সিআরপি-র মহিলা ব্যাটালিয়ন। নিজস্ব চিত্র।
বাতিল নোটকে হাতিয়ার করেই মাওবাদীদের আরও পঙ্গু করতে তৎপর হল সিআরপি। মাওবাদীরা পুরনো নোট পরিবর্তন করে যাতে কিছুতেই নতুন নোট সংগ্রহ করতে না পারে সে বিষয়ে নজরদারি চালাতে সিআরপি বিশেষ দল তৈরি করল। সিআরপি-র দাবি, নোট বদল করতে যাওয়ার সময় মাওবাদীদের কাছ থেকে ২ কোটি টাকার পাঁচশো ও হাজারের নোট উদ্ধার করা হয়েছে। সিআরপি-র ডিজি কে দুর্গাপ্রসাদ কোড়ে বলেন, “মাওবাদীরা যে নোট বদলের চেষ্টা করবে তা জানাই ছিল। সেই মতো নজরদারি চালিয়ে ২ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে।”
২০৭ কোবরা বাহিনীর নতুন প্রশাসনিক ভবনের উদ্বোধন করতে বুধবার শালবনিতে আসেন সিআরপি-র ডিজি। তিনি জানান, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তীসগঢ় থেকে ওই টাকা উদ্ধার হয়েছে। বিহার থেকে ৮০ লক্ষ, ছত্তীসগঢ় থেকে ১০ লক্ষ ও ঝাড়খণ্ড থেকে ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়। তবে এ রাজ্যে এখনও এমন ঘটনা ঘটেনি। ওই তিনটি রাজ্যে বাধা পেয়ে এ বার মাওবাদীরা রাজ্যেও পুরনো নোট বদলের চেষ্টা চালাবে বলে সিআরপি-র অনুমান। সিআরপি জানিয়েছে, নিজেদের সংগঠন চালাতে ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী, খাদান মালিক থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলেছিল মাওবাদীরা। সমস্ত টাকা নিজেদের কাছেই রাখত। যার বেশিরভাগই পাঁচশো-হাজার টাকার নোট। প্রধানমন্ত্রীর হঠাৎ পুরনো নোট বাতিলের ঘোষণায় চূড়ান্ত বিপাকে পড়েছে মাওবাদীরা। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই মাওবাদীদের অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পঙ্গু করার চেষ্টা চালাচ্ছে সিআরপি।
গাছের চারা লাগিয়ে জল দিচ্ছেন সিআরপি-র ডিজি কে দুর্গাপ্রসাদ কোড়ে। শালবনিতে।-সৌমেশ্বর মণ্ডল।
মাওবাদীরা কী ভাবে নোট বদলের চেষ্টা চালাচ্ছে? সিআরপি-র এডিজি সুদীপ লখটোকিয়া বলেন, “মাওবাদীরা এক একজন ব্যক্তিকে নোট পরিবর্তনের দায়িত্ব দিয়েছিল। সূত্র মারফৎ তথ্য সংগ্রহের পর তল্লাশি চালিয়ে টাকা উদ্ধার করি।” সিআরপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত মোবাইলে একে অপরকে টাকা পরিবর্তনের জন্য বলেছিল মাওবাদীরা। মোবাইল ট্যাপ করেই সেই তথ্য অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জায়গায় পৌঁছেই ওই টাকা মেলে। রাজ্যের সীমানাবর্তী এলাকায় মাওবাদীদের যাতায়াত রয়েছে বলে স্বীকার করেন ডিজি। তাঁর দাবি, মাঝে মধ্যে যাতায়াত করলেও মাওবাদীরা স্থায়ী ঘাঁটি গড়তে পারেনি। সীমানায় কোবরা বাহিনীর লাগাতার অভিযানের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি সিআরপির। তবে এখনও নিশ্চিন্ত নন প্রশাসনিক কর্তারা। ডিজি বলেন, “এখানে ওরা জমি হারিয়েছে। তবে এটাও ঠিক, জমি ফেরাতে মরিয়া চেষ্টাও চালাবে। ওদের কখনই ফিরতে দেব না।”
অন্য দিকে, এ বার কোবরাতে সম্পূর্ণ মহিলা ব্যাটালিয়ান তৈরি করল সিআরপি। মহিলা জওয়ান নিয়ে তৈরি ২৩২ নম্বর ব্যাটালিয়ানটি এ বার নিজেরাই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে। আইন শৃঙ্খলার অবনতি হলেও সামলাবে তাঁরা। রাজ্যে আগে মহিলা পরিচালিত থানা হয়েছিল। কিন্তু মাওবাদীদের সঙ্গে লড়াইয়ে রাজ্যে প্রথম মহিলা বাহিনীকে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে দাবি। বাহিনীর জওয়ানদের প্রথমে পাঠানো হবে লালগড়, ঝাড়গ্রাম ও শিলিগুড়িতে। ডিজি বলেন, “মহিলা বাহিনীকেও অপারেশনের স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে। সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এটা প্রমাণ করতে চাই, নারী শক্তি কোনও অংশে কম নয়।” এ দিন নতুন প্রশাসনিক ভবন উদ্বোধনের পর মহিলা বাহিনীর জন্য প্রস্ততি ঠিক রয়েছে কিনা তাও দেখেন ডিজি। কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি উৎসাহিত করতে তাঁদের সঙ্গে বৈঠকও করেন।