অভিযোগ হাতে লতিকাদেবী। নিজস্ব চিত্র।
শীর্ণকায় দেহ। বয়সের ভারে সামনে ঝুঁকে গিয়েছে। পরনে সাদা মলিন শাড়ি। চোখের দৃষ্টি ক্ষীণ। হাতের সাদা কাগজে নিজের ছেলের অত্যাচারের অভিযোগ লিখে মহকুমাশাসকের কাছে সাহায্য চেয়ে সকাল থেকেই আদালত চত্বরে ঘুরছিলেন ষাটোর্ধ্ব বিধবা লতিকা পরামাণিক। কাটোয়ার সাহেববাগান এলাকার ওই বৃদ্ধার অভিযোগ, ছেলে দেখে না। কোনও রকমে ছোট মেয়ের কাছে আশ্রিতা হয়ে রয়েছেন। আইনের সাহায্য না পেলে আর কোনও রাস্তা নেই বলেও দাবি তাঁর।
লতিকাদেবীর অভিযোগ, বছর দেড়েক আগে তাঁর ছেলে বন্দুক ও ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে জমি, এক তলা বাড়ি, মুদিখানা দোকান, আসবাবপত্রের দোকান-সহ সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে লিখিয়ে নেন। পরে গত বছর জুলাই মাসে ভরনপোষণ বাবদ মাসিক ৫০০০ টাকার পাওয়ায় জন্য তিনি মহকুমাশাসকের কাছে আবেদন জানান। অগষ্টে প্রবীণ নাগরিক সুরক্ষা আইনে মহকুমাশাসক ছেলে শিবনাথবাবুকে এককালীন দু’লক্ষ টাকা ও তিন মেয়েকে প্রতি মাসে ৭০০ টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তার পরেও ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে কোনও টাকা পাননি বলে অভিযোগ লতিকাদেবীর। ২৬ এপ্রিল তিনি ফের মহকুমাশাসকের কাছে বিষয়টি দেখার আবেদন জানান। বৃদ্ধা বলেন, ‘‘অর্থাভাবে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন গুজরান করতে হচ্ছে। তাই সুরাহার আশায় ফের প্রশাসনের কাছে দরবার করেছি।’’
যদিও জোর করে সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ মানতে চাননি শিবনাথবাবু। লতিকাদেবী নিজের ইচ্ছেতেই তাঁকে সব কিছু লিখে দিয়েছেন বলে দাবি তাঁর। মহকুমাশাসকের নির্দেশ মতো টাকা না দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর দাবি, তিনি সামান্য দিনমজুরি করেন। দু’লক্ষ টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ তাঁর নেই। জোর করে সম্পত্তি লিখিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি লতিকাদেবীর ছোট মেয়ে রানুদেবীরও। আর মহকুমাশাসকের নির্দেশ মতো প্রতি মাসে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর যুক্তি, মা এখন তাঁর কাছেই থাকেন। তাই আাদা করে টাকা দেন না তিনি।
মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার জানান, তিনি লতিকাদেবীর অভিযোগ পেয়েছেন। ভোটের ফলাফলের পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন তিনি। প্রতিশ্রুতি মতো শিবনাথবাবু টাকা না দিলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তাঁর আশ্বাস।