বৃদ্ধাকে অন্য কোথাও স্থানান্তর করার চেষ্টা চালাচ্ছেন, যেখানে হুইলচেয়ারের সুবিধা আছে।

Advertisement

আপাতত ২৩ জুলা‌ই পর্যন্ত এই মামলার শুনানি স্থগিত রেখেছেন বিচারপতি সিংহ। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এই সময়ের মধ্যে পুত্র চাইলে বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা করতে পারেন এবং তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। তিনি মায়ের জন্য অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থাও করে দিতে পারেন, যেখানে হুইলচেয়ারের সুবিধা রয়েছে। পরবর্তী শুনানির দিন বাকি নির্দেশ জানাবে আদালত।

পুত্রের আইনজীবী আদালতে জানিয়েছিলেন, তাঁর মক্কেল মামার বাড়িতে মানুষ হয়েছেন। মায়ের সান্নিধ্য পাননি ছোটবেলায়। যে সময়ে মাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল পুত্রের, সেই সময়ে তিনি তাঁকে ছেড়ে গিয়েছিলেন। তিনি কেবলই জন্মদাত্রী। কিন্তু জন্ম দিলেই কি মা হওয়া যায়? প্রশ্ন তুলেছিলেন আইনজীবী। মা এবং ছেলের এই বিবাদে হস্তক্ষেপ করতে চায়নি আদালত। তবে বিচারপতি সিংহ জানান, জন্মদাত্রীর প্রতি পুত্রের ন্যূনতম কর্তব্য থাকে। মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে না তাঁকে। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী অর্থসাহায্য করতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement