Sonali Guha

বিজেপিতে সোনালি পর্ব! রাজ্যস্তরের কমিটিতে এলেন তৃণমূলের প্রাক্তন, দায়িত্ব অভিষেকের গড়ে

গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী না করায় বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সোনালি। কিন্তু বিজেপিও প্রার্থী করেনি। এর পরে রাজনীতি থেকে দূরে থাকা সোনালি আবার ফিরতে চান রাজনীতির ময়দানে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩ ১৫:১১
Share:

রাজনীতিতে সোনালির ‘সোনালি যুগ’ ফিরবে কি! — ফাইল চিত্র।

দু’বছরের বিশ্রাম শেষে আবার রাজনীতির ময়দানে নামতে চেয়েছিলেন সোনালি গুহ। গত কিছু দিন ধরে বার বার সেই বার্তা দিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্বকে। দেখাও করেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতার দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলন মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে দেখাও গিয়েছিল একদা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী সোনালিকে। এ বার রাজ্য বিজেপি তাঁকে মহিলা মোর্চার রাজ্য কর্মসমিতির সদস্য করল। শনিবারই সেই কমিটি গঠন হয়েছে। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে তাঁকে কমিটিতে নেওয়া হয়েছে জেনে সোনালি বলেন, ‘‘ভাল লাগছে। এ বার নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে জেনে নেব ঠিক কী ভাবে আমায় কাজ করতে হবে।’’

Advertisement

সদ্যই বিজেপি মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী বদল হয়েছে। তনুজা চক্রবর্তীর হাত থেকে দায়িত্ব গিয়েছে ফাল্গুনী পাত্রের হাতে। এর পরে মহিলা মোর্চার বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব বদল হয়। শনিবার গঠিত হয় ১২১ জনের রাজ্য কর্মসমিতি। তাতেই জায়গা পেয়েছেন সোনালি। সাধারণ ভাবে গেরুয়া শিবির রাজ্য কর্মসমিতির সদস্যদের নিজেদের জেলাতেই দায়িত্ব দেয়। বিজেপির সাংগঠনিক জেলা ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা সোনালি। সেটাও তালিকায় উল্লেখ করা রয়েছে। এই প্রসঙ্গে মহিলা মোর্চার রাজ্য সভানেত্রী ফাল্গুনী বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই উনি কাজ করতে চাইছিলেন। তাই শুরুতে ওঁকে নিজের জেলাতেই কী ভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা আমরা দেখব।’’ একই সঙ্গে ফাল্গুনী বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন বিধায়ক ছিলেন। ফলে ওঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেটা কাজে লাগানোই আমাদের লক্ষ্য।’’ সোনালি অবশ্য এখনই বিশেষ মুখ খুলতে চাইছেন না। সম্প্রতি তিনি তৃণমূলের বিরুদ্ধে অনেক বিষোদ্গার করেছেন। কিন্তু সদ্য তৈরি হওয়া কমিটিতে জায়গা পাওয়ার খবর জেনে বলেন, ‘‘আমি এখনই কিছু বলব না। কোনও প্রতিক্রিয়া নয়। দল যে ভাবে কাজ করতে বলবে, তেমন ভাবেই করব।’’

২০২১ সালে বিজেপিতে যোগ দিলেও সোনালিকে সে ভাবে কাজে লাগায়নি গেরুয়া শিবির। — ফাইল চিত্র।

ঠিক এমন কথা বলেই ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন সোনালি। তবে বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা তো দূরের কথা প্রচারেও সে ভাবে কাজে লাগায়নি বিজেপি। রবিবার সোনালি বলেন, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে আমি ডায়মন্ড হারবারের কোথাও প্রচার করিনি। গিয়েছিলাম বরাহনগর, কামারহাটিতে।’’

Advertisement

প্রসঙ্গত, সোনালির বিধানসভা এলাকা সাঁতরাগাছি ডায়মন্ড হারবার লোকসভা আসনের অন্তর্গত। এই আসনে ১৯৭৭ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত টানা পাঁচ বার বিধায়ক হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। আর তার পরেই সোনালি। তৃণমূলের উত্থান পর্ব থেকেই তিনি জয় পান। ২০০১ থেকে ২০১৬ টানা চার বার তিনি এই আসন থেকে জেতেন। তৃণমূল ক্ষমতায় এলে তাঁকে মন্ত্রী না করা হলেও বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার করেন মমতা। কিন্তু ২০২১ সালে তাঁর জায়গায় মোহনচন্দ্র নস্করকে ওই আসনে প্রার্থী করে তৃণমূল।

প্রার্থিতালিকা প্রকাশের দিন কেঁদে ফেলেছিলেন সোনালি। আর তার পরে মুকুল রায়ের সঙ্গে গিয়ে তৎকালীন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের থেকে নতুন দলের পতাকা নেন। হাজির ছিলেন শুভেন্দুও। কিন্তু বিজেপিও প্রার্থী করেনি তাঁকে। এর পরে রাজনীতি থেকে আড়ালে চলে যান সোনালি। গত পুরভোটেও রাজনীতির ময়দানে দেখা যায়নি। এ বার পুরোদস্তুর রাজনীতি করতে চান। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বিজেপি কাউন্সিলর তথা তৃণমূলে থাকার সময়ে সতীর্থ সজল ঘোষকে নিয়ে সুকান্তের সঙ্গে দেখা করে সেই আর্জি জানান সোনালি। তবে এর পরেও বিজেপিতে দ্বিধা ছিল। সম্প্রতি যে ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ শানাচ্ছেন সোনালি তা দলের পক্ষে ভাল হবে কি না, এ নিয়ে অনেক মত ছিল রাজ্য বিজেপিতে। শেষ পর্যন্ত স্থির হয়, মূল দলে না রেখে মহিলা মোর্চায় জায়গা দেওয়া হবে। আপাতত রাজ্য কর্মসমিতিতে কিছু দিন কাজ দেখার পরে পদ দেওয়া যায় কি না, তা বিবেচনা করা হবে। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি আশানুরূপ ফল করতে না পারায় তৃণমূলে ফিরতে চেয়েছিলেন সোনালি। মমতাকে চিঠিও লিখেছিলেন। কিন্তু কালীঘাট থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। বিজেপি সূত্রে খবর, ‘‘দিদি ডাকলেও আর তৃণমূলে ফিরব না’’ বলে সুকান্তকে কথা দিয়েছেন সোনালি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন