সৌরভ স্মরণেও ফের ফাঁসির দাবি

উত্তর ২৪ পরগনার বামনগাছি এলাকায় মদ, জুয়া, মহিলাদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহারের প্রতিবাদ করেছিলেন সৌরভ চৌধুরী নামে ওই যুবক। দুষ্কৃতীরা পিস্তল ঠেকিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুন করে তাঁকে। খুনিরা ধরা পড়েছে। সাজাও খাটছে তাদের কেউ কেউ, ছাড়া পেয়েছে কয়েক জন। এলাকায় বন্ধ হয়েছে সমাজবিরোধী কাজকর্ম। সৌরভ আর নেই।

Advertisement

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০৪:৫৯
Share:

পুত্রহারা: ছেলে সৌরভ চৌধুরীর ছবির সামনে মা মিতাদেবী। বৃহস্পতিবার বামনগাছির বাড়িতে। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

ঠিক চার বছর আগে সেই দিনটাও ছিল মেঘলা। বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় চলছিল ব্রাজিলের খেলা। নেমারের ভক্ত সুঠাম চেহারার ফুটবল খেলোয়াড়টি ‘হাফটাইম’-এ বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলেন। পরের দিন সকালে রেললাইনের ধারে পাওয়া গেল তাঁর ছিন্নভিন্ন দেহ।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার বামনগাছি এলাকায় মদ, জুয়া, মহিলাদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহারের প্রতিবাদ করেছিলেন সৌরভ চৌধুরী নামে ওই যুবক। দুষ্কৃতীরা পিস্তল ঠেকিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে-কুপিয়ে খুন করে তাঁকে। খুনিরা ধরা পড়েছে। সাজাও খাটছে তাদের কেউ কেউ, ছাড়া পেয়েছে কয়েক জন। এলাকায় বন্ধ হয়েছে সমাজবিরোধী কাজকর্ম। সৌরভ আর নেই। মৃত্যু দিয়ে তিনি একজোট করে গিয়েছেন এলাকার বাসিন্দাদের। বৃহস্পতিবার বিকেলের স্মরণসভায় সৌরভের বন্ধুরা প্রতিজ্ঞা করলেন, ভবিষ্যতেও ‘এই ভাবে একজোট’ থাকবেন তাঁরা।

সকাল থেকে বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি। দাঁতে দানা কাটেনি পরিবারের কেউ। দুপুর গড়িয়ে বিকেলেও ঠাকুরঘরে সৌরভের ছবি আঁকড়ে লুটিয়ে রয়েছেন সৌরভের মা মিতাদেবী। এলাকায় সৌরভের নামে শহিদ বেদি হয়েছে। সেখানে ফুল ছড়িয়ে দিয়েছেন মেয়েরা। সন্ধ্যায় মোমবাতি হাতে ‘সৌরভের মতোই’ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর শপথ নেন বাসিন্দারা। ছিলেন সৌরভের বন্ধুবান্ধব, তরুণ-তরুণীরা।

Advertisement

২০১৪ সালের ৬ জুলাই সৌরভ খুন হওয়ার পরে তোলপাড় চলে রাজ্য-রাজনীতিতে। এ দিন কল্যাণী মজুমদার নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এক সময় দিনেদুপুরে বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয় পেতাম। মদ, জুয়া, সমাজবিরোধী কাজের প্রতিবাদ করত সৌরভ। দল তৈরি করে রাতপাহারা দিত।’’ সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে অন্য এক মহিলা বললেন, ‘‘আজ ও নেই। কিন্তু একলায় সমস্ত দুষ্কর্ম বন্ধ করে দিয়ে গিয়েছে। শান্তি ফিরেছে।’’

সৌরভ-হত্যায় দোষী সাব্যস্ত হয় ১৫ জন। তাদের মধ্যে আট জনকে ফাঁসির রায় শুনিয়েছিল বারাসত আদালত। গত ৯ ফেব্রয়ারি কলকাতা হাইকোর্ট ফাঁসি রদ করে ছ’জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় এবং বেকসুর খালাস দেয় দু’জনকে। দোষীদের ফাঁসির দাবিতে এ দিন ফের সরব হন মানুষ। সৌরভের বন্ধু দেবনাথ তালুকদার, বাপি তালুকদার, সৌরেন করদের কথায়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় যারা এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের ফাঁসি চাই।’’

হাইকোর্টের রায়ে খুশি নয় সৌরভের পরিবারও। নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। বাবা সরোজ চৌধুরী বলেন, ‘‘খুনিরা ছাড়া পেয়ে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি। কী জানি, কখন কী হয়!’’

আশঙ্কার কথা শুনে হইহই করে ওঠেন সৌরভের দাদা সন্দীপ এবং এক দল তরুণ-তরুণী: ‘‘ক’জনকে মারবে? আমরা আছি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন