(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শোভন চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। এক মাসও কাটল না। তার মধ্যে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দীর্ঘ বৈঠক সেরে ফেললেন কানন (মমতা শোভনকে এই নামেই ডাকেন)। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন দার্জিলিঙের রিচমন্ড হিলে। শোভন এবং তাঁর বান্ধবী বৈশাখী পাহাড়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তার ফাঁকেই মমতার সঙ্গে দেখা করেন শোভন। অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকে অবশ্য শোভনের সঙ্গে বৈশাখী ছিলেন। তবে মমতার সঙ্গে একাই সাক্ষাৎ করেন শোভন।
সূত্রের খবর, বুধবার প্রায় দু’ঘণ্টা কথা হয়েছে মমতা এবং শোভনের। কী কথা হয়েছে সে ব্যাপারে কোনও পক্ষই প্রকাশ্যে কিছু বলেনি। তবে শোভন-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, আগামী এক-দু’মাসের মধ্যেই ফের ফের তৃণমূলের সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরতে পারেন শোভন। যদিও এই জল্পনা তৃণমূলে বহুদিন ধরেই রয়েছে। ২০২৩, ২০২৪ সালের ২১ জুলাই তৃণমূলের বার্ষিক সভার আগেও শোভনের তৃণমূল ওয়াপসির জল্পনা ডালপালা মেলেছিল। কিন্তু প্রতিবার তা জল্পনাই থেকে গিয়েছে।
তবে এক মাসের ব্যবধানে অভিষেক এবং মমতার সঙ্গে শোভনের সাক্ষাতের পর তৃণমূলের প্রথম সারির অনেকেরই বক্তব্য, এ বার বিষয়টি আগের মতো নয়। তা অনেক ‘নিবিড়’। শোভন মেয়রপদ এবং মন্ত্রিসভা ছেড়ে দিয়েছিলেন ২০১৮ সালে। তার পরে অবশ্য মমতার সঙ্গে তাঁর একাধিক বার সাক্ষাৎ হয়েছে। কয়েক বার দিদির বাড়িতে ভাইফোঁটাও নিতে গিয়েছিলেন। ২০২১ সালের আগে বৈশাখী-সহ শোভন দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিতে-ও যোগ দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য পদ্মশিবিরের প্রতি বিরূপ হয়ে দল ছেড়ে দেন। তৃণমূল ছাড়া, বিজেপিতে যোগ দেওয়া, আবার বিজেপি ছেড়ে একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া— এই সাত বছরে অভিষেকের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। অভিষেকও ঘনিষ্ঠবৃত্তে বলেছেন, সেপ্টেম্বরে হঠাৎ শোভন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান। তার পর তিনি দেখা করেন।
ঘটনাচক্রে, অভিষেকের সঙ্গে শোভন-বৈশাখী যে দিন বৈঠক করেন, তার ৪৮ ঘণ্টা আগে রেকর্ড বৃষ্টিতে কলকাতা জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শহরে মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের। কলকাতা পুরসভার ভূমিকা, মেয়র ববি হাকিমের ভূমিকা তখন তীব্র সমালোচিত হচ্ছিল শাসকদলের অন্দরেও। সেই পর্বে অভিষেক-শোভনের বৈঠককে শাসকদলের অনেকেই ‘ববির উপর চাপ’ হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন। যদিও শাসকদলের অনেকের এ-ও বক্তব্য ছিল, ‘চাপ’ তৈরি করা হলেও ববিকে রাতারাতি সরানো হবে না। কারণ তিনি সংখ্যালঘু নেতা।
কালীপুজোর পরেই কি তা হলে শোভন তৃণমূলে ফিরছেন? অভিষেক বলেছেন, ‘‘সবটাই দলনেত্রী ঠিক করবেন।’’ সেই নেত্রীর সঙ্গেই বুধবার ঘণ্টা দুয়েকের বৈঠক সেরে ফেলেছেন শোভন। মুখ্যমন্ত্রীও কলকাতায় ফিরে এসেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে শহরে পৌঁছে গিয়েছেন শোভন-বৈশাখীও।