Sovon Chatterjee

জোর চমক ভাইফোঁটায়! বৈশাখীকে সঙ্গে নিয়ে মমতার বাড়িতে শোভন

মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ গোলপার্কের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন শোভন ও বৈশাখী।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:৫৯
Share:

ভাই কাননের কপালে এ বার স্নেহের ফোঁটা পড়ল দিদি মমতার। —ফাইল চিত্র।

বড়সড় রাজনৈতিক চমক ভাইফোঁটায়। ‘দিদি’ মমতার কাছ থেকে ফোঁটা নিতে গেলেন ‘ভাই’ কানন। একা নন, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গেলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ গোলপার্কের ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন শোভন ও বৈশাখী। শোভনের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রের খবর, ভাইফোঁটা উপলক্ষেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে এ দিন গিয়েছেন তাঁরা।

প্রতি বছরই ভাইফোঁটার দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে শোভনের উজ্জ্বল উপস্থিতি থাকে। ব্যতিক্রম ঘটেছিল শুধু গত বছর। তখনও মন্ত্রিসভা থেকে বা কলকাতার মেয়র পদ থেকে শোভন চট্টোপাধ্যায় ইস্তফা দেননি ঠিকই। কিন্তু, দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব স্পষ্টতই অনেকখানি বেড়ে গিয়েছিল। সকলকে চমকে দিয়ে গত বার প্রথমে মমতার বাড়ির কালীপুজোয় অনুপস্থিত ছিলেন শোভন। তার পরে ভাইফোঁটাতেও তাঁকে আর দেখা যায়নি।

Advertisement

আরও পড়ুন: অভিযোগ জানাতে রাজভবনে দরবার​

আরও পড়ুন: অবৈধ তুবড়িতেই শিশুর মৃত্যু, ধৃত ২​

এ বার কিন্তু আবার চমক। গত ১৪ অগস্ট বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শোভন। বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কয়েকটি বিষয় নিয়ে শোভনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে ঠিকই। কিন্তু, তৃণমূলে ফেরার কোনও ইঙ্গিত শোভন এখনও দেননি। তা সত্ত্বেও ভাইফোঁটায় তিনি এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে হাজির হওয়ায় জোর জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে।

২০১৮-র নভেম্বরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তার পরে শোভনকে কলকাতার মেয়র পদও ছেড়ে দিতে বলেন মমতা। দু’দিনের মাথায় সে পদেও ইস্তফা দেন মমতার একদা ছায়াসঙ্গী কানন। সেই দিনের পর থেকে গত কাল পর্যন্ত আর এক বারও মমতার মুখোমুখি হননি শোভন। আজ মুখোমুখি হলেন। দু’বছর পর ভাইফোঁটা নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। তার পরেও অনেকটা সময় কাটালেন মমতার কালীঘাটের বাড়িতে।

যাঁকে সঙ্গে নিয়ে এ দিন ‘দিদি’র বাড়ি গিয়েছেন ‘ভাই’ কানন, আপাতদৃষ্টিতে সেই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করেই শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল তৃণমূলের। বৈশাখীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে শোভনকে প্রকাশ্যে একাধিক বার কটাক্ষ বা ভর্ৎসনা করেছিলেন মমতা। সে সব শোভন ভাল ভাবে নেননি। তৃণমূলের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপার সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও শোভনের পছন্দ হয়নি। যে মমতাকে ‘মায়ের সমান’ বলে বর্ণনা করতেন শোভন, সেই মমতার সঙ্গে সম্পর্ক এতটাই তলানিতে পৌঁছেছিল যে, মন্ত্রিত্ব এবং মেয়র পদ ছেড়ে দলের সব কর্মসূচি বয়কট করা শুরু করে দিয়েছিলেন বেহালা পূর্বের বিধায়ক। লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস পরে অবশেষে তৃণমূলই ছেড়ে দেন তিনি। নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে গিয়ে হাতে তুলে নেন গেরুয়া পতাকা। ফলে এখনও শোভন এবং বৈশাখী খাতায়-কলমে বিজেপির-ই নেতা-নেত্রী। তাই এ বারের ভাইফোঁটায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে তাঁদের পদার্পণ স্বাভাবিক কারণেই চমকে দিয়েছে রাজনৈতিক শিবিরকে। শোভনের সঙ্গে বৈশাখীও মমতা সমীপে হাজির হওয়ায় গুঞ্জন আরও তীব্র হয়েছে। তা হলে কি যাবতীয় ‘ভুল বোঝাবুঝি’ মিটিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হল— এই প্রশ্নই ঘুরতে শুরু করেছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে।

লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা ছড়াতে শুরু করেছিল। জল্পনা শেষ পর্যন্ত বাস্তবে রূপ নেয় গত ১৪ অগস্ট। কিন্তু দিল্লিতে যোগদান সেরে শোভন-বৈশাখী বাংলায় ফেরার পর থেকেই নানা বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে সংবর্ধনার তালিকায় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না থাকাকে কেন্দ্র করে প্রথমে বিতর্ক শুরু হয়। পরে তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়ের বিজেপিতে যোগদানের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে আরও বাড়ে সঙ্ঘাত। শোভন-বৈশাখী বার বার জানাতে থাকেন, বিজেপিতে দেবশ্রীকে স্বাগত জানানো হলে তাঁরা বিজেপি ছেড়ে দেবেন। আর রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা বলতে থাকেন, শোভনদের শর্ত মেনে বিজেপি চলবে না। পরে অবশ্য সে টানাপড়েনে ইতি পড়ে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হস্তক্ষেপ করে এবং দেবশ্রীর যোগদান আটকে যায়। কিন্তু তার পরেও বিজেপিতে খুব সহজ হতে পারেননি শোভনরা।

বিজেপিতে যোগদানের পরে প্রায় আড়াই মাস কেটে গেলেও দলের কোনও কর্মসূচিতে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা যায়নি। ১ অক্টোবর বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ সভা করেছিলেন কলকাতায়, সেখানেও যাননি শোভন-বৈশাখী। সম্প্রতি বঙ্গ বিজেপির এক শীর্ষনেতার জন্মদিনের পার্টিতে শোভন-বৈশাখীকে দেখা গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু বিজেপির কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাঁরা শামিল হননি। গাঁধী সঙ্কল্প যাত্রাতেও নামেননি।

কিন্তু যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রায় এক বছর কোনও যোগাযোগ ছিল না শোভনের, এ দিন সরাসরি তাঁর বাড়িতে হাজির হয়ে গেলেন। বছর বছর ভাইফোঁটা নিতেন বলেই এ বারও গেলেন, নেহাৎ সৌজন্য সফর, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই— এমন কথা কিন্তু শোভনের ঘনিষ্ঠরাও বলছেন না।

তৃণমূলের সঙ্গে তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভনের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল, তা ঘুচে গিয়েছে বলেই তৃণমূলের একাংশের দাবি। বিজেপি এবং শোভনের মধ্যে সেতু হিসেবে এক সময় যিনি কাজ করেছিলেন, এ বারও সেই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ই শোভন এবং তৃণমূলের মাঝে সেতু হলেন বলেও খবর। বিজেপিতে যোগদানের পরেও তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বৈশাখীর। সে যোগাযোগকে অরাজনৈতিক হিসেবেই ব্যাখ্যা করতেন বৈশাখী। তিনি যে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা, সেই কলেজের কিছু সমস্যা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তাঁকে যোগাযোগ রেখে চলতে হয় বলে বৈশাখী দাবি করতেন। কিন্তু তৃণমূল সূত্রেরই দাবি, পার্থ এবং বৈশাখীর যোগসূত্রই মমতা এবং শোভনকে ফের জুড়ে দেওয়ার পথ তৈরি করেছে।

কয়েক দিন আগেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়েছিলেন বৈশাখী। ঘণ্টা দুয়েক ছিলেন। বৈঠক সেরে বেরিয়ে বৈশাখী জানান, বিজয়ার প্রণাম জানাতে গিয়েছিলেন, কলেজের সমস্যা নিয়েও কথা বলার ছিল। তবে সে সব কথার ফাঁকে যে রাজনীতি নিয়েও কথা হয়েছে, তা-ও বৈশাখী অস্বীকার করেননি।

পার্থ-বৈশাখীর ওই বৈঠকের পরেই তৃণমূলে শোভনের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। মমতার বাড়ির কালীপুজোয় শোভনকে দেখা যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। কিন্তু এক বছর ধরে জমতে থাকা বরফ লহমায় গলিয়ে ভাইফোঁটার দুপুরে মমতার বাড়ি পৌঁছে গেলেন শোভন-বৈশাখী। দীর্ঘক্ষণ নেত্রীর সঙ্গে আলাদা করে কথা হল কাননের। ফলে শোভনের আশু পদক্ষেপ নিয়ে জল্পনা ফের তুঙ্গে পৌঁছে গেল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন